কসবা(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি॥ কসবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মো. শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিকল্পিত ভাবে অভিযোগ এনে সংসদ কমান্ডারের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আবু ছায়েদকে কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়ার পায়তারার প্রতিবাদে শহীদুল্লাহসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা কসবা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। একজন নির্বাচিত কমান্ডারকে অবৈধ,অনৈতিক ও বিধি বহির্ভূতভাবে কমান্ডারের পদ থেকে অব্যাহতি দানের প্রক্রিয়াকে ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেলা কমান্ডার কর্তৃক নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর পক্ষে নগ্নতা বলে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা দাবী করেন।
গত মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমান্ডার মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, স্থানীয় কজন ইউনিয়ন কমান্ডারের দুর্নীতি ও ঋণ-ভাতা প্রদানে ঘুষ গ্রহণ করার অভিযোগে স্থানীয় ভাবে এসকল অর্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ফেরত দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ওই সকল মুক্তিযোদ্ধা ক্ষীপ্ত হয়ে জেলা কমান্ডারের নিকট উল্টো অভিযোগ করেন। কিন্তু জেলা কমান্ডার এসকল অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে এসে তদন্ত না করে অগণতান্ত্রীক ও বিধি বহির্ভুত ভাবে তড়িঘড়ি করে ডেপুটি কমান্ডার আবু ছায়েদকে দায়িত্ব নিতে লিখিত চিঠি দেন। তবে কমান্ডার শহীদুল্লাহ জানান তিনি এ বিষয়ে কোন লিখিত চিঠি পাননি।
কসবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাংগঠনিক কমান্ডার সুবেদার (অব.) অলেক ভুইয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন; কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কমান্ডার যথাক্রমে জাহাঙ্গীর আলম- বাদৈর ইউনিয়ন কমান্ডার, আলী আশরাফ- কায়েমপুর ইউনিয়ন কমান্ডার, আবদুল কাইয়ুম কুটি ইউনিয়ন শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে জেলা কমান্ডার হারুনুর রশিদের নিকট গত ৯ নভেম্বর পেশ করেন। জেলা কমান্ডার শহীদুল্লাহকে অভিযোগের কারণ দর্শাতে চিঠি দেন। শহীদুল্লাহ ২৮ নভেম্বর ওই চিঠির জবাব দিলে জেলা কমান্ডার বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত না করে ২৯ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে অগণতান্ত্রিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ডেপুটি কমান্ডারকে দায়িত্ব নিতে চিঠি দেন। অথচ এই ডেপুটি কমান্ডার আবু ছায়েদের সভাপতিত্বে গত ২৭ নভেম্বর কসবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ১০ জন কমান্ডারের মধ্যে ৭জন কমান্ডার ও ১৪ জন ইউনিয়ন ও সহকারী কমান্ডার উপস্থিত থেকে শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন। তারা বলেন ওই সকল অভিযুক্ত ইউনিয়ন কমান্ডারগণ মিথ্যা কথা বলে কিছু কিছু সহ-কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা থেকে জালজালিয়াতি করে স্বাক্ষর নিয়ে জেলা কমান্ডারের নিকট অভিযোগটি দিয়ে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা সহ-কমান্ডার সেলিম আক্তার, সহকারী কমান্ডার আজিজুল হক ও শহীদুল্লাহ’র পক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুস ছালাম বলেন, শহীদুল্লাহকে আমরা প্রায় ১৭শ মুক্তিযোদ্ধা গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। ৩/৪ জন মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা কমান্ডার যে অগনতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা কিছুতেই মানতে পারছি না। তিনি পরাজিত প্রার্থীর পক্ষে নগ্ন হয়ে পড়েছেন। আমরা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘৃন্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ডেপুটি কমান্ডার আবু ছায়েদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২৭ নভেম্বর তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কথা স্বীকার করে বলেন শহীদুল্লাহ’র প্যানেলে আমি নির্বাচিত হয়েছি। তিনি আরো বলেন শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহ ষড়যন্ত্র ও প্রতারণামূলক।
শহীদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান বাদৈর ইউনিয়নের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য মাননীয় মন্ত্রীর অনুদানকৃত ১ টন চাউল আত্মসাৎ করেন। শিকারপুর গ্রামের আক্কাস খানের স্ত্রী ও ডা: আবু ছালেহ’র স্ত্রীকে ঋণ নিয়ে দেবে বলে দুই হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। গত ২৬ মার্চের শহীদ পবিারের জন্য উপহারের অর্থ আত্মসাৎ করেন। তাকে উপজেলা কমান্ডের যৌথ সভায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কুটি ইউয়িনের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর ভাতা আত্মসাৎ করেন। সালিশ করে ওই টাকা ফেরত দিতে তাকে বাধ্য করা হয়। জনৈক আবদুর রহমানকে ভাতা দিবে বলে কাইয়ুম ছয় হাজার টাকা ঘুষ নেয়। মাইজখার আবদুর রসিদ থেকে একুশ হাজার ও ইদন মিয়া নামক লেশিয়ারা গ্রামের এক ব্যক্তি থেকে ত্রিশ হাজার টাকা ঘুষ নেয় মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেবে বলে।
বাইশার গ্রামের লাল মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য আরো দশ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে। কায়েমপুর ইউপির আহ্বায়ক আলি আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা দানু মিয়ার স্ত্রীকে বাড়ি বরাদ্ধ করে দেবে বলে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। বাড়ি বরাদ্ধ না পেয়ে টাকা চাইলে বলেন এক তালিকায় নাম তাই লোন হয়নি। কিন্তু আশরাফ এখনো ওই টাকা পরিশোধ করেনি। সোনালী ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দেবে বলে ওই পরিবার থেকে আবারো দশ হাজার টাকা গ্রহণ করে। শহীদুল্লাহ বলেন, এসমস্ত বিষয়ে এদের বিরুদ্ধে আমার শক্ত অবস্থানের ফলে এরা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর পক্ষ হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। প্রকৃত অর্থে তিনি ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার শিকার বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবী করেন।