ওয়ানের সৌজন্যে ঢাকা প্রতিনিধি॥ আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে কাদের কপাল পুড়ছে আবার কাদের কপাল খুলছে-এই আলোচনা এখন দলে সরগরম। ২২-২৩ অক্টোবর ২০তম জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে এখনই উৎসবের সাজ-সাজ রব শুরু হয়েছে। বিশাল বাজেট, বর্ণাঢ্য আয়োজন, ব্যাপক প্রস্তুতিতে নেতা-কর্মীরা এখন দফায় দফায় বৈঠক আর কর্মযজ্ঞে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে কার্যত কোন প্রার্থী নেই। বিগত ২ কাউন্সিলে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশারফুল ইসলাম তৃতীয়বারের মতো হবেন, নাকি পরিবর্তন আনবেন তা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ জানেন না। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, মাঠ চষে বেড়ানো মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের প্রার্থী নন এই ঘোষণা দেয়ার পর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নেতা-কর্মীদের কৌতুহল, আগ্রহের উত্তেজনা শেষ হয়ে গেছে। দলে এখন ব্যাপক আলোচনা বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ওয়ার্কিং কমিটি থেকে কাদের কপাল পুড়ছে। অর্থাৎ কারা ওয়াকিং কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রীত্ব, প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ ও সংসদ সদস্যের আসন একসঙ্গেই চলে গেছে। প্রেসিডিয়াম থেকে এ্যাড. সাহারা খাতুনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা চারদিকে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া মৃত্যুজনিত কারণে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ শূণ্য রয়েছে। এবারের কাউন্সিলে বিগত দুই কমিটিতে ব্যর্থ ও বির্তকিত একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক এবং কিছু নির্বাহী সদস্য বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, পদোন্নতি লাভ করে প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পেতে পারেন বিগত ঢাকার মেয়র নির্বাচনে দলের হয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, দিপু মনি এবং খায়রুজ্জামান লিটন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ এবার হচ্ছে ৫টি। এখানে পদোন্নতি লাভ করে ঠাঁই পেতে পারেন মির্জা আজম, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী , বাহা উদ্দিন নাছিম এবং হাছান মাহমুদ। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রাখা হবে ৭টি। বিভাগীয় ভিত্তিতে তরুণদের এ পদ গুলোতে আলোচনায় রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাররিয়ার আলম, জুনায়েদ আহমেদ পলক, তারানা হালিম, অসীম কুমার উকিল, একেএম এনামুল হক শামীম, নসরুল হামিদ বিপু, শফি আহমেদ। এছাড়া পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য এড: সুভাষ বোস, সুজিত রায় নন্দী, এড: ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। কমিটির বাইরে থাকা আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, ডাঃ হাবিবে মিল্লাত, ইসহাক আলী খান পান্না, নাহিম রাজ্জাকের নামও পদন্নোতির আলোচনায় রয়েছে। নির্বাহী ২৪ জনের সদস্যের মধ্যে কয়েকজন বিতর্কিত কাজের জন্য বাদ পড়তেও পারেন।
বর্তমান ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নারী নেতা রয়েছেন নয়জন। গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে যে বর্ধিত কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন হবে সম্মেলনে, তাতে সদস্যসংখ্যা হবে ৮১, যেখানে যোগ হচ্ছেন আরও বেশ কজন নারী নেত্রী। এদিকে, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন চালুর সময় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে বিভিন্ন কমিটির এক-তৃতীয়াংশ পদে নারী সদস্য রাখার শর্ত ২০২০ সালের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নিয়েছে আওয়ামী লীগও। তবে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সেই শর্ত পূরণ করতে পারবে না দলটি।
দলের নীতি-নির্ধারণী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নারী নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তি বা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান কমিটির কয়েকজন নারী নেতা বাদও পড়তে পারেন। দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারী নেতা ছিলেন ১০ জন। তাদের ম্যধ্যে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। অন্য নয়জন হলেন- সভাপতি শেখ হাসিনা, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও মুন্নুজান সুফিয়ান।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী নেতৃত্ব নিয়ে আসতে চান। কাকে কাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে তিনি ইতিমধ্যে ঘনিষ্ঠজনদের মতামত চেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে জানায়।
সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্য জানান, এর আগে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয়নি। তাই আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে নারী নেত্রীর অন্তর্ভুক্তি ঘটবে উল্লেখযোগ্য হারে। বিষয়টি চমক হিসেবেও দেখা যাবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন এমন বেশ কজন নারী নেতা আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম; মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী; হুইপ মাহবুব আরা গিনি; সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, নুরজাহান বেগম মুক্তা, সানজিদা খানম। এছাড়া খুজিন্তা নূর-নাহারিন (মুন্নি), ওয়াসিকা আয়শা খান, উমা চৌধুরী, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, মারুফা আক্তার পপি, সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা, ডা. নুজহাত চৌধুরী, শমী কায়সার প্রমুখ।
এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ওয়াকিং কমিটিতে সম্পাদকীয় পদ পেতে পারেন তাদের মধ্যে অজয় কর খোকন, লিয়াকত সিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, বাহাদুর ব্যাপারি আলোচনায় রয়েছেন।
সর্বশেষ সংযোজন হতে পারেন দলের প্রয়োজনে প্রধান মন্ত্রীর পরিবারের বিশ্বস্ত বঙ্গবন্ধুর সহচর শ্রদ্ধেয় সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়ার যোগ্য উত্তরসুরী জনাব এডভোকেট আনিছুল হক এমপি। আর এই সংযোজনে এলাকাবাসী তথা প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর সহচর এবং প্রয়াত এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়ার ইচ্চারই বাস্তবায়ন বাস্তব রূপে পরিলক্ষিত হবে।