তাজুল ইসলাম॥ বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাসপোর্ট। কিন্তু পাসপোর্ট যে ভোগান্তি যা ভোক্তভোগী ছাড়া বোঝা এবং বলা কষ্টকর। আমার পাসপোর্ট করতে গিয়েই যে ঝামেলা তৈরী হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যদিও পাসপোর্ট পেয়েছি কিন্তু পেশা হিসেবে যেটা লিপিবদ্ধ করেছি এবং সাপেক্ষ প্রমান দিয়েছি সেই আলোকে পাসপোর্টে উল্লেখ নেই। যা দেখে মর্মামহ হলাম। যদিও আমি পদবির প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করি না। তবে অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এই সকল ভোগান্তির চির অবসান হউক তাই কামনা করি।
পাসপোর্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে গিয়ে যে তথ্য পেলাম তার আলোকেই বিস্তারিত তুলে ধরলাম। পাসপোর্ট সত্যায়ন এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া একটি স্বপ্নের হরিণের বা আমাবর্ষার চাঁদের মত। এই পক্রিয়াটি সুন্দর এবং স্বচ্ছ কিন্তু আমরা এটিকে অস্বচ্ছ করে অবৈধ লেনদেনের সুতিকাঘার হিবেসে প্রতিষ্ঠিত করছি। আসা যাক আগামীর বিস্তারিত পরিকল্পনায়। আগামীতে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর হচ্ছে। সেই সঙ্গে উঠে যাচ্ছে পাসপোর্টের সত্যায়ন। যে সত্যায়ন নিয়েই সাধারণ লোকজন পাসপোর্ট করতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। এ রকম একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেটি খুব শিগগিরই মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করার কথা রয়েছে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি পাস হলেই তা কার্যকর হবে।
আজ রোববার (১৬ অক্টোবর) পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর। যা খুবই অল্প সময় মনে করা হচ্ছে। যারা পাসপোর্ট নিয়েছেন, তারা পুনরায় রি-ইস্যু করতে আসেন।
তাই পাসপোর্টের বর্তমান মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ বছর করা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এ বছরের মাঝামাঝিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে পাসপোর্টে যে সত্যায়ন করা হয় সেটিও তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাসের জন্য পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় সেটি এখন যাচাই-বাছাই করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি পাস হলে পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছরের স্থলে ১০ বছর করা হবে এবং সত্যায়ন উঠে যাবে।
এ ব্যাপারে পাসপোর্টের মহাপরিচালক বলেন, সত্যায়নকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্টদের পকেটের টাকা হাতিয়ে নেয় এক শ্রেণির দালাল চক্র। চক্রটি অফিসের সামনে ঘুরে বেড়ায়। কোনো ব্যক্তি এলেই তাকে প্রস্তাব দেয় সিল যেখানে লাগে তারা করে দেবে। বিনিময়ে একেক জনের কাছে একেক রকম টাকা দাবি করে তারা। লোকজনেরও দরকার, বিধায় তারা সত্যায়নের জন্য টাকা প্রদান করছেন। কিন্তু সত্যায়ন উঠে গেলে ব্যাগে সিল নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে আর ঘোরাঘুরি করতে পারবে না দালালরা। তখন সাধারণ মানুষ এই ঝামেলাপূর্ণ কাজ থেকে রক্ষা পাবেন। অদূর ভবিষ্যতে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনও উঠিয়ে দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে সেই পর্যন্ত যেতে হলে সবার কাছে স্মার্ট কার্ড পৌঁছতে হবে বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, পাসপোর্ট করতে এসে সাধারণ মানুষ আগের মতো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। মোটামুটি দালালমুক্ত পরিবেশে সবাই পাসপোর্ট করে ঘরে ফিরতে পারছেন। তবে পুরোপুরি দালালমুক্ত হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। এরই মধ্যে ন্যাশনাল আইডি কার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে একজন মানুষকে সহজেই আইডেন্টিফাই করা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দালালরা বহিরাগত। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ৭০ জন দালালকে আটক করে ৩ থেকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এদের সংখ্যা ৮ থেকে ৯শ’র মতো। কাজেই জেল থেকে বের হয়ে কে কী করছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত আছে। অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকায় প্রায়ই কাউকে না কাউকে সাসপেন্ড করা হয়। রোববারও একজন কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত কিনা তা সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা যার যার আবেদন সে নিজেই জমা দিচ্ছেন। মানিক নামের একজন জানান, শুনেছি এখানে নাকি টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়। কিন্তু এসে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। কামাল নামে আরেকজন জানান, তিনি ফরম জমা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ছবি তোলার ডাক পেয়েছেন।
তবে রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা নাজমা নামের এক নারী জানান, তিনি টাকা জমা দেওয়ার ১০ দিন পার হলেও এখনো পাসপোর্ট হাতে পাননি। আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজ বলেন, যেখানে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে সেখানে দু-একটি অভিযোগ থাকতেই পারে। আর যে অভিযোগ করেছে তার কাগজপত্রে হয় তো কোনো সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া এ রকম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, পাসপোর্ট অধিদফতরের কাজের গতি বাড়াতে অফিস (অঋওঝ-অঁঃড়সধঃবফ ঋরহমবৎ চৎরহঃ ওফবহঃরভরপধঃরড়হ ঝড়ভঃধিৎব) নামে যে সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়, তার ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেকটি পৃথক আবেদন করা হয়েছে। এটি পাস হলে কাজের গতি অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। আগের ধারণ ক্ষমতা ছিল এক কোটি। কিন্তু এরই মধ্যে পাসপোর্ট হয়ে গেছে এক কোটি ৪৩ লাখ। ফলে এখন একজন নাগরিককে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট দিতে চাইলেও ওই ব্যক্তির তথ্য দিতে সফটওয়ারটি এক ঘণ্টার জায়গায় চার ঘণ্টা সময় নিচ্ছে। এতে এক দিনের জায়গায় চার দিন লেগে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান বলেন, এক কোটির জায়গায় তিন কোটির আবেদন করা হয়েছে। এটি (ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি) হলে পরবর্তীতে আর কোনো সমস্যা হবে না।
তবে ডিজির এই বক্তব্যকে অনেকেই সমর্থন না করে বলেছেন, দেশ যেভাবে উন্নত হচ্ছে, তাতে মানুষজন বেশি বেশি পাসপোর্ট করবেন। সেই অনুযায়ী ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে ৫ বা ৬ কোটি পাসপোর্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। সেক্ষেত্রে অফিসের ক্যাপাসিটি (ধারণক্ষমতা) পরবর্তীতে আরও বাড়ানো লাগতে পারে। তখন সরকারের আরেকবার ব্যয় হবে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।
অধিদফতরের চাপ কমাতে আর কী পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ঢাকায় চারটি নতুন কেন্দ্র চালুর জন্য এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এগুলো হলো সচিবালয়, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা পূর্ব এবং ঢাকা পশ্চিম কেন্দ্রীক।
ঢাকা পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট করতে পারবেন। আর ক্যান্টনমেন্ট ও সচিবালয় কেন্দ্রে স্ব স্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাসপোর্ট করতে পারবেন। তবে স্বশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও সন্তান-সন্ততিরা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রে গিয়ে পাসপোর্ট করতে পারবেন। এতে কাজের চাপ অনেকটা কমে যাবে। তখন আরো দ্রুত সবাইকে পাসপোর্ট দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।