যুগিশো পালশা, রাজশাহী প্রতিনিধি॥ স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও কেন অনাদর-অবহেলা আর গুরুত্বহীনতায় ভূগছে রাজশাহীর যুগিশো-পালশা গ্রামের ৪২জন হিন্দু শহীদদের গণকবর এবং তাঁদের পরিবার পরিজনেরা? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত গনহত্যার বিষয়ে একুশে (ঊঞঠ) টেলিভিশনের প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য একুশে টিম আমাকে ডেকে নেন তথ্য সংগ্রহে সহযোগীতার জন্য। রাজশাহী জেলার আমাদের দূর্গাপুর উপজেলার যূগিশো-পালশা শহীদ মিনারে একুশে টিমের সাথে আমরা উপস্থিত হই, সেখানে আমন্ত্রন জানিয়ে ডেকে নেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা পরমেশ বাবু, নিত্যানন্দ মাষ্টার এবং পালশা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার নিপেন্দ্রনাথ সাহাসহ ৭১ এর শহীদ পরিবারের স্বামী সন্তান হারানো অসহায় বিধবা ভুক্তভোগীদের। সেই দিনের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র এবং সেই নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী জনাব মো: সোলেমান আলী মোল্লা জানান, ১৬ই মে তারিখ ১৯৭১ সাল সকালে তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যানের ছোট ভাই এবং পার্শ্ববতী অঞ্চলের হিন্দু বিদ্দেষী একজন স্কুল শিক্ষকের যৌথ চক্রান্তে মুসলিমলীগ নেতা আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে উক্ত দুই গ্রামের যুবক শ্রেনীর হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে শান্তি কমিটি গঠনের নামে যুগিশো প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাজির করানো হয় । পরবর্তীতে সেখানে উপস্থিত ৪২ জন হিন্দুকে বেছে নিয়ে পাক সেনারা নির্বিচারে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা ক’রে যুগিশো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে মাটি চাপা দিয়ে চলে যায়। শহীদদের পরিবারের বিধবা স্ত্রী শিশু সন্তানেরা প্রানভয়ে জীবন রক্ষার্থে পাড়ি দেয় ভারতে।
শহীদ পরিবারগুলোর অধিকাংশরাই আমাদের নিকট আত্মীয়। দেশ স্বাধীনের পর তাঁরা সকলেই ফিরে আসেন বাংলাদেশে। সহায় সম্বলহীন জীবন যাপন শুরু করেন তাঁরা। অনাথ সন্তানদের পেটের ক্ষুধা নিবারণে ভিক্ষাও করেছেন তাঁরা! সেই সময়ে বেঁচে যাওয়া ছেলেদের মধ্যে কেও কেও ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনও করেছেন, পরবর্তীতে কারও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছে আবার কারও অজ্ঞাত কারনে আজও মিলেনি! অনেকের আজও জুটেনি সরকারী কোনো সহযোগীতা, এগিয়েও আসেনি কেও!! যুগিশো-পালশা গ্রামের সেই সময়ের নববধু বিধরারা আজও বেঁচে আছেন জীর্ণ শরীরে নিদারুণ কষ্টের জীবন নিয়ে। প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে বড় পীড়াদায়ক পরিস্থিতির অবতারণা হয় সেখানে। উপস্থিত জনতারা বলেন, বেদখল হয়ে যাওয়া শহীদদের বদ্ধভূমি ২০০৬ ইং সালে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদের বিশেষ উদ্দোগে ক্রয় করে শহীদদের গণকবর সংরক্ষনে যুগিশোতেই নির্মান করেন চার স্তম্ভ¢ বিশিষ্ট একটি সুদৃশ্য শহীদ মিনার। তারপর থেকে নাকি জাতীর ৪২ জন এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য নির্মিত সেই শহীদ মিনারটির সংরক্ষনে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহন করা হয়নি!!! জাতীয় দিবসগুলোতেও নাকি সেখানে আসেনা কেও!! ভূলেও ওদিকে ফিরে দেখেনা কেও।!! শহীদ মিনার সংলগ্ন এক বাড়ীর মালিক আলমগীর অভিযোগ করে জানান, উক্ত শহীদ মিনারটির লোহার দরজা ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার কিছু বিপথগামী ছেলেরা সকাল-সন্ধায় সেখানে এসে গাঁজা সহ বিভিন্ন প্রকার নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে এবং নিষেধ করলেও কথা শুনেনা। পরিদর্শনকালে শহীদ মিনারটির বেহাল ও অরক্ষিত দশা দেখে সকলে হতভম্ব ও হতাশ হয়ে যান। এই প্রজন্মের সন্তান হিসেবে আমরা করজোড় করে বিনয়ের সাথে সরকারের দায়িত্বশীলদের প্রতি মিনতি রাখতে চাই, ৭১ এর গণহত্যায় যুগিশো-পালশার শহীদ মিনারটি সন্মানের সাথে সংরক্ষন করা হোক এবং শহীদ পরিবারের অসহায়দের বিশেষ করে স্বামী-সন্তান হারিয়ে বেঁচে থাকা হতভাগা বয়স্ক বিধবাদের সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দেওয়া হোক।