লালমনিরহাট প্রতিনিধি॥ মেডিক্যালে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি না হতে পারার শঙ্কায় আছেন লালমনিরহাটের অদম্য মেধাবী ছাত্র রায়হানুল বারী রাসেল। এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সারা দেশের মেধা তালিকায় ৫১৪ তম স্থান দখল করেন রাসেল। সে অনুযায়ী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। কিন্তু দিনমজুর বাবার সন্তান রাসেল ভেবে পাচ্ছেন না ভর্তির টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে।
রাসেলের বাবা দরিদ্র সাফিউল ইসলাম(৪১) বলেন, ‘রাসেল মেডিক্যালে পড়াশুনার করার সুযোগ পেয়েছে এটা খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু আমার এই আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। তাকে অর্থের অভাবে ভর্তি করাতে পারছিনা। আমি দিনমজুরের কাজ করি। স্ত্রী ও চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার! দিনমজুরের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। এরই মধ্যে রাসেলকে খুব কষ্ট করে অন্যের সাহায্য সহযোগিতা ও ধার-দেনা করে এতদূর পড়াতে পেরেছি। ছেলে মেডিক্যালে ভর্তি’র সুযোগ পেয়েছে কিন্তু অর্থই বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। ভর্তি করাতে পারবো কিনা, পড়াতে পারবো কিনা এমন নানা দুশ্চিন্তা আর শংকায় রয়েছি। হয়তো আপনাদের সহযোগিতা পেলেই আমি আমার ছেলেকে মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে পড়াশুনা করাতে পারবো।’
ভারতীয় কাঁটাতারে ঘেষা উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সারডুবি গ্রামের দারিদ্র দিনমজুর সাফিউল ইসলাম ও গৃহিনী রাফিয়া বেগম দম্পতির চার ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে রাসেল। ১০ শতক জমিতে কোনো রকম তোলা টিনশেড ঘরে বসবাস করে আসছেন তারা। দিনমজুর বাবার অভাব-অনটনের সংসার হলেও তাকে কোনো কাজে যেতে দেননি বাবা সাফিউল। কোনো রকম দু একবেলা খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের পড়াশুনা চালিয়ে নেন তিনি। এত কিছুর পরেও সন্তানদের মানুষের মত করে গড়ে তুলতে দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছেন বাবা সাফিউল।
রাসেল উপজেলার মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগ থেকে পিএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। সেখানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ভর্তি হন উপজেলার হাতীবান্ধা এস এস উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসিতে জিপিএ- গোন্ডেন ৫ পান। পরবর্তীতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সহযোগীতায় মিশন ইন্ট্যারন্যাশনাল কলেজ ঢাকায় পড়াশুনা করে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান। এরপর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পান রাসেল। তার বাবা সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের সাহায্য সহযোগীতা ও ঋন করে এতদিন পড়িয়েছি। এমনকি ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার সময় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা নিয়েছি। ওই টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারিনি। আর এদিকে ভর্তির জন্য টাকা লাগবে। কি করবো, টাকাই বা কোথা থেকে পাবো মাথা যেন কাজ করছে না।’
মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোয়াজেম হোসেন বলেন, ‘ রাসেল ছোট থেকেই মেধাবী। তবে গরীব বাবা মায়ের সন্তান হওয়ায় তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এতদুর আসতে। আজ সে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তার বাবা টাকার জন্য ভর্তি করাতে পারছে না। এই মেধাবী ছাত্র রাসেলের বাবা-মায়ের কষ্টে গড়া স্বপ্ন পূরন করতে আমাদের সমাজের মানুষই পারে এগিয়ে আসতে। আশা করছি রাসেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে সহৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন।’