বাআ॥ সারাদেশে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ, ক্ষমতাবর্ধন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্পসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার ২২ হাজার ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে ৮ হাজার ৬৬৮ কোটি ১৮ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৫৮৫ কোটি ২ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ৬২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা যোগান দেয়া হবে।
রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, তা যদি ঠিকমত সঞ্চালন করতে পারি, তাহলে বিদ্যুতের অনেক অপচয় ও সিস্টেম লস কমে যাবে। একই সাথে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সক্ষমতাও বাড়বে। এ লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কেভি নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৪০০ কেভি বিদ্যমান সাবস্টেশন সম্প্রসারণ এবং ১৩২/৩৩ কেভির ৫টি সাবস্টেশন সংস্কার করা হবে।
পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ৩ হাজার ৭২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বাকী ৯ হাজার ৭০৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা চীন সরকারের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প ছাড়াও আজ একনেক সভায় গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন ও পুনর্বাসনের জন্য আরো দু’টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
এই দু’টি প্রকল্প হলো-বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একই এলাকায় যেন পিডিবি এবং আরইবির সংযোগ না থাকে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একই এলাকায় পিডিবি ও আরইবির সংযোগ থাকলে, তাতে প্রতিষ্ঠান দু’টির মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, এই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারাদেশে গ্রামীণ এলাকায় সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিদ্যমান বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ পাবেন।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। গ্যাস ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি এক্সপাশন-আশুগঞ্জ টু বাখরাবাদ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, এর ধরা হয়েছে ৫১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মুরাদপুর ২ নং গেইট ও জিইসি জংশন ফ্লাইওভার নির্মান (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়ীতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। টঙ্গী-কালিগঞ্জ-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক মহাসড়কের (আর০৩০১) শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু হতে পাঁচদোনা পর্যন্ত অংশ জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়