টিআইএন॥ নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা মোকাবেলা করে সরকার জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যাত চ্যালেঞ্জই আসুক তা মোকাবেলার ক্ষমতা আমাদের আছে। সরকারে সাফল্যের বিসয়ে সরকার প্রধানের মূল্যায়ন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, আর্থসামাজিক উন্নতি করবে, সেদিক থেকে ব্যাপক সাফল্য আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই সব সময় আমাদের একটাই প্রচেষ্টা ছিল যে কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাব, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করব, গৃহহারা মানুষকে ঘর দেবো। আন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এই যে মৌলিক চাহিদাগুলো এগুলো পূরণ করা। আমি ওইটুকু অন্তত দাবি করতেপারি আমাদের এই সাড়ে সাত বছরের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এখন ২২.৪ ভাগে নিয়ে এসেছি। প্রত্যেক মানুষের মাথাপিচু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে আমরা উন্নীত করতে পেরেছি। আমাদের বাজেট আমরা বৃদ্ধি করেছি। প্রায় ৩,৪০,৬০৫ কোটি টাকার বাজেট আমরা ঘোষণা দিয়েছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্ববৃহৎ বাজেট এবং বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি। মানুষের চিকিৎসাসেবা আমরা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি এবং বিনা পয়সায় প্রায় ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি কামিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। বাংলাদেশব্যাপী প্রায় ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে। বিনাপয়সায় বই দিচ্ছি। আমরা ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিচ্ছি এবং এখন আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে তো এত ব্যাপক বিষয় এত অল্প সময়ে বলে শেষ করপা যাবে না। তবে একটা বিষয় আপনারা লক্ষ করবেন যে, বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে একটা আস্থা, বিশ্বাস ফিরে এসেছে এবং মানুষের যে আর্থিক চরম দৈন্যতা ছিল সেটা এখন অনেকটা কেটে যাচ্ছে কারণ পাঁচকোটি মানুষ কিন্তু এখন নি¤œবিত্তের থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। এখনো যারা হতদরিদ্র বা দারিদ্রসীমার নীচে বা যারা একটু কষ্টে আছে তাদের কষ্ট দূর করার জন্য আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। মেযন, ইতোমধ্যে ১০ টাকায় একজন মানুষ যেন ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই সুযোগ পাবে। যে সময় আমরা সরকার গঠন করি তখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। এই মন্দা অবস্থায় কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়। সেখানে আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় পাঁচ বছর আমরা ৬ ভাগের ওপরে ধরে রেখেছি। এবারে আমরা ৭ ভাগে চলে এসেছি। মুল্যস্ফীতি কম, প্রবৃদ্ধি বেশী এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন। গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন।
ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে সাংবাদিক আনিস আহমেদের প্রশ্ন ছিল, এই সাফল্যের পেছনে কী রহস্য কাজ কররেছে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমি একটি কথাই আপনাদের মনে করাতে চাই। যে দল একটা দেশের জন্য জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, সংগ্রাম করে, আন্দোলন করে, বিল্পব করে এবং যুদ্ধ করে বিজয় এনে দেয়, সেই দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখনই কিন্দু দেশের উন্নতি হয়। এখানে আর কোনো ম্যাজিক নাই। ম্যাজিক একটাই হচ্ছে আমরা জনগণের কল্যাণে দেশের স্বাধীনতা এসেছি। জনগণের কল্যাণ করাটাই আমরা মনে করি আমাদের কর্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন ছিল, কী ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় আপনাকে?
জনাবে তিনি বলেন, অনেক। অনেক রকম চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ যারা এই যে উড়ে এসে ক্ষমতায় জুড়ে বসেছিল বা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের গঠন করে রেখে যেগছে তারা তো ক্ষমতার লোভটা ছাড়তে পারে না। তাদের যে হত্যাযঞ্জ চালানো, মানুষ পোড়ানো অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষের ক্ষতি করা, নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বাধা দেয়া। নানা ধরণের কর্মকান্ড করে সমস্যা তারা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসকে তারা উসকে দেয়। কাজেই এ ধরণের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হয়। তবে আমি সব সময় মনে করি জনগণই শক্তি। কাজেই যেকোনো চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন অত্যন্ত তা মোকাবেলা করার মতো সেই শক্তি, ক্ষমতা আমাদের আছে। যেহেতু আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা যেটা করতে সক্ষম হয়েছি সেটা হলো জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যেমন অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, আমাদের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, সব শ্রেণীর মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। প্রত্যেকে এখন জঙ্গিবাদ বিরোধী ভূমিকা নিচ্ছে। এই যে জনগণের সম্পৃক্ততা, এটাই হচ্ছে মূলশক্তি। অন্যান্য দেশ, তাদের সাথে আমাদের যে আলোচনা হচ্ছে- যেমন টেনিক্যাল সাপোর্টগুলো নেয়া, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। কিন্তু যতই যা হোক না কেন আমি মনে করি- আমাদের যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা তারা যেমন তৎপর। সাথে সাথে দেশবাসী এখন সচেতন। তারাই খবর দিচ্ছে। তারাই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। কাজেই তাদের সম্পৃক্ত করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নিয়ে সর্বস্তরে আমরা তাদের সম্পৃক্ত করেই কিন্তু আমরা মোকাবেলা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন ছিল- কেউ কেউ বলেন যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে মাত্রায় হয়েছে, রাজনৈতিক স্পেসটা/ জায়গাটা অনেকেই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে।
জবাবে তিনি বলেন, কথা হচ্ছে- একটা রাজনৈতিক দল যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে, সেই রাজনৈতিক দলকেই তার খেসারত দিতে হবে। আমরা নির্বাচন করেছি। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসেনি। তারা নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের এখন মানুষ পোড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে? আমার সেটাই প্রশ্ন। বাংলাদেশে আপনারা জানেন, একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল- বিটিভি। আমাদের সময় এখন প্রাইভেট সেক্টরে যথেষ্ট টেলিভিশন রয়েছে। এবং যার যত ইচ্ছা কথা বলতে পারে। তারা ন্যাশনাল ইলেকশনে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তা তারা লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশনে তো অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে বলবেন কি করে যে, তাদের স্পেস দেয়া হয় না। কথা তো কারো কাছ থেকে আমরা কেড়ে নিচ্ছি না। যার যার ইচ্ছামতো তো কথা বলেই যাচ্ছে। তারা মিটিং করছে, র্যালি করছে, সবই তারা করছে। রাজনীতির যথেষ্ট সুযোগ আছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। জাতীয দায়িত্ব। জাতির কাছে এটা আমরা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনা এই বিচার শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে সব অপরাধীকে মুক্ত করে দেয়। ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত ছিল। ২২ হাজার মামলা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান এসে সব বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার আমরা সরকারে এসে সে বিচার করেছি। কাজেই এই যুদ্ধাপরাধীদের যারা আশ্রয়, প্রশ্রয় দিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়েছে তাদেরও তো বিচার হওয়া উচিত।