উইমেন চ্যাপ্টার থেকে শারমিন শামস্॥ পর্নোগ্রাফি পুরুষ কেন দেখে? পর্নোগ্রাফি হইলো সেই বস্তু যা সে বাস্তবে পায় না। পুরুষের ফ্যান্টাসি, মনের সাধ আহ্লাদ, গোপন ইচ্ছা- পর্নোগ্রাফি দেইখা পুরণ হয়। পর্নোগ্রাফির নারীর সপ্রতিভ তারা যৌনতায় অংশ নেয়। এখন ঘটনা হইলে, যৌনতায় নারীর সপ্রতিভ অংশগ্রহণ, অ্যাকটিভ রোল শুধু পর্নেই না, সারা দুনিয়ায়ই একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
নারীও ভোগ করে, খিদে মেটায়, যৌনতাকে উপভোগ করে, করায়। তবে এই বাঙাল দেশের কথা আলাদা। এখানে আপামর নারী জাতি পুরুষের নিচে নিজেরে সমর্পণ করে এবং ভোগের বস্তু হয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা হইলো, বঙ্গ সমাজের নিয়মানুসারে নারী পুরুষের নিচে চাপা পড়ে থাকে বটে, কিন্তু এদেশের পুরুষও অ্যাকটিভ নারীকেই মনে মনে চায়। চায় বলেই সে পর্বো দেখে।
এখন পুরুষ পর্নো ে দখে, সেই নারীরে দেখে খুশি হয়, সুখি হয়, তৃপ্ত হয়। তারপর কী করে? তারপর কয়- এ তো পুরাই বেশ্যা, মাগী। তারপর কী হয়? বাস্তবে বৌ বা প্রেমিকা যদি যৌনতায় অ্যাকটিভ হয়, বাঙালী পুরুষ তারে সন্দেহ করে। তারে নিয়া চিন্তিত হয়। পুরুষের মাথায় আকাশ ভাইঙ্গা পড়ে। মনে মনে কিন্তু সে পুরাই সুখি, তৃপ্ত। কিন্তু ঐ যে মনের কাঁটা- হায় হায়, মাইয়া মানুষ ক্যান অ্যাকটিভ? এর চরিত্র কি তাইলে টিক নাই। এর এতো খিদা কিসের? মাইয়া মানুষের খিদাই বা কীসের? ক্যান খিদা? কিভাবে খিদা? অসম্ভব!
গত কয়েকদিন ‘আট মিনিট’ নামের বিখ্যাত ভিডিওখানা নিয়ে আলোচনা-সমালেলাচনা আকথা-কুকথা যথাসম্ভব পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম, ‘মেয়ে ক্যান এতো অ্যাকটিভ’ এ বিষয়টাই এদেশের বিশাল অংশ পুরুষ জাতি বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের মেজাজ তাই গরম। তারা রেগে গিয়েছেন এবং হেন কোনো গালি নাই যা মেয়েটিকে দিচ্ছেন না। এখন আমি হলফ করে বলতে পারি, মেয়েটি যদি একটু কিংবা পুরোটাই প্যাসিভ হতেন, তবে কিছু পুরুষের সহানূভূতি কাড়তে সক্ষম হতেন। মেয়ে কেন ঝড়, মেয়ের ক্যান এতো খিদা, মেয়ের ক্যান এতো শক্তি- এই নিয়া চিন্তায় ভাবনায় সমগ্র পুরুষ জাতি তখন এতোটা জেরবার হইতেন না। এখন যৌনতায় নারীর প্যাসিভ বা অ্যাকটিভ থাকার বিষয়টা কী? এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি? যেটা বলে নারী অ্যাকটিভ হইতে পারে না? নাই তো! এখন পর্যন্ত শরীর বিজ্ঞান বলে নাই, যৌনতা একমাত্র পুরুষেরই চাহিদা এবং যৌনতায় পুরুষই অধিক আগ্রহী এবং এক্ষেত্রে পুরুষই সদাসর্বদা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
তাহলে বিষয়টা কি? বিষয়টা কি এমন যে, এই উপমহাদেশের আদিম পুরুষেরা প্রত্যহিত যৌনতাকেও নারী নিগ্রহ অবদমন আর নীরব নির্যাতনের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন? এদেশের পুরুষ জানে যৌনতায় নারীও হইতে পারে নিয়ন্ত্রক, অ্যাকটিভ এবং সেই ভূমিকা পুরুষ নিজেও চায়। চায় বলেই সে পর্ণো দেখে, যৌনকর্মীর কাছে যায়, পরকীয়ায় মজে। কিন্তু নিজের বিবাহিতা স্ত্রী, প্রেমিকার সঙ্গে এই অ্যাকটিভ ভ’মিকা মনে মনে সুখবার হইলৌ, প্রকাশ্যে সে একে নিন্দার চোখে দেখে। সমাজে অন্য কোন নারীর অ্যাকটিভ রোলেল কথা জানতে পারলে সে নির্দ্বিধায় তাকে বেশ্যা বলে সম্বোধন করে, তাকে ডাইনি, কুহকিনী, মায়াবিনী ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
