নাটের গুরু জিয়া ছিল স্বাধীনতার শত্রু

এডভোকেট কাজল॥ জিয়াকে লেখা কর্নেল বেগের চিঠি। একটি দুর্লভ চিঠি আমাদের হাতে এসেছে। চিঠিটি ১৯৭১-এর ২৯ মে লেখা। চিঠি লিখেছেন তৎকালীন কর্নেল বেগ, লিখেছেন ‘মেজর জিয়াউর রহমানকে।’ প্রথমেই পাঠকদের জন্য চিঠিটি হুবহু উপস্থাপন করছিঃ-
Major Zia Ur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say good job! You will get new job soon.
Don’t worry about your family. Your wife and kids are fine.
You have to be more careful about major Jalil.
Col. Baig Pak Army
May 29. 1971

(মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, ঢাকা তোমার কাজে আমরা সবাই খুসি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করছো। খুব শিগগিরই তুমি নতুন কাজ পাবে। তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়োনা। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে মেজর জলিল সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকতে হবে। কর্নেল বেগ, পাক আর্মি মে ২৯,১৯৭১)
প্রিয় পাঠক একটু থামুন। ফিরে যান ১৯৭১। বাংঙালী জাতী স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করছে। অস্র, গ্রেনেড, আর মৃত্যু-প্রতিদিনের চিত্র। মেজর জিয়া তখন সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্বা। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন। আর কর্নেল বেগ, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অন্যতম কর্তা। সকাল-সন্দ্ব্যা বাঙালী নিধনের নির্দেশ দিচ্ছেন, ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করছেন। দু’ই জন সমর ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ। অথচ কর্নেল বেগ বলছেন, ‘তোমার কাজে আমরা খুশী’। মুক্তিযোদ্বা মেজর জিয়া কী কাজ করলেন যে তার কাজে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী খুশী হলো? মেজর জিয়া যে প্রতিপক্ষের বিরুদ্বে যুদ্ব করছেন, সেই প্রতিপক্ষ তার সন্তানের দেখভাল করছে?
মুক্তিযুদ্বের অকথিত অধ্যায়ের একটি বড় আবিষ্কার। এর মানে কি এই যে, দৃশ্যত জিয়া মুক্তিযুদ্ব করলেও আসলে তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট? মুক্তিযুদ্বের সময়ই খন্দকার মোশতাকদের ষড়যন্ত্রের কথা আজ জাতি জানে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রে মোশতাক চক্রের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগের কথাও জাতি জানে। কিš‘ যেটি এই চিঠি স্পষ্ট করে দিয়েছে তা হলো ‘মুক্তিযোদ্বা’ জিয়া আসলে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট। মুক্তিযুদ্বের সময় পাকিস্তানি সড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ছিলেন মেজর জিয়া। মুক্তিযুদ্বের সময়ই তাকে পাকিস্তানিরা ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দিয়েছিল, যে দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন। ’৭৫-এ জিয়ার ভূমিকায় যারা হিসব মেলাতে পারেন না, তাদের জন্য এই চিঠি একটি বড় উম্মোচন।
এই চিঠি প্রমান করে, জিয়া কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ‘গুপ্তচর’। আর এ কারনেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জিয়া মোশতাক চক্রকে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত ঘটনা ঘUvন। এ কারনেই, ’৭৫-এর পর জিয়া যুদ্বাপরাধীদের বিচার বন্দ্ব করছিলেন। যুদ্বাপরাধে আটকদের মুক্তি দিয়েছিলেন। এ কারনেই, জিয়া গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এ কারনেই জিয়া আবার জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ছিলেন। এ কারনেই জিয়া, চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। যুদ্বাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, দলে নিয়েছিলেন। এ কারনেই জিয়া রক্তে ভেজা আমাদের সংবিধান কাঁটাছেড়া করে রক্তাক্ত করছিলেন। এ কারনেই, জিয়া মুক্তিযুদ্বের চেতনাকে ধূলিসাৎ করেছিলেন।
এ কারনেই, জিয়ার মৃত্যুর পরও ১৯৯১-এ ক্ষমতায় এসে বিএনপি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেনি, এ কারনেই বেগম জিয়া স্বাধিতাবিরোধী শক্তি জামায়াতকে নিয়ে জোট করেছেন। এ কারনেই, ক্ষমতায় এসে চিহ্নিত যুদ্বাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এ কারনেই বেগম জিয়া যুদ্বাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্বে অবস্থান নিয়েছেন। প্রকাশ্যেই যুদ্বাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ কারনেই তিনি জঙ্গি, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।
এই চিঠির যোগসূত্র আমরা পাই, পাকিস্তানের আদালতে দেয়া আইএসাআই প্রধানের বক্তব্যে। কিছু দিন আগে আইএসাই প্রধান আদালতে এক লিখিত জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ‘বিএনপিকে আইএসাই নিয়মিত অর্থ দেয়।’
সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামে একটি মৌলবাদী পত্রিকায় একটি নিবন্দ্ব লিখেছেন। ঐ নিবন্দ্বে তিনি যুদ্বাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, এ ব্যাপারে তিনি মার্কিন হস্হক্ষেপ কামনা করেছেন। অর্থাৎ জিয়া ‘গুপ্তচর’ হয়ে পাকিস্তানি অনুগত্যের যে বীজ বপন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তা এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এই জন্যই জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব আর বেগম জিয়ার হাহাকার। এই চিঠির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার নিবন্দ্বের যোগসূত্র পাওয়া যায়। খালেদা জিয়া তার নিবন্দ্বের শুরুতে বলেছেন ‘১৯৭১ সালে প্রথম সারির জাতিগুলোর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আত্ন সংকল্পের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।’ ’৭১-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকা আমারা সবাই জানি। অনেকে মনে করতে পারেন বেগম জিয়া কীভাবে এই মারাত্নক ভুল করলেন। কিন্তু জিয়ার কাছে লেখা কর্নেল বেগের ‘৭১-এর চিঠি বলে দেয়, বেগম জিয়া যা লিখেছেন তা জেনে বুঝেই লিখেছেন। ’৭১-এ পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল ইয়াহিয়ার নির্দেশে। ইয়াহিয়া খানের গুপ্তচর জিয়ার গড়া দলের নেত্রী, বেগম জিয়া তাই মার্কিন ভুমিকার প্রশংসা তো করবেনই। একই কায়দায় তিনিও তো মার্কিন আগ্রাসনের আমন্ত্রণও জানাবেন।
এই একটি চিঠিই দিয়েছে অনেক প্রশ্নের উত্তর। অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.