বাআ॥ ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, তারই একটি রূপরেখা তৈরি করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আলাদা প্রস্তাবনা তৈরি করে জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে ‘২০৪১ সালে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই’ শিরোনামে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তবে ওই ইশতেহারে কী প্রক্রিয়ায় দেশকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছিল না। অবশ্য ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারসহ কিছু বিষয় সুস্পষ্ট ছিল। এদিকে সদ্যসমাপ্ত বিশতম জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সংশোধিত ঘোষণাপত্রেও ২০৪১ সালে উন্নত সম্পৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার থাকলেও সেখানেও কোনও সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। সম্মেলনের আগ-মুহূর্তে অনুষ্ঠিত বিদায়ী কমিটির সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে বিষয়টি আনা হয়নি। এটা আনতে হবে।’ মঙ্গলবারের বৈঠকে সব নেতার কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা চাওয়ার বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
লিখিত আকারে দেওয়া প্রস্তাবনায় যেন জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে মিল থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাদের কাছে উল্লেখ করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভিশন ২০৪১-এর কর্ম পরিকল্পনা তৈরির প্রস্তাব করেন। অধিকাংশ সদস্যই তার এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘২০২১ সাল আমরা কেমন বাংলাদেশ করব, তা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছি। আমরা সে অনুযায়ী কাজও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ২০৪১ সালে কেমন বাংলাদেশ গড়ে তুলব, তার কোনও রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সবাই লিখিত প্রস্তাব দিলে, সে অনুযায়ীই রূপরেখা তৈরি করতে পারব।’ লিখিত এ প্রস্তাব তার কাছে অথবা দলের অর্থ সম্পাদকের বরাবরে জমা দেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীও তাতে সম্মতি দিয়ে বলেন, ‘এটি ভালো পরামর্শ। আমাদের এটা করা উচিত। আমি চাই প্রত্যেকে আলাদা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে জমা দেবেন।’
অন্য একটি সূত্র জানায়, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রস্তাব করেন, ‘আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কর্মসূচি একেবারেই তৃণমূল পর্যন্ত কিভাবে পালন করা যায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজয় দিবস সর্বত্রই পালন করা হয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি বহু আগ থেকেই পালিত হয়। এটিকে নতুন করে সর্বস্তরের করার কোনও কারণ নেই।’ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সেখানে এই নতুন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকালে নতুন কমিটির প্রথম সভা বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ মুলতবি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সবাই সভা সূত্রে আরও জানা গেছে, ২৬ নভেম্বর শহীদ মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবাষির্কী পালন, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দলের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসময় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে দলটি।