নিজস্ব প্রতিবেদক॥ আমরা শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষজন কম-বেশী ঘুরতে পছন্দ করি। আর তাই সকলের সুবিধার জন্য দর্শনীয় স্থানসমূহের সময় সূচি দেয়া হল।
মিরপুর চিড়িয়াখানা: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা অবস্থিত ঢাকার মিরপুর অঞ্চলে। শুধু আকার বা আয়তনের দিক থেকেই নয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির জীব-জানোয়ার পাশেই রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। এটি প্রতিদিন সকল ১০টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ মূল্য দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার (তবে অন্য কোন সরকারি ছুটি থাকলে খোলা থাকে)।
শিশু পার্ক: ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্কটি বাংলাদেশের অন্যান্য শিশুতোষ পার্কের মধ্যে অন্যতম। এটা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার বন্ধ। উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার শুধু ছিন্নমুল শিশুদের জন্য খোলা রাখা হয়। সামান্য প্রবেশ মূল্য দিয়ে এই শিশুপার্কে প্রবেশ করতে হয়। এই শিশুপার্কের বিভিন্ন মেশিনে উঠতে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণের মূল্য প্রদান করতে হয়। তবে তা খুব বেশী নয়।
বিজ্ঞান জাদুঘর: ঢাকার আগারগাঁও এলাকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপাদান নিয়ে গঠিত হয়েছে বিজ্ঞান জাদুঘর। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে। শুধু শুক্রবার দিন বিকাল ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিজ্ঞান যাদুঘরের সাপ্তাহিত বন্ধের দিন হচ্ছে বৃহস্পতিবার।
বলধা গার্ডেন: উঁচু দালানে ঘেরা বলধা গার্ডেন নামের এই উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থিত পুরানো ঢাকার ওয়ারীতে। সপ্তাহের প্রতিদিন খোলা থাকে। সময় সকল ৮টা থেকে ১১টা এবং দুপুর ২টা হতে বিকাল ৫টা। এই বাগানে প্রবেশ করতে সামান্য প্রবেশ প্রদান করতে হয়।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর: সেগুনবাগিচা। ঢাকার সেগুন বাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর অবস্থিত। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। এছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যাদুঘরে সামান্য প্রবেশ মূল্য দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
রমনা পার্ক: ঢাকা শহরের নাগরিক কোলাহল থেকে একটু শান্তির প্রত্যাশায় কোথাও যেতে চান। তাহলেণ চলে যান ঢাকার রমনা পার্কে। এই পার্কটি সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঢাকা শাহাবাগের মোড় থেকে একটু এগিয়ে শিশুপার্কের সামনে এই পার্কের অবস্থান। এতে প্রবেশ করতে কোনো অর্থের প্রয়োজন হয় না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: ঐতিহাসিক ময়দানটি এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হিসাবে খ্যাত। এই উদ্যানটির গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক পটভ’মি রয়েছে। একসময় এটি ঘোড়দৌড়ের মাঠ হিসাবে বিখ্যাত ছিল। এখন সেখানে গাছের ছায়া ঘেরা সবুজ বৃক্ষরাজিতে ভরপুর সবুজ চত্বর।
শ্যমলী শিশুমেলা: এটি ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত। বেসরকারী সংস্থা পরিচালিত শিশুদের পার্ক। প্রতিদিন সকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিত কোনো বন্ধ নেই।
সামরিক যাদুঘর: এটি মিরপুরে অবস্থিত। সকাল ১০-৩০মি: থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার: বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার।
আহসান মঞ্চিল: বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল এক ঐহিতাসিক ভবন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের স্মৃতি। প্রাচীন সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে আহসান মঞ্জিল জাদাঘরের গুরুত্ব অপরিসীম। আহসান মঞ্জিল এক সময় ব্রিটিশ ভরতীয় উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নবাবদের বাসগৃহ ছিল। বিল্ডিংটি স্থাপত্যে দৃষ্টিনন্দন। যে কোনো মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করে এর স্থাপন্য কৌশল জাদুঘরটির প্রথমতলা ও দ্বিতীয়তলায় রয়েছে নবাবদের ঐতিহ্যপূর্ণ জীবনযাত্রার চিত্র। জাদুঘরটি সর্বমোট ২টি গ্যালারীতে ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বিকাল ৩.০০ থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ পর্যন্ত। শনিবার-বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪.