তাজুল ইসলাম নয়ন॥ আজ থেকে ৪৫ বছর আগের ঠিক ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের জীবনে এসেছিল। যা আজও আমরা স্মরণ করি এবং পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত করব। আর এই দিনকে যেভাবে স্বিকৃতী দেয় হয়েছিল। তা …. ”আজ ”আজ স্থানীয় সময় সকাল ৬:০১ মিনিটে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ রূপে শত্রুমুক্ত হয়। জয় বাংলা: বাংলার জয়। এই দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি গ্লানিকর পর্যায়ের পরিসমাপ্তিকে ইঙ্গিত করে। এই গুরুমুহুর্তে আমাদের চিন্তাজুড়ে রয়েছেন আমাদের জাতির পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সাড়ে সাত কোটি বাঙালী ও বিশ্বের সকল স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ এই বীর নেতাকে স্যালুট জানায় এবং তার দ্রুত মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে।
এটা একটি নতুন ও মহান জাতির শুরু। আমরা বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীকে শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। গভীরতম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বিদেশে আমাদের বন্ধুদের প্রতি। বাংলাদেশের এই জন্ম শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রমুখী আমাদের উদ্দেশ্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এক অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই খুশির দিনে এই শুভক্ষনে আমরা আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথেই আছি, যারা জাতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সেই সব অবাঙালী নাগরিক, যারা কিনা বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে পৈশাচিক অপরাধ সংগঠিত করেছে, তাদের উপর প্রতিশোধ না নিতে। বিজয়ের এই ক্ষনে আমাদের মহানুভব হতে হবে এবং ক্ষমাশীল হতে হবে আমাদের শত্রুদের প্রতি। আমাদের কর্মকান্ড ও আচরনেই বিশ্বের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য সম্পূর্ণ যোগ্য।
দেশের সকল নারী ও পুরুষের প্রতি আমাদের আবেদন একটি নতুন জাতি প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার, যার জন্য তারা ইতিমধ্যেই অপরিসীম কষ্ট ও ত্যাগ স্বিকার করেছেন। সত্যিকার অর্থেই এটি একটি অম্লমধুর বিজয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের জীবন দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, অগণিত মানুষ স্বিকার করে নিয়েছেন সীমাহীন ভোগান্তি। অগণিত বাসস্থান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো আজ ধ্বংসের দাড়প্রান্তে। এই সবকিছুই এখন প্রধান চিন্তাধারা, কিন্তু তন্মধ্যেও স্বাধীনতার স্পন্দনশীল বাস্তবতা যেন অনন্ত জাগ্রত অনুভূতি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৪৩ নং পৃষ্ঠা; শিরোনামঃ সম্পাঃ বাংলাদেশ
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ লিবারেশন সাপ্লিমেন্ট; তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১; অনুবাদঃ সৈকত জয়ধর; ছবিঃ Abbas Attar (মুক্তিযুদ্ধ ই- আর্কাইভ)।