ইসরাত জাহান লাকী॥ জাতিয় পার্টির এই বিচিত্র রূপ একমাত্র হোসেইন মো: এশরাদকে ঘীরে। তার চারিত্রিক দৃঢ়তার উন্নতি ঘটলে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে থেকেই আরো শক্তিশালি হতে পারতো এবং জাতিকে দেখতে হতো না এই নড়বরে নেতার একনায়কত্বের দিশেহারা অস্থিতিশীল সিদ্ধান্ত। এবার নিজের বিশ্বস্ত সহচর বলে পরিচিত দলের মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদারের ওপর চটেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত কয়েকদিন ধরে এরশাদের সঙ্গে একান্তে দেখা করার একাধিক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। তাই জাতীয় পার্টিতে এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে আছেন দলটির মহাসচিব।
জাতীয় পার্টির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দলের নতুন কমিটিতে নিয়োগ বাণিজ্য, চেয়ারম্যানকে মিস গাইড করা, রওশন এরশাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি এবং একের পর এক বিদেশি ভিআইপির সঙ্গে সাক্ষাতের সিডিউল নিতে না পারার দায় নিয়ে সরে যেতে হতে পারে রুহুল আমিন হাওলাদারকে। যেকোনো সময় এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও ওই সূত্রটি দাবি করেছে। নতুন মহাসচিব হিসেবে জোর আলোচনায় চলে এসেছে দুজনের নাম। এ দুজনই বর্তমান সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত, তারা হলেন- দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু ও অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টিতে এখন উত্তাল অবস্থা। যেকোনো সময় রুহুল আমীন হাওলাদারের বিপক্ষে একাট্টা হতে পারে দলটির বড় একটি অংশ।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, দলের যে নতুন জাতীয় কমিটি হয়েছে তাতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯৯ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা। কিন্তু এই সদস্য সংখ্যা এখন পাঁচশ’র উপরে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরো সদস্য অন্তর্ভুক্তির পাঁয়তারা চলছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া সদস্যদের বেশিরভাগই রুহুল আমীন হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ এবং তার হাতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দলের চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে যার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়া গেছে তাকেই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পদবঞ্চিত নেতারা দলের চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়েছেন। এই পদ বাণিজ্যে জড়িত দলের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য, যিনি একসময় এরশাদের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বে ছিলেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের একজন প্রভাবশালী নেতা। পদবঞ্চিত নেতারা এরশাদ, রওশন ও জিএম কাদেরের কাছে নালিশ করেছেন। রওশন এরশাদের সঙ্গে রুহুল আমিন হাওলাদারের দূরত্ব অনেক পুরনো। এবার কমিটি গঠন নিয়ে তা আরো বেড়েছে। কমিটি গঠন নিয়ে রওশন এরশাদ রুহুল আমিন হাওলাদারকে আর কোনো ছাড় দিতে চান না বলে জানিয়েছেন রওশনের ঘনিষ্টজনেরা।
একইভাবে রুহুল আমিন হাওলাদারের ওপর বিরক্ত এরশাদের ভাই ও দলের কো চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও। যদিও এ বিষয়ে জিএম কাদের জানান, তিনি কমিটি গঠনের সময় অসুস্থ ছিলেন, তাই এই পুরো বিষয়টি ভালভাবে জানেন না। তবে কমিটিতে নেতৃত্ব চূড়ান্তকরণ নিয়ে টাকা পয়সার লেনদেন হওয়া এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা কেউ কেউ নিচ্ছেন এমন অভিযোগ তার কাছেও এসেছে বলে স্বীকার করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, কমিটির সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে গিয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ঢাকা সফরে এসে জাতীয় পার্টির কোনো নেতার সঙ্গে দেখা করেননি। তার সিডিউল না পাওয়াসহ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরের সময়ও একই ধরনের ঘটনার জন্য মহাসচিব হিসেবে অনেকটা দায় রুহুল আমিন হাওলাদারের ওপরই আসছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এরশাদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ, এক সময় গণমাধ্যমে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা সুনীল শুভ রায় বলেন, মহাসচিব সরানো না সরানো নিয়ে অহেতুক গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় কোনো রকম বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেনি। মহাসচিব পরিবর্তনেরও কোনো বিষয় নেই। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দলের চেয়ারম্যান তার ক্ষমতা বলে কমিটির পরিধি বাড়িয়েছেন। তবে সেটি এখনও পাঁচশত পার হয়নি। ‘এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কতজন’ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জানান, তা তাৎক্ষণিকভাবে তার মনে নেই। নেতাকর্মীরা তাহলে ক্ষুব্ধ কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা এসব বলছে তাদের আমার কাছে আসতে বলেন। তিনি অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এসব অসত্য। কোনো অভিযোগ নাই। কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হচ্ছে।