কামরুজ্জামান রনি॥ বুবু,
আজ নাকি আমার জন্মদিন ? তাই বুঝি আজ কত কত জনের মুখে মুখে আমায় নিয়ে কতো কথা…. । আমি ওসব কিচ্ছু চাই না। যেদিন আমাকে ওরা মেরে ফেলেছিলো সেদিন কেন কেউ আসেনি ? আর একটি মাস পরের মাসে আমার ১২তম জন্মদিন হতো, আমি তো সেটাও দেখতে পাইনি।
বুবু জানো, আমি বারবার কান্না করে বলেছিলাম “আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি হাসু বুবুর কাছে যাবো…”। মহিত ভাইয়া আমাকে বলেছিলো, “না ভাইয়া ওরা তোমাকে মারবেনা”। এক অফিসার আংকেল আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে দোতলায় নিয়ে গেলো। জানো বুবু.. ওরা আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যায়নি। এক আংকেল আমার মাথায় পিস্তল লাগিয়ে গুলি করে দিলো, আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি বুবু কিন্তু আমি আর কাঁদতে পারিনি। বুবু.. যে মাথায় তোমরা সবাই হাত বোলাতে, যে কপালে তোমরা ভালোবাসার মমতা মাখা চুমু খেতে, ওরা আমার সেই মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিলো। আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছিলাম বুবু, কিন্তু আর কাঁদতে পারিনি।
যেদিন আমাকে মাটির বিছানায় একা শোয়ানো হলো, আমি বারবার তোমাকে খুঁজেছি। তুমি আর রেহানা বুু সেদিন কেন আসোনি? তোমরা জানো না আমি তোমাদের ছাড়া একা ঘুমাতে পারিনা। আমাকে মায়ের সাথেও ঘুমাতে দেয়নি। এই অন্ধকার ঘরে আমি একা ঘুমাই। এভাবে একা একা কত গুলো বছর পর একদিন তোমার কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি ঠিক বুজেছি ওটা আমার হাসু বুবুর আওয়াজ। তুমি সেদিন অনেক কেঁদেছিলে, আমিও তোমাকে একটি বার দেখার জন্য অনেক করে কেঁদেছিলাম । কিন্তু, এখন আমার কান্নার কোন শব্দ হয়না, এখন আমি কাঁদলে আমার চোখে পানি আসেনা।
হাসু বু, তুমি কেমন আছো ? আমার জয় মামা কেমন আছে ? আমি প্রায় প্রতিরাতে তোমার চাপা কান্নার আওয়াজ পাই। তুমি না আমাদের বড় বুবু ? বড়রা কি এভাবে কান্না করে ? কাঁদছি তো আমি, কিন্তু আমার সেই কান্না কেউ শোনে না। সেই ৭৫এর ১৫ই আগস্টেও কেউ আমার কান্না শুনেনি, সেই থেকে আমি আজো কান্না করি। আমি আজো বলি,”আমি মায়ের কাছে যাবো….”। এতো গুলো বছর আমি এই অন্ধকার মাটির বিছানায় শুয়ে আছি। বুবু আমাকে তুমি মায়ের কাছে নিয়ে যেতে পারো না ? একি বুবু তুমি আবার কাঁদছো ? তোমার নাম না হাসু ! তাহলে তুমি এভাবে কাঁদছো কেন ? হাসু বু তুমি কেঁদোনা। আমার লক্ষি বুবু।