নোবেল বিজয়ী বাংলার ইউনূস কি রাষ্ট্রপতি হতে চান?

এখলাসুর রহমান॥ দরিদ্র নারীদের ঋনের জালে পেঁচিয়ে দেয়ার থিওরির গুরু ড. ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারী ক্লিনটনের নির্বাচনী তহবিলে বিশ কোটি টাকা দিলেন কোনো স্বপ্নতাড়িত হয়ে, কোনো উচ্চভিলাষে? দারিদ্রদের ঋণের জালে জড়িয়ে যাওয়া শিখিয়ে তিনি নোবেল পুরস্কার হাতিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটি হয়ে গেলেন। এতোবড় অর্জনের যোগ্যতা কয়জনের হয়। কি পেলে কোথায় কিভাবে ভাঁজ করতে হয় কাকে পটাতে হয় তা ইউনূসের চেয়ে আর ভাল কে বুঝেন। যে পুরস্কার পেলেন রবীন্দ্রনাথ, যে পুরস্কার পেলেন না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সে পুরস্কার পেয়ে গেলেন ইউনূস। পুরস্কার প্রাপ্তির আগে এমনটি কেউ ভাবেনি। ভাবনার অসাধ্যটিই বাস্তবায়িত করে ছাড়লেন তিনি। নোবেল প্রাপ্তির পরে তার ইচ্ছে জাগে রাজনীতির। গ্রামীণ শক্তি নাম দিয়ে দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন। তিনি দলের সভাপতি হবেন, দল ক্ষমতায় যাবে আর তিনি সরকার প্রধান হবেন। এই স্বপ্ন ইউনুসকে পেয়ে বসে। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিঁড়ি পথ রাজনৈতিক দল গঠন করা সম্ভব হলো না। তিনি পিছু হটলেন। কিন্তু স্বপ্ন পিছু হটেনি কেবল পথের বাঁক বদল হল মাত্র। যে দেশের দারিদ্র ও দরিদ্র মানুষদের দেখিয়ে ইউনূস ধনকুবের হলেন সেই দেশের মানুষের খোঁজও রাখেন না তিনিঃ। সেদেশে এখন বানভাসী ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার বাতাসে ছড়াচ্ছে। এখনও রাস্তায় ফুটপাতে ত্যানা পেঁচিয়ে লজ্জা ঢাকা নারী তার উলঙ্গ সন্তানকে নিয়ে ঘুমায়। অভাবের তাড়নায় সন্তানসহ আত্মহত্যা করে মা।
গ্রামে গ্রামে এমন অনেক পরিবার আছে যারা ইউনূসের মাইক্রোক্রেডিটের ঋণের জালে দিশেহারা হয়ে কিস্তির তাগাদা হতে বাঁচতে উদ্বাস্ত হয়ে শহরে পালিয়ে গিয়ে কেউ রিকসা চালায়, কেউ গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করছে। সফল দারিদ্র ব্যবসায়ী ইউনূসের সে খবর রাখার কথা নয়। কারণ তিনি নোবেল জয়ী, আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটি। দরিদ্র মানুষগুলো তার কাছে ¯্রফে পন্য ছিল মাত্র। একজন ব্যবসায়ীর কাছে তার ক্যাশবাক্সের টাকা ততক্ষণই মূল্যবান যতক্ষণ পর্যন্ত না এই টাকা নতুন পণ্য ক্রয়ে আরেক ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সে না ঢুকে। ইউনূসের কাছেও তার বাংলাদেশী পণ্য দারিদ্রের আর কোনো মূল্য নেই। তার পণ্য বিনিময় পুঁজি এখন মার্কিন ক্যাশ বাক্সে। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বিশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেন কোন স্বপ্নে, কোন উচ্চাভিলাষে? তিনি হিলারীকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানিয়ে কি নিজে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন? তিনি দেশে আসেন না। শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূস দেশের চরম অশান্ত মূহুর্তেও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবার কোনো তাগিদ বোধ করেন না। তবে কি তিনি ভূলে গেলেন তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, সহজ সরল গ্রাম্য নারী, পুরুষ।
এখনও আমাদের দেশে কিছু শিক্ষিত! মানুষ আছে যারা সামান্য অবস্থার পরিবর্তন হলে অতীত ভূলে যায়। অফিসের এসি রুমে সাদামাটা গেঁয়ো পোশাকে জন্মদাতা বাবা গেলে সন্তান তার বন্ধু ও কলিগদের সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দেয়। এক কথায় অতীতের কোনো কিছুই সে আর স্মৃতিতে ধরে রাখতে রাজি নয়। শুনেছি ইউনুসের মেয়ের বিয়েও হয়েছে খ্রিষ্টান ও ইংরেজ রীতিতে। রাঙ্গালী আচার, সংস্কৃতি, জীবনধারা, সুখ দু:খ তথা ঐতিহ্যের কোনো কিছুই বুঝি তিনি আর স্মৃতিতে রাখতে রাজি নন। হয়তো ইউনূস প্রেসিডেন্ট হয়েই তবে দেশে ফিরবেন। সেটাও এদেশের জনগণের ইচ্ছা, অনিচ্ছার ভিত্তিতে নয় তাও আমেরিকার মদদে। হিলারী প্রেসিডেন্ট হলেই হয়তো তার এই স্বপ্নপূরণ প্রক্রিয়া শুরু। