তাজুল ইসলাম॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হলো। সকাল বেলা ৮.৩০ এ রওয়ানা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে পৌঁছি প্রায ৯.৩০। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো পুলিশি বাধা; গাড়ি আর ঢুকতে পারলো না। ড্রাইভারবিহীন গাড়ি এবং গ্রামের পরীক্ষার্থী যার ঢাকা সম্পর্কে নূন্যতম অভিজ্ঞতা নেই। কি আর করার যা আছে কপালে বললাম তুমি রিকসা নিয়ে হলে চলে যাও না চিনলে কাউকে জিজ্ঞসা করো আমি হলে আসছি। কিন্তু সমস্যা আরো প্রকট হলো গাড়ি পার্কিয়ের কোন জায়গা পাওয়া গেল না কিন্তু পরিক্ষার্থীর ফোন এলো সে চিনতে পারবে না। আমাকে আসতে হবে। এমতাবস্থায় কাটাবনে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে কোনমতে দৌঁড়িয়ে এসে এক রিকসা নিলাম কিন্তু দুভার্গ সে মোকারম হল চিনে না। তাই সরণাপন্ন হলাম কার্জন হলের। তারপর অবশেষে পাওয়া গেল মোকারম হল কিন্তু সময় একেবারে শেষ পর্যায়ে। অতি কষ্টে পরীক্ষার্থীকে হলে ঢুকিয়ে স্বর্স্থির নিশ্বাস নিলাম। আমার আমার মেয়েকে নিয়ে একটু বসলাম। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো রিকসা ভাড়া দেয়নি তাই আবার বের হয়ে রিকসা নিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছলাম এবং মেশিন থেকে টাকা তুলে রিকসা ওয়ালাকে আইসক্রিম এবং ১০০টাকা দিয়ে বিদায় করে রওয়ানা হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। আবারো পুলিশী বাধা এবং পরিচয় দিয়ে এবং আইডি কাড দেখিয়ে এ যাত্রায় হলের সামনে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। এবং গিয়ে হলের সামনে বসে রইলাম।
আগত মানুষের কাছাকাছি গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে মনোকষ্ট দুর করলাম। পরীক্ষা শেষে জানতে পারলাম ১০০নম্বরের প্রশ্নপত্রে ৯৯টি প্রশ্ন ছিল। এই ভুলের মাশুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেই নিয়েছে। তাদের ঘোষনা অনুযায়ী তারা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ১ নম্বর দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে। সবই ভাল এবং সততার লক্ষণ। আমার প্রশ্ন কি করে প্রশ্নপত্রে ভুল পরীক্ষার পরে কর্তপক্ষ জানতে পরে! পরীক্ষার আগে বা প্রশ্ন ছাপাড় সময় কি কেউ কোন প্রুফ দেখেনি? যদি দেখে থাকে তাহলে এই ভুলের দায় কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরং এর দায়ভার বর্তানে ছাপা এবং প্রুফ রিডার ও কম্পোজার গ্রুপ এর উপর। যার শাস্তি হওয়া প্রাসঙ্গিক এবং এই শাস্তি দেখে আগামী দিনে আর ভুল না হওয়ার নিশ্চয়তা মিলবে। দু:খজনক হলেও সত্য যে ফল প্রকাশিত হয়েছে এবং পাশের হার নগন্যাকারারে প্রতীয়মান হয়েছে। এই যদি হয় আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার পাসের হার তাহলে সচেতন অবিভাবক হিসেবে নিজেকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছু নেই। এখনও সময় আছে ছেলেমেয়েদের দিকে দৃষ্টিদিয়ে সভ্য ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার।
জগন্নাথ কলেজের পরীক্ষাও ঐ একই দিন সম্মন্ন হয়েছে কিন্তু ঐ পরীক্ষার হলে যাওয়া এবং হল থেকে বের হওয়া রীতিমত শীল-পাটায় মরীচ ভাটার দৃশ্য অনুরূপ মাত্র। আমার জীবনের প্রথম ও শেষ এক কঠিক অভিজ্ঞতা এটি। এত নৈরাজ্য, অসভ্যতা ও মুর্খ্যতা আর কোথায় হয় বলে আমার জানা নেই। অভিভাবক এবং অভিভাবক রূপী অসৎ চরিত্রের মানুষগুলো ঐ রাস্তাটিকে এমণভাবে মানব জটলায় আটকানো হয় যাতে করে পরীক্ষার্থী গেইট দিয়ে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অনেক পরীক্ষার্থীকে দেখেছি মরিচের মত নিষ্পেষিত হতে হতে কোনরকমে প্রাণে বেঁচেছেন। ঐ দৃশ্য দেখা এবং সৃষ্টির জন্য অবিভাবকদের ধীক্কার জানাই। করজোরে আহবান জানাই আগামীতে যেন সবই সুন্দরভাবে রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাড়ায় এবং পরীক্ষার্থী বের হলে যার যার সন্তান খুজে নেই। যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তারাই সবাই পরিণত বয়সের সুতরাং হারানোর কোন সম্ভাবনা নেই।
অপরদিকে প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই আপনার একটু সুন্দর ব্যবস্থা করবেন যাতে আগামী দিনে আপনাদের সুনাম বজায় থাকবে। উচ্ছৃঙ্খল অবিভাবকগণ সুশৃঙ্খল এবং নিয়মানুবর্তীতার শিক্ষা অনুসরণ করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খল নিয়মানুবর্তীতার মাধ্যমে আগামীর পথে এগিয়ে যাবে।