৩০টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর : রাজধানী ঢাকা শহরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জাতীয় যাদুঘরটি অন্যতম। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে এই উন্নমানের যাদুঘরটি অবস্থিত। পিজি হাসপাতালের উল্টোদিকে এবং জাতীয় গ্রন্থাগারের পাশে মনোরম পরিবেশে আধুনিক কারুকার্য ও নকশায় নির্মিত এই যাদুঘরটি অগণিত মানুষের হৃদয় করেছে জয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ বাগানে ঘেরা চত্বরটি সহজেই দর্শকের হৃদয়কে আকর্ষন করে। এই যাদুঘর একবার মন দিয়ে দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া জাতীয় যাদুঘর গ্যালারী শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল ১২.৩০ মিনিট হতে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে এবং শুক্রবার বিকাল ৩.৩০ মিনিট থেকে সন্ধা ৭.০০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি দশ টাকা ফি নেয়া হয়। তিন বছরের নিচের বয়সের শিশুদের কোনো ফি প্রয়োজন হয় না। জাদুঘরের ভিতরে প্রতি তলায় যেসব জিনিস আছে- সেগুলো সম্পর্কে নির্দেশিকা দেয়া রয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুসারে যে কোন পর্যটক জাদুঘর প্রদর্শন করতে পারবেন।
লালবাগের কেল্লা: তিন শহকের পুরান ঐতিহাসিক স্থান লালবাগের কেল্লা, যাকে দুর্গও বলা হয়। মোঘল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্ট্রব্দে এই কেল্লা নির্মাণ করেন। কেল্লার অভ্যন্তরে তিনটি পুরার্কীর্তি রয়েছে। একটি হল পরী বিবির মাজার, একটি হল দরবার হল ও হাম্মাম এবং তৃতীয়টি হল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এ কেল্লার চারটি ফটকের মধ্যে প্রধান ফটক যেটি একশ টাকার নোটে মুদ্রিত সেটি এখন বন্ধ। তার বিপরীত দিকের চারটি ফটকের মাঝখানের ইট এখন প্রধান ফটক হিসেবে স্বীকৃত। এ ফটকটিই দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। লালবাগ কেল্লা বা দুর্গ জাদুঘরটিতে প্রবেশ মূল্য হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ২ টাকা করে রাখা হয়। কেল্লাটি শনিবারে বন্ধ থাকে। এছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে একটা এবং দুইটা থেকে সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি বা বন্ধ। সোমবার দুপুর ১.৩০ থেকে বিকেল ৫.০০টা পর্যন্ত; মঙ্গলবার –শনিবার সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ পর্যন্ত।
বাহাদুর শাহ্ পার্ক: অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক। আঠার শতকের শেষের দিকে এটি ছিল ঢাকার তদনীন্তন আর্মেনীয়দের ক্লাব। তবে ঢাকাবাসী এর নাম দেয় অন্টাঘর। ১৮৫৭ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসনভার গ্রহণ করার পর আন্টাঘর ময়দান ভিক্টোরিয়া পার্কে পরিণত হয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালনকালে এই পার্কে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের নামানুসারে ভিক্টোরিয়া পার্কের নতুন নামকরণ হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। প্রতিদিন খোলা থাকে: ভোর ৫.০০ টা থেকে সকাল ৯.০০টা, বিকাল ৩.০০টা থেকে রাত ১০.০০টা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নভোথিয়েটার-বিজয় সরণি: প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। সকালের প্রদর্শনীর এক ঘন্টা আগে এবং অন্যান্য প্রদর্শনীর দুই ঘন্টা আগে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিট নেওয়ার সুযোগ আছে। সাপ্তাহিক বন্ধ: বুধবার, শনি-মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার: সকাল ১১.০০ টা, দুপুর ১.০০টা, বিকাল ৩.০০টা, বিকেল ৫.০০টা এবং সন্ধ্যা ৭.০০ টায়। শুক্রবার: সকাল ১১.৩০ টা, বিকাল ৩.০০টা, বিকেল ৫.০০টা, সন্ধ্যা ৭.০০টায়।
নন্দন পার্ক-আশুলিয়া: প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল ১০.০০টা থেকে রাত ১০.০০টা।
ফ্যান্টাসি কিংডম-আশুলিয়া: প্রতিদিন খোল থাকে সকাল ১১.০০ টা থেকেসন্ধ্যা ৭.০০টা। শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন সকাল ১০.০০টা থেকে রাত ১০.০০টা।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) মিরপুর: মার্চ থেকে নভেম্বর প্রতিদিন সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০টা পর্যন্ত। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী প্রতিদিন সকাল ৯.০০টা থেকে বিকেল ৪.৩০টা পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্য: ৫ টাকা, ছোটদের ২ টাকা। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ শিক্ষাসফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৩টাকা।