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জঙ্গিবাদ, বন্যা প্রভৃতি নিয়ে বিশ্ব শান্তির দূতের কোনো কথা নেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশদল নেতা বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন করে যে হাসিনা করকারকে টলাতে পারবেনা এটা পরিস্কার। হয়তো ইউনূসকে দিয়ে আন্তর্জাতিক লবিং করিয়ে এই সরকারকে ফেলে দেয়ার একটা সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা থাকতে পারে। ইউনূসের দেশে না আসা ও হিলারী প্রেসিডেন্ট পদে জেতানোর জন্য অর্থ সাহায্য দোটোই যে একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নয় তার নিশ্চয়তা দেবে কে? দারিদ্রকে পুঁজি বানিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে এখন নোবেলকে পুঁজি বানিয়ে বিশ্বময় চষে বেড়িয়ে পুঁজি বিশেষজ্ঞ ইউনূস কি জিততে চাচ্ছেন। তার পেছনে অর্থ জোগানদার কারা কারা? একটা নোবেল পুরস্কার পেলেই ধনকুবের হয়ে যাবেন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে ভিনদেশের নির্বাচনী যুদ্ধে নামা প্রার্থীদের কোটি কোটি টাকা ডোনেশন দেবেন! এটা কি করে সম্ভব? নোবেলত আরও অনেকেই পেয়েছেন। সবাই কি ইউনূসের মত ধনকুবের? তার এই ব্যতিক্রমতার রহস্য কী?
খুবই ভাবনার বিষয় কিন্তু। জামাতের ধনকুবের মীর কাসেম আলী রাজাকারের বিচার প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্তির মুহুর্তে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে এলেন। বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে আগবাড়িয়ে বাংলাদেশের বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব দিলেন। যে দেশ ১৯৭১ সালে জন্মশত্রু পাকিস্তানের মিত্র ছিল। যে দেশ সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল নিরাপরাধ বাঙালী হত্যার জন্য। যে দেশ বঙ্গবন্ধু হত্যার মদতদাতা, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়দাতা সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাথী হতে পেরে গর্ববোধ করলেন। বিষয়টা ভাববার। প্রতিটা রাজাকারের ফাঁসি কার্যকরের মুহুর্তেই বাংলাদেশে আমেরিকার অনধিকার চর্চার অনুপ্রবেশ দেখতে পাই। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর ঠেকাতে জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোনও করেছিল। জন কেরির এবারের ঝটিকা সফরে দুর্বোধ্যতা ও অস্পষ্টতা রয়ে গেল। মীর কাসেম আলীর বিভিউ রায়ের পর আমেরিকা এখনও কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। দেখার বিষয় সামনে কি অপেক্ষা করছে…
জন কেরির বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও বন্ধু হওয়ার প্রস্তাবে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই বরং এসে কোনো দূরভিসন্ধি আছে কিনা সেটাই ভাববার বিষয়। কারণ আমেরিকা এমন একটি চতুন কূটবুদ্ধির দেশ, যে সাপ হয়ে দংশন করে ও ওঝা হয়ে ঝাড়ে। যার উদাহরণ আইএসের সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লাড়াই। জন কেরির আগমন এরকম কোন প্রক্রিয়ারই অংশ নয় কি? ১৯৭১ সালে আমেরিকার পছন্দের নেতা ছিল ইয়াহিয়া খান এখন বাংলাদেশে পছন্দের মানুষ ড. ইউনূস ও বেগম খালেদা জিয়া। ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট ও খালেদা জিয়াকে প্রধান মন্ত্রী বানানোর দূরভিসন্ধি থাকার ভাবনা অমূলক নয়। হিলারীর নির্বাচনী তহবিলে অর্থ প্রদান হয়তো সেই দূরভিসন্ধিরই অংশ। ইউনূসের মত একজন পাকা পুঁজি বিশেষজ্ঞ শুধু শুধু যে টাকা ঢালতে পারেন না এটা পরিস্কার। আরও পরিস্কার তিনি আমেরিকার একজন বিশ্বস্ত তাঁবেদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.