এবার ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ করেদিবে সরকার, থাকছে জেল-জরিমানা আবু মনছুর॥ প্রায় ৩৪ বছর পর ডাক্তারদের চিকিৎসা বাবদ ফি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়াও করা হয়েছে, যা বেসরকারী চিকিৎসাসেবা
আইন ২০১৬ নামে অভিহিত হবে। নতুন আইন অনুযায়ী অফিস সময়ে কোনো ডাক্তার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন না। ছুটির দিনে নিজ জেলার বাইরে গিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন না। উল্লিখিত নিয়ম না মানলে ওই ডাক্তারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হবে। এছাড়া আদালত উপযুক্ত মনে করলে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। এছাড়া নতুন এ আইনে ডাক্তাররা সরকার নির্ধারিত ফির তালিকা চেম্বারের সামনে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে বাধ্য থাকবেন। আদায় করা ফি বাবদ রোগীকে রসিদ দিতে হবে। রশিদের মুড়ি ডাক্তার নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে বাধ্য থাকবেন। কোনো ডাক্তার স্বীকৃত, অনুমোদিত সার্টিফিকেট কোর্স, ডিল্পোমা বা ডিগ্রী ছাড়া কোন যোগ্যতার বিবরণ সাইবোর্ড, নামফলক কিংবা ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে শতকরা ১০ ভাগ শর্য্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
ডাক্তারের বিরুদ্ধে চিকিৎসাসংক্রান্ত যে কোনো ধরণের অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। ওই সংস্থার তদন্তে কোনো ডাক্তার দোষী হলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মারা গেলে কিংবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভাংচর করলে এবং এর ফলে কোনো ডাক্তার কিংবা বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে আক্রমণকারীকে ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদড করা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ফি অদায় করলে ডাক্তারের ৫০ হাজার টাক জরিমানা করা হবে।
আইনের খসড়া নিয়ে মঙ্গলবার এক বৈঠক শেষে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৯৮২ সালে এ সংক্রান্ত একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ওই আইন চলে আসছে। তবে যুগের পরিবর্তনের কারণে আইনটি প্রতিপালন হচ্ছে না। তাই নতুন করে একটি আইনের খসড়া তৈরী করে সমন্বয় সভা করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। বৈঠক শেষে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ইকবাল আর্সনাল বলেন, নতুন আইন প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ চলছে। ডাক্তারদের ফি এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে আইনটি চূড়ান্ত করা হলে তাতে ডাক্তারদের ফি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য চার্জ উল্লেখ থাকতে পারে। এর বাইরে আর কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। আইনের খসড়া থেকে জানা যায়, সরকার সময়ে সময়ে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ডাক্তারদের ফি ও পরীক্ষা -নিরীক্ষাসংক্রান্ত চার্জ নির্ধারণ করে দেবে। কোন ডাক্তার সেবাসংক্রান্ত কোনো ধরণের মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র প্রদান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে কোনো অর্থকড়ি নেয়া যাবে না। বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে অথবা ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিষ্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্য রেজিষ্টারে লিখে রাখতে হবে। ওই রেজিষ্টার গোপনীয় দলীল হিসেবে গণ্য হবে। রোগীকে রোগের বিবরণ জানাতে হবে। প্রয়োজনীয় ও বিকল্প চিকিৎসা, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অস্ত্রোপচারের জটিলতা সম্পর্কে রোগের রোগীকে অবহিত করতে হবে। এমনকি খাতওয়ারী চিকিৎসা ব্যয় সর্ম্পকে পরিস্কার ধারণা দিতে হবে। সন্দেহজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বেআইনি গর্ভপাত, অগ্নিদগ্ধ হওয়া, দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতি, লাঞ্ছিত ও প্রহৃত ক্ষতি, অন্যের দ্বারা যে কোনো ধরনের আঘাতজনিত ক্ষতির ক্ষেত্রে চিকিৎসককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট থাকাকে অবহিত করতে হবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে অপরাধগুলোর তদন্ত ও বিচার ফৌজদারী কার্যবিধি ১৯৯৮ এর ৫ নং আইনের আওতায় পরিচালিত হবে। ডাক্তারের অপরাধের ফলে রোগীর মৃত্যু হলে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৫ নং আইনের বিধান প্রযোজ্য হবে। এছাড়া সরকারি লাইসেন্স ছাড়া বেসরকারী চিকিৎসেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ২ বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
বেসরকারী কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শন, চিকিৎসাসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, কাগজপত্র পরীক্ষা করতে পারবেন। সরকারি নিয়মনীতি লঙ্গিত হয়েছে- প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। চিকিৎসক আইন না মানলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবদর্শনকালে যদি প্রমাণ হয় জনস্বার্থেই এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া দরকার, তাহলে সরকার যে কোনো বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিতে পারবেন। এমনকি লাইসেন্সও বাতিল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ১৫ দিনের সময় দিয়ে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসারত ব্যক্তিদের ওই প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে অন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। এ আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ বাতিল বলে গণ্য হবে।