সিলেট প্রতিনিধি॥ গত ১১ই নভেম্বর, দেওপাড়া গ্রামের নমসুদ্র পাড়ায় গিয়েছিলাম। নমসুদ্র পাড়ার যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির বেহাল অবস্থা দেখাতে, আমাকে সেদিন নিয়ে গিয়েছিলেন, গ্রামের মুরব্বি, বাসু কাকা। পেশায় তিনি মৎসজীবী। দূর-দুরান্ত থেকে মাছ ধরে বাজারে তা বিক্রি করতেন। জীবন-জীবিকা এখানকার সকলেরেই এক রকম। দিনারপুর পরগণার পাহাড়ি ছড়ার পানিতে, বছরের ১২টি মাসই প্লাবিত থাকে, নমসুদ্র পাড়ার এই সড়কটি। এই সড়কে উন্নয়নের কাজ কখনই হয়নি। গাড়ি তো দুরের কথা, ঠিকভাবে পায়ে হেটেও চলাচল করা যায়-না এখানে । বাসু কাকা, একটি রিক্সা জোগাড় করে, নিজে ঠেলে, সেদিন তার গ্রামে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সন্ধ্যায়, সিলেট থেকে ফেরার পথে খবর পেলাম- বাসু কাকা আর নেই। আজ সকালে, প্রচন্ড বুকের ব্যথায়, কাকা প্রয়াত হয়েছেন। খবরটা শুনেই মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেছে। কান্না পাচ্ছে এ কথা ভেবে: সেদিন সন্ধ্যায়, দেওপাড়ার গ্রাম থেকে যখন আমি ফিরছিলাম; পথে বাসু কাকা দাড়িয়ে ছিলেন।
সন্ধ্যার অন্ধকারে, কালো রঙের মুখটা বড় মায়াবী দেখাচ্ছিল। আমাকে বাসু কাকা বললেন;.’ আপনি আমাদের মা-জননী। নমসুদ্র পাড়ায়, আমাদের দু:খ দেখতে কেউ আয় না গো -মা। আফনে আইজ কষ্ট কইরা আইছেন। মা-জননী, আফনার কাছে একটা কথাই কই, মরার ফরে আমার লাশটা যেন শশ্মানে যাইতে ফারে, আফনে সেই ব্যবস্থাটা কইরা দেইন’।
গত ৩ দিন আগেও বাসু কাকার সাথে কথা হয়েছে, তখন আমি সিলেটে, বেশ ব্যস্ত । তাকে ফোনে বলেছিলাম, ’কাকা জানুয়ারীতে নমসুদ্র পাড়ার সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু করবো। চিন্তা কইরেন না’। কিন্তু হায়! মাত্র একটি মাসের ব্যবধানে, আমি পারলাম না; বাসু কাকার মৃত দেহটি একটি ভাল সড়কের উপর দিয়ে শশ্মান পর্যন্ত পৌচ্ছাতে। বাসু কাকা আমাকে ক্ষমা করবেন।