বাআ॥ দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেছেন, পল্লীর জনগণ এখন উন্নয়নের বেশি সুবিধা পাচ্ছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, দেশের জনগণের আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলেই আমরা টানা দ্বিতীয়বারের মত দেশের শাসন ক্ষমতায় রয়েছি। এর আগেও আমরা ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। সমগ্র বিশ্বই বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ঈর্ষণীয় বলে উল্লেখ করেছে।’ তৃণমূল থেকেই দেশের উন্নয়ন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন হবে তৃণমূল থেকে…পল্লীর জনগণই এখন উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার টুঙ্গীপাড়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি শেষ না করে মূলতবি ঘোষণা করা হয়েছিল। যা আজ আবার অনুষ্ঠিত হলো। উল্লেখ্য, গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠিত হবার পর এটাই নতুন কমিটির সদস্যদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করি না। দেশ ও জনগণের কল্যাণেই রাজনীতি করি। আমরা চাই এদেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ক্ষুধার্ত থাকবে না, অশিক্ষিত থাকবে না, কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে তেমনভাবেই গড়ে তুলতে চাই, যেন আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে পারি’। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি উন্নয়নের রোল মডেল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জন্য আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে আর সে জন্যই দেশের আজ এই উন্নয়ন ও অগ্রগতি। পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর যেসব সেনাশাসকেরা দেশ চালিয়েছে তারা দেশের উন্নয়ন ও সাধারণের ভাগ্য পরিবর্তনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সেনাশাসকদের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘উপরন্তু এসব সেনা শাসকেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনেই অধিক সচেষ্ট ছিল…দেশের জন্য, মানুষের জন্য না ভেবে লুটপাট আর দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ভেবেছিল ক্ষমতা হল ভোগের বস্তু আর রাতারাতি এক একজন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ কখনই এটা করতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের কল্যাণ সাধনই এই দলটির কাছে মুখ্য। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। এ জন্য জনসম্পৃক্ততা দরকার। গণজাগরণ দরকার। এটা আমরা করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হবে। কারণ এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে মিডিয়াতে বিএনপি নেতাদের দাবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা মামলা করা হয়নি এবং এসব মামলা আদালতে চলবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কেউ কেউ ভীষণভাবে গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বলেন দেশ গণতন্ত্রহীন, দেশে গণতন্ত্র নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে- যাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে জন্মেরই কোন বৈধতা নেই এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক দলের জন্ম তাদের কাছ থেকেই এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গণতন্ত্র কখন ছিল? যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করা হয়েছিল তখন? যখন জিয়াউর রহমানের কারফিউ গণতন্ত্র ছিল তখন?’ তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি আমাদেরকে দলীয়ভাবে কাজ করতে হবে। দরিদ্র মানুষ কারা আছে তাদের তালিকা দলীয়ভাবেও করতে হবে। যারা দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত তাদের জন্য কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা এ সময় দৃঢ়কন্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।’ এজন্য সবাইকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য তিনি আহবান জানান।