২৫ আগস্ট, ২০১৬ ১৫:৪৩:৪৭
ষ্টাফ রিপোর্টার॥ অবশেষে চলেই গেলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এএফএম মুহিতুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার পোনে তিনটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি …… রাজেউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক কন্যা রেখে গেছেন। মরহুম মুহিতুল ইসলামের দুটো কিডনিই সম্পুর্ণ বিকল ছিল। এছাড়াও তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। গত ২৮দিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। শেষ কয়েকদিন তিনি আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বিএসএমএমইউ উপচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান মুহিতুলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ১২ জুন কিডনিজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মুহিতুল। বিএসএমএমইউর নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থা অবনতি হওয়ায় ১২ জুলাই তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিডনি রোগের পাশাপাশি তিনি নিউমোনিয়া, হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভূগছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী এ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর হাসপাতালে ছুটে যান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদারকির দায়িত্ব পালন করা নজিব আহমেদ। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, আজ বাদ আসর মরহুমের লাভ মিরপুরের বাসায় নেয়া হবে। আজ বাদ আছর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তাঁর প্রথম দফা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর মিরপুরে এবং সেখানে তাকে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠীত হবে। আগামীকাল সকালে যশোরের ঝিকরগাছা স্কুলে মরহুহের তৃতীয় দফা জানাজার পর লাশ মনিরামপুরের কাশিমপুর নেয়া হবে। সেখানে বাদ জুমা জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী এ এফএম মুহিতুল ইসলামের বড় ভাই মনিরুল ইসলামের ছেলে হাবিবুল ইসলাম পিটুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, যশোর জেলার মনিরামপুরের কাশিপুরে আমাদের বাড়ি। মামলার কারণে আমাদের পরিবারের ওপর অনেক হুমকি এসেছিল। কিন্তু চাচা মুহিতুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিনি কাউকে ভয় পাননি। তার শেষ ইচ্ছা ছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যাদের এখনও ফাঁসি হয়নি, যারা পলাতক আছেন, তাদের এনে ফাঁসিতে ঝোলানো। বিচার কার্যকর করা। পিটুল বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর রেসিডেন্ট পিএ ছিলেন মুহিতুল ইসলাম। শেষ রাসের তাকে ভাইয়া বলে ডাকতেন। বাড়ির ভেতরে বিকালে ফুটবল খেলতেন তারা দু’জনে। শেখ রাসেলকে তার বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মাথায় গুলি করা হয়েছিল, যা কখনোই তিনি ভুলতে পারেননি। ওই সমেয় তার (চাচার) পায়েও গুলি লেগেছিল।
তিনি সব সময় বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা এবং তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রশংসা করতেন। তিনি বলতেন, বঙ্গবন্ধু খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। সবাইকে বিশ্বাস করতেন। খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। তার বাড়িতে যতটুকু নিরাপত্তা রাখা দরকার ছিল, ততটাও রাখতেন না। সবার সামনেই লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরতেন। খুব সাদামাটা থাকতেন। চাচা বলতেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ওনার (বঙ্গবন্ধু) জন্য। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, তিনি বাসার সবাইকে সন্তানের মতোই দেখতেন। সবাইকে ¯েœহ করতেন। সবাইকে একই খাবার দিতেন। কারও প্রতি ওনার নজর দু’রকম ছিল না।