যৌনতায় পুরুষের কাছে সমর্পিত, প্যাসিভ ভূমিকা পালনকারী নারী এদেশের পুরুষের চোখে প্রকৃত নারী। যে মুখখানি তুলে নাহি চায়, চুম্বনে লাল-নীল বেগুনি হয়, চোখ বুঁজে শুয়ে অপেক্ষায় থাকে পুরুষের। এদেশের বিবাহ বাসরে দেড় হাত গোমটা তুলে বরের জন্য অপেক্ষা করে বুধু আর বর সদর্পে ঘরে ছিটকিনি লাগিয়ে অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। তো, নারীর এই সাবমিশন বা সমর্পন- এ তো চিরাচরিত। প্রতিটি ধর্ম নারীর এই সমর্পণের কথাই বলে গেছে। সেই সমর্পিতা নারীকে পুরুষ মাথায় তুলে নেচেছে ‘প্রিয়া’ বলে, তারপর গোপনে পর্নোগ্রাফির অ্যাকটিভ নারীকে দেখে লোল ফেলেছে। লোল-টোল ফেলে বৌকে গিয়ে বলেছে, ‘তুমি বোরিং’। বৌ আকাশ পাতাল ভেবেও আবিস্কার করতে পারেনি ঘটনা কোথায়! সে তো স্বামী চাহিবামাত্র হাবির এবং যথাবিহিত সেবা করতে প্রস্তুত। তবে ভুলটা কোথায়?
এবার একটি মেয়ে আমার ছেলেবেলার এক বন্ধুর প্রেমে পড়লো। ছেলেটিকে সে কথাটা জানিয়ে টুপ করে একখানা চুমুও খেলো। তো আমার বন্ধু, সেই ছেলেটা, মহা চিন্তায় অস্থির হয়ে আমারে জিগাইলো, ‘হ্যারে, ও যে নিজে আগে চুমু খেল, এটা কি ভালো মেয়েরা করে?’ নারীর সাবমিশন এই সমাজের চোখে অতি পবিত্র, অতি আকাঙ্খিত, অতি কামনার বস্তু। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু কইরা জয় গোম্বাসী, সুনীল পর্যন্ত কবির কবিতাতেও নারীর সাবিশণই চ’ড়ান্ত আকাঙ্খার বস্তু। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ধর্ষণের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। একমাত্র হুমায়ূন আজাদের কবিতায় নারীর অগ্রণী ভূমিকা, অ্যাকটিভ রোলকে স্বীকার আর প্রশংসা করা হয়েছে। তাই কারো কারো কাছে হুমায়ূন আজাদ অশ্লীল কবি।
যাই হোক, প্রেমিকারে ক্যামনে আদর করবে, কেমনে চুমু খাবে সেই বর্ণনাও পেসবুক ষ্ট্যাটাস হয় কোনো কোনো পুরুষের। এখন কোনো মেয়ে যদি একই ষ্ট্যাটাস দিত, তারে কি কি নামে ডাকতো সকলে, সেইটা ভাবি। এখন পুরুষ তো যা ইচ্ছা করতেই পারে। পুরুষ কর্তা। সে যৌনতারও কর্তা। কিন্তু ঘটনা হইলো, পুরুষও নিয়ন্ত্রণ চায়, কিন্তু গোপনে। অতি গোপনে। কিন্তু যে নারী লিলিখ হয়ে ওঠে, পুরুষ তাকে বনিতা বলে। পুরুষ তার পুরুষদন্ডকে শাসকের দন্ড ভাবে। ভাইবা সুখ পায়। এই সুখ সে হাতছাড়া করতে চায় না। যে নারী যৌনতায় নিজেকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিজে আসতে চারে, সেই নারী জীবনের বাদবাকি কর্মকান্ডে পুরুষের অধীন থাকবে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই এই দেশের পুরুষ ভয় পায়।
তারে তো বলা হয়েছে, সে কৃষক। সে খালি চাষ করবে। তার শস্যক্ষেত্র পুরুষের তলে নিজের বিছায়া দিয়া চুপটি করে পড়ে থাকবে। তো অশৈশব এইসব শুনে জেনে বড় গওয়া পুরুষ ক্যামনে মানবে নারীর অ্যাকটিভ পার্ট! যদিও তার ভালোই লাগে… কিন্তু সে কথা যায় না বলা। সে কথা গোপন! তাই ভিডিও’র মেয়েটা সর্বনাশী ঝড়, নষ্ট্রা, ভ্রষ্ট্রা-বেচারা ছেলেটার জীবন যে সাড়ে সর্ব্বেনাশ করে দিয়ে ছেড়েছে!।