তাজুল ইসলাম॥ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বার্তা নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আজ শুক্রবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি এয়ার চায়নার একটি বিশেষ ফ্লাইটে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাঁকে বহনকারী চীনের বিশেষ বিমানটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় এসে পৌঁছালে সেটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে বিমানবাহিনীর দুটি জেট বিমান। বিশেষ ফ্লাইট থেকে বিমানবন্দরে নেমে এলে তাঁকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় একটি শিশু। এরপর তিনি অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে গার্ড অব অনার নেন ও গার্ড পরিদর্শন করেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি সরাসরি চলে যান লা মেরিডিয়ান হোটেলে। বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার আগে তিনি এই হোটেলটিতে অবস্থান করবেন। সি চিন পিং ঢাকায় ৭৯ সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে আছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর (সিসিসিপিসি) সদস্য ওয়াং হুনিং ও লি ঝানশু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জেইচি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মন্ত্রী সু সাউসি, অর্থমন্ত্রী লাউ জিউই, বাণিজ্যমন্ত্রী গাউ হুচেং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ঝাউ শিয়াওছুয়েন প্রমুখ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, সি চিন পিংয়ের সফরে ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এ সফর বন্ধুত্বের স্মারক এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করবে। সি চিন পিং তাঁর উন্নয়নকৌশল ও রূপরেখা ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ (এক অঞ্চল, এক পথ) বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চান। এই উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। তাঁর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে, তার একটি হবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নিয়ে। ‘এক অঞ্চল, এক পথে’ যুক্ত হলে সিল্ক রোড ফান্ড (এই উদ্যোগে যুক্ত দেশগুলোর জন্য চীনের সরকারি বিনিয়োগ তহবিল) থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
সফরসূচি:
আজ বেলা তিনটায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন সি চিন পিং। তিনি সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবেন। ওই বৈঠকের পাশাপাশি দুই নেতার একান্তে আলোচনার কথা রয়েছে। এরপর হোটেল লা মেরিডিয়ানে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা আলাদাভাবে দেখা করবেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা করবেন সি চিন পিং। পরে সেখানে তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। কাল শনিবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন সি চিন পিং। এরপর তিনি ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।