ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী (পদাবিক) এর হিসাব রক্ষক মো: রুহল আমিন শাহীন কর্তৃক অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারচুপির মাধ্যমে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা আতœসাতের ঘটনা তদন্ত রিপোর্টে বের হয়ে এসেছে। তদন্ত কমিটি উপপরিচালক, বাপউবো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোরশেদ আলমের নিকট রিপোর্ট দাখিল করেছেন। রিপোর্টে আরো উল্লেখ রয়েছে হিসাব রক্ষকের নিয়মবর্হিভূত বিতরনকৃত ঋণের ৪৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা মাঠ থেকে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে বিআরডিবি’র সদর কার্যালয়ের এক আদেশে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরন, দুর্নীতি ও অর্থ আতœসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হিসাব রক্ষক রুহল আমিন শাহীনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে উপপরিচালক, বিআরডিবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, পদাবিকের হিসাব যাচাই কমিটির দলনেতা, বিআরডিবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর কার্যালয়ের সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: ফারুক-ই-আজম এর নেতৃত্বে সদর উপজেলার হিসাব রক্ষক (মউ) মো: আবুল বাশার ও হিসাব সহকারী (পদাবিক) মো: মিরজাহান মিয়া কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত রির্পোটে পদাবিকের হিসাব রক্ষক মো: রুহল আমিন শাহীন কর্তৃক ভূয়া সদস্যের নামে ঋণ দেখিয়ে টাকা আতœসাৎ, ঋণ বকেয়া রেখে ঋণ বিতরণ, ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত সুদ আদায় এবং তা ব্যাংক হিসেবে জমা না করে আতœসাৎ করেছেন। এছাড়া ভূয়া নামে স্বাক্ষর দেখিয়ে একজনকে একাধিক নামে অবৈধ ঋণ প্রদান, ঋণের এককালীন পরিশোধ দেখিয়ে অতিরিক্ত সুদ আদায়সহ নানা ধরনের ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে সুকৌশলে ৫৫ লাখ ৯২হাজার ৪শ ৭৮ টাকা আতœসাৎ করেছেন। তাছাড়া অনিয়মতান্ত্রিক এবং বিধি বর্হিভূত ঋণ বিতরণ করায় ৪৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তদন্ত রির্পোটে আরো উল্লেখ রয়েছে ২০০৫ সালে ও হিসাব রক্ষক রুহল আমিন শাহীনকে অর্থ আতœসাৎ ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে পুনরায় তিনি কসবায় বদলী হয়ে আসেন এবং ২০১০ সাল থেকেই এআরডিও (ভারপ্রার্প্ত) এর দায়িত্ব পালন করেন। বিআরডিবি’র সদর কার্যালয়ের স্বারক নং ৫০৫ তাং- ২৯-০৮-২০১২ মূলে হিসাব রুহল আমিন শাহীনকে শর্ত স্বাপেক্ষে এআরডিও’র দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তদারকির দায়িত্ব পালনে যে কোন ধরনের অনিয়ম ঘটলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে বলে অফিস আদেশে উল্লেখ হয়েছে। তাছাড়া হিসাব রক্ষক রুহুল আমিন শাহীনের স্থায়ী ঠিকানা কসবা পৌরসভার মরাপুকুরপাড় গ্রামে হলেও তিনি চাকুরীর দরখাস্তে চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় স্থায়ী ঠিকানা বলে ব্যবহার করেছেন।
অপরদিকে পদাবিকের মাঠ সংগঠক আবু সাঈদ, সাধনা রাণী দাস, অর্পনা রাণী বর্মন ও পরিমল চন্দ্র দাস পৃথক পৃথক ভাবে লিখে জানান হিসাব রক্ষক রুহুল আমিন শাহীনের অনিয়ম, দূর্নীতি, কারচুপি ও অর্থ আত্বসাতের ঘটনাবলী তদন্ত কর্মকর্তাদের নিকট দাখিল করেছেন।মাঠ সংগঠকগণ আরো জানান, এ পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা তাদের নিয়ে কোন মিটিং করেননি এবং কর্মসূচীর কার্যক্রমের কোন খোজখবরও নেননি। স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে হিসাব রক্ষক শাহীন পরিকল্পিতভাবে অর্থ আত্বসাতের সকল অপকৌশলের পন্থা অবলম্বন করেছেন।
অপরদিকে হিসাব রক্ষক শাহীন বিআরডিবি’র পল্লী প্রগতি প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে প্রকল্পের ঋণ আদায়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এনিয়ে অভিযুক্ত পদাবিকের হিসাব রক্ষক মো: রুহল আমিন শাহীনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপ-পরিচালক, বিআরডিবি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন বিআরডিবি’র সদর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।তিনি আরো জানান, দুর্নীতির দায়ে বরখাস্তকৃত হিসাব রক্ষক শাহীনকে নি¤œস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলেও সে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উল্লেখ, পদাবিকের হিসাব রক্ষকের অনিয়ম,দুর্নীতি ও অর্থ আতœসাতের ঘটনাটি দৈনিক ইত্তেফাক সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল।