আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ রোববার দ্বিতীয় নির্বাচনী বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর চাপ ছিল সকল কেলেঙ্কারি ঢাকতে দারুন ভালো করতে হবে। কিন্তু ফলাফল হয়েছে আরো উল্টো। উত্তেজিত হয়ে হিলারিকে জেলে ভরার ঘোষণা দিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন অনেক স্বতন্ত্র ভোটারের মনে। হয়ত রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের মতো একজন স্বৈরশাসক হওয়ার বাসনা নিয়ে আগাচ্ছেন ট্রাম্প। বিতর্কের পর রিপাবলিকান দলের ঐক্যর বদলে এখন ভাঙ্গনের সুর এতটাই প্রকট যে, তারা প্রেসিডেন্ট পদে জয়ের স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে অন্তত সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে মনোযোগী হচ্ছেন।
বিতর্কের একদিন আগে উইসকনসিনের এক জনসভায় হাজির হতে রিপাবলিকান শীর্ষ রাজনীতিবিদ পল রায়ান শর্ত দিয়েছিলেন সেখানে যেন ট্রাম্প না থাকে। বিতর্কিত যৌন হয়রানির অডিও টেপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর দুইদিন ট্রাম্প ঘর থেকে বলা চলে বের হননি, সেই জনসভায় যাননি। সেখানে পল রায়ান কোনো রাখঢাক না করে বলেছিলেন, একটি হাতি ঢুকেছে ঘরের মধ্যে, অস্বীকার করার উপায় নেই।
‘সত্যি কথা বলতে ঘরের মধ্যে একটা হস্তিসমতুল্য অবস্থা, এটা একটা মারাত্মক অবস্থা, বলতে দ্বিধা নেই’— বলছিলেন পল রায়ান। আর পেছনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা বড় করে নেতিবাচক শব্দ ‘বু’ দিচ্ছিলেন।
নির্বাচনী বিতর্কের পর সে বিষয়ে আরো খোলাসা করে বলতে গিয়ে রায়ান বলেছেন, ‘‘আমি আর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ডিফেন্ড করতে পারব না। আমাদের বরং যেটি অক্ষুন্ন আছে, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে নজর দিতে হবে এখন। দেখতে হবে যেন আমরা হিলারি ক্লিনটনের নেতৃত্বে যে সিনেট হচ্ছে সেখানে যেন তার ‘ব্লাঙ্কচেক’ বা অবাধে কাজ করার সুযোগ তৈরি না হয়।’’ এটাকে স্পষ্টই প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জয়ের আশা ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে বর্ণনা করছেন রিপাবলিকান বিশ্লেষকরা।
ফক্স নিউজের সিনিয়র উপস্থাপক বিল ‘ও রেলি বলছেন, ‘শীর্ষ রিপাবলিকান নেতৃত্ব কোনোভাবেই এখন আর বিশ্বাস করছে না যে তারা নির্বাচনে জিততে যাচ্ছেন। তারা যে গণহারে ট্রাম্পের তরী থেকে লাফ দিতে যাচ্ছিলেন সে অবস্থায় একটু ভাটা পড়বে রোববারের নির্বাচনী বিতর্কের পর, তবে সেটা ভাঙন রোধে যথেষ্ট নয়।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এগুলোকে কোনো পাত্তা দেন না। যৌন উত্তেজক কথাবার্তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর অন্তত ১০ জন শীর্ষ রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরে যেতে বলেছিলেন। হাউস স্পিকার পল রায়ানকে ট্রাম্পের স্থলে তার রানিংমেট মাইক পেন্সকে প্রার্থী ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিলেন। সেসময় প্রচন্ড চাপের মধ্যে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ’একপেশে গণমাধ্যম আর স্টাবলিশমেন্টরা চাইছে আমি যেন কেটে পড়ি, তবে সে সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট।’
আর বিতর্কের পর পল রায়ান যে মনোভাব দেখিয়েছেন তার উত্তরে ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘পল রায়ান সময় নষ্ট করছে, তার এসব বিষয়ে মাথা না ঘামালেই চলে।’
এর মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বিরোধ আবার চরমে পৌঁছাল, যখন নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ২৯ দিন। বলা হচ্ছে, এখন ট্রাম্পের নৌকায় আসলে বলার মতো কোনো যাত্রী নেই, সবাই নেমে পড়েছে।
দ্বিতীয় দিনের বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ আর যুক্তিনির্ভর বক্তব্য আশা করেছিলেন অনেক রিপাবলিকান। কিন্তু তিনি একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মতো নয়, ভবিষ্যত স্বৈরশাসকের মতো কথা বলেছেন বলে মনে করেন তারা।
‘এটা অসম্ভব রকম ভালো একটি বিষয় যে, ট্রাম্পের মতো কেউ আমাদের আইনশঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে নেই’ – রোববারের বিতর্কে হিলারি যখন এই মন্তব্য করছিলেন তখন ট্রাম্প মাইক হাতে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলেছিলেন, ‘কারণ, তাহলে তুমি জেলে যেতে।’
এর আগে ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে হিলারির ইমেইল কেলেঙ্কারি আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাকে জেলে নিতে একটি আলাদা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলছিলেন।
তার এই উত্তরের জন্যই হয়ত অপেক্ষা করছিলেন হিলারি ক্লিনটন, আর অপেক্ষা করছিলেন ট্রাম্পের কিছু উগ্র সমর্থক। কিন্তু মোটাদাগে এই উত্তরের মধ্য দিয়েই পরিষ্কার হয়েছে তিনি গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নন, রাশিয়ার পুতিনের মতো স্বৈরশাসক হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে চান। ফক্স নিউজের বিশ্লেষণেই যেটা আলোচনা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, রাশিয়া প্রশ্নে ট্রাম্প তার রানিংমেট মাইক পেন্সকেই অস্বীকার করে বলেছেন, ‘তার মতামত আমি মানি না। রাশিয়া আর সিরিয়া প্রশ্নে দু’জনের ভাবনা যে এক নয় সেটা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা এখনও কথা বলিনি।’ ট্রাম্পের রানিংমেট মাইক পেন্স সিরিয়া আর ইরাকে আইএস দমন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য রাশিয়া যেসব পন্থা অবলম্বন করছে সেগুলোকে বন্ধ করার কথা জানিয়েছিলেন। ‘তার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথা হয়নি এবং আমি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি’ -উপস্থাপক যখন মাইক পেন্সের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন তখন প্রকাশ্যে তার ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিমত স্বীকার করেন ট্রাম্প। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রুচিশীল শীর্ষ কনজারভেটিভ রাজনৈতিক মাইক পেন্স ট্রাম্পের যৌন উত্তেজক ভিডিও ফাঁসের পর তার পক্ষে সাফাই গাইতে রাজি হননি কোনো গণমাধ্যমে। এমনি বিব্রত অবস্থায় একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগদানও বাতিল করেছিলেন তিনি তখন। এসব দেখে মনে হচ্ছে, তার আর ট্রাম্পের মধ্যে দূরত্বটা প্রকাশ্য হওয়ার অপেক্ষায় এখন। এসএ/ডব্লিউএন