ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ভারত-বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটের গেইট পাশের নকল রশিদ বানিয়ে বিপুল অংকের টাকা আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের অফিস সুপার আবদুর রব ভূইয়ার বিরুদ্ধে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সুকৌশলে ভূয়া রশিদ তৈরি করে নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে ইউএনওর শীল ব্যবহার করে এ টাকা আতœসাত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সীমান্ত হাট শুরু থেকেই গেইট পাশ বিক্রয়ের বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করা হলে বিরাট অংকের গাফলা বেরিয়ে আসবে বলে এলাকার সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা প্রশাসন ও সীমান্ত হাট সূত্রে জানা গেছে; সীমান্তের ২০৩৯ নং পিলারের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ এক একর ৫০ শতক ভূমি নিয়ে সীমান্ত হাট খোলা হয়। গত বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে এই হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের ১১ জুন থেকে সপ্তাহের একদিন এ হাট বসে। হাটে যাতায়তের জন্য ৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য বার্ষিক আইডি কার্ড ফি একশ টাকা এবং একদিনের জন্য পাশের রশিদ ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ বছরের ২৯ জুন দুই দেশের অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) পর্যায়ে বৈঠক করে বাৎসরিক কাড দুইশ টাকা এবং প্রতিদিনের পাশের রশিদ ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ কার্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অফিস সুপার আবদুর রব ভূইয়া স্বাক্ষর করে বিতরণ করেন।
সীমান্ত হাটের সাতটি বাজারে ক্রেতাদের যাতায়তের অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে; কসবা বিজিবি ক্যাম্পের তালিকা অনুযায়ী গত ১৬ অক্টোবর বার্ষিক আইডি কার্ড দিয়ে ৬৩ জন এবং একদিনের প্রবেশ রশিদ নিয়ে হাটে যাতায়ত করেছেন ১ হাজার ৪শ ২৫ জন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সুপার আবদুর রব ভূইয়া সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ৯শ ৯৮ জনের টাকা। এতে করে ৪শ ২৭ জনকে নকল রশিদ দেয়া হয়। ফলে ১২ হাজার ৮শ ১০ টাকা নির্ধারীত হিসেবে জমা করেন নি।
একই ভাবে ৯ অক্টোবর এক দিনের প্রবেশ রশিদ নিয়ে হাটে গিয়েছেন ১ হাজার ৫শ ২৫ জন। ওই সুপার সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ১ হাজার জনের। ২ অক্টোবর একদিনের প্রবেশ রশিদ নিয়ে হাটে গিয়েছেন ৫শ ৬ জন। সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করেছেন ৩শ ১৪ জনের। ২৭ সেপ্টেম্বর একদিনের প্রবেশ রশিদে হাটে গিয়েছেন ১ হাজার ৮শ ৩৬ জন। সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করেছেন ১ হাজার জনের। ২০ সেপ্টেম্ববর একদিনের পাশে হাটে গিয়েছেন ১ হাজার ৩শ ৯২ জন। সরকারি কোষাগারে টাকা জমা করেছেন ১ হাজার জনের। ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদের দিনে এক দিনের প্রবেশ রশিদে হাটে গিয়েছেন ৩ শ ২২ জন। সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ৩শ ৪০ জনের টাকা। ৬ সেপ্টেম্বর ঈদের আগের সপ্তাহে একদিনের প্রবেশ রশিদে হাটে গিয়েছেন ১ হাজার ৭শ ৫৭ জন। সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১ হাজার জনের টাকা।
বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) কসবা সদর হেডকোয়াটারের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মো. করিমুল হক বলেন; প্রতিটি সীমান্ত হাটের দিন বার্ষিক আইডি কাডর্ ধারী কতজন এবং একদিনের পাশের রশিদ নিয়ে কতজন ক্রেতা যাতায়ত করেন তার প্রতিটি হিসাব রশিদের ক্রমিক নং অনুসারে খাতায় বিজিবি কর্তৃক সংরক্ষন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা ইসলাম বলেন; তাঁর দপ্তর থেকেই বর্ডার হাটে যাওয়ার জন্য পাশ দেয়া হয়। এতে অফিস সুপার আবদুর রব ভূইয়া স্বাক্ষর করেন এবং আমার নামের সীল ব্যবহার করা হয়। তাঁর কার্যালয় থেকে ভূয়া রশিদ বানিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়টি শুনে তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। তিনি বলেন; ঘটনাটি প্রথম শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সীমান্ত হাটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী হাকিম মোহাম্মদ সামছুল হক বলেন; বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত অফিস সুপার আবদুর রব ভূইয়া বলেন; ৭টি হাটের হিসাব অনুযায়ী ৫ হাজার ৬শ ৫২ জনের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। তিনি কোন অতিরিক্ত রশিদ ছাঁপাননি বলে দাবী করেছেন। অতিরিক্ত রশিদ কোথায় থেকে এসেছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে প্রমাণ করেন।
এ ব্যাপারে ১২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে: কর্নেল শাহ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হতবাক হয়ে বলেন; তাহলে এখানেও দুর্নীতি ? তিনি এ ধরনের দুর্নীতি রোধে সীমান্ত হাটের প্রবেশ দ্বাওে প্রশাসন প্রবেশপত্র সরবরাহ করলে বিজিবি এর কাউন্টার পার্ট রেকর্ড রাখতে পারে বলে অভিমত পেশ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সকল অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া সহ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন অফিস সুপার আবদুর রব নিজেই বিপুল পরিমান প্রবেশ রশিদ তৈরি করে সরবরাহ করে আসছেন। তার সাথে একটি অসাধু চক্র জড়িত রয়েছে ।