কমরেড চৌধুরী॥ বাড়ি কোথায়? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গ্রাম তাই না ? ভাবনাটা যাদের এমন তাদের বলছি, ভাই/বোন একটু ধীরে… বেশি দূরে না, ঢাকা থেকে মাত্র ১০৫ কি.মি. দূরত্ব। ট্রেনে দুই ঘন্টা আর বাসে দুই ঘন্টা ৩০ মিনিট। একটু এসে দেখে যান আমাদের সাজানো গোছানো পরিপাটি শহরটাকে,বাংলাদেশের “সাংস্কৃতিক রাজধানী” ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে । ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিনতে কষ্ট হচ্ছে ? আপনি কি বাংলাদেশেই থাকেন ? আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একটি স্থল বন্দর, একটি নৌ-বন্দর এবং একটি রেল-জংশন আছে। বাংলাদেশের আর কোন জেলায় আছে কি এই তিনটা এক সাথে ?
বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ কি জানেন ? প্রাকৃতিক গ্যাস। “তিতাস গ্যাস” এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে। সেইটা আমার জেলায় উৎপাদিত গ্যাস । আচ্ছা ঢাকা তো বাংলাদেশের রাজধানী তাই না ? পুরো ঢাকার গ্যাস সহ সারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয় আমার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া খেকে। কিছু বুঝলেন? আরো আছে : দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আমার জেলাতেই। দেশের ইউরিয়া সারের বৃহত্তম শিল্প কারখানা আমার জেলাতেই । ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করে আমার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আমাদের গুনীজনদের কথা একটু শুনুন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম ফখরে বাঙ্গাল (রহ), সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ- উপমহাদেশর প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব , আলী আকবর খান- বিশ্ববিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী, ১৯৭১ এর ১ আগস্ট নিউইর্য়কের ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর অন্যতম আয়োজক মনমোহন দত্ত , মলয়া সংগীতের জনক, সুরকার শেখ সাদী খান-বাংলাদেশের সঙ্গীতের জাদুকর বলে অভিহিত করা হয় যাকে, সৈয়দ আব্দুল হাদী-পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী সঙ্গীত শিল্পী, মজিব পরদেশী, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত –পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপনকারী, অলি আহাদ – ভাষা সৈনিক, শেখ আবু আহামেদ ভাষা সৈনিক, ব্যারিস্টার আবদুর রসুল, প্রথম বাঙালী মুসলমান ব্যারিস্টার- আব্দুস সাত্তার খান, নাসার মহাকাশ গবেষক, ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। (এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে), অদ্বৈত মল্লবর্মণ -কথা সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক, কবি আল মাহমুদ- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর । খ্যাতিমান এই মহান ব্যক্তিদের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে, তারা সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুযোগ্য সন্তান। এখানেই শেষ নয়।আরো আছেন। সুবল দাস, বাহাদুর খান, কিরীট খান, ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ, আবদুল কাদির, আলী যাকের, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, মোরশেদুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা, সাগর জাহান, গোলাম সোহরাব দোদুল, মত এমন আমার নাম না জানা হাজারো দেশ বরেণ্য সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমার জেলার সন্তান। : বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামালের সমাধি ও রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইল গ্রামে।
জাতীয় চার নেতার একজন, ‘আব্দুল কুদ্দুস মাখন’ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই জন্মেছিলেন। মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসে ‘গঙ্গাসাগর’ ত্যাগের একটি নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধকালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, মন্দভাগ, নয়নপুর এবং সালদানদী এলাকায়। যেখানে কয়েকটি বধ্যভূমি সহ মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিসৌধ (কোল্লাপাথর) আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মিলন মেলা হিসেবে এ দেশের মানচিত্রে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত, তাই গর্ব করে বলি আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। সময় সুযোগ পেলে আমাদের জেলাটা একবার ঘুরে যাবেন …