১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাত থেকে শুরু হয়েছিল এই বিজয়ের হাসি-কান্না এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে কেউ যুক্ত হয়েছিল আবার কেউবা এর বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু চড়াই-উৎরাই পার করে চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল সেই ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরে। চুড়ান্ত বিজয়ের মহা নায়ক জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তাকে জানাই আমৃত্যু ছালাম এবং তাঁর অবর্তমানে তার সহযোগী জাতীয় চার নেতা সহ ত্রিশ লক্ষ শহীদদের; যাদের আত্মত্যাগেই আমরা পেয়েছি বিজয়। স্মরণ করি এমনি আরো সম্ভম হারানো ২ লক্ষ মা-বোনদের; যাদের ত্যাগও ভোলার মত নয়। আজকের দিনে বলতে ইচ্ছে করে— যদি যুদ্ধের আগে জন্ম হতাম তাহলেতো আমি আজ গর্ব করার একটি সুযোগ পেতাম। নয় মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সম্পর্কে শুনেছি মুক্তিযোদ্ধা দাদা/নানা/ চাচা/ বাবা/ শ্বশুর ও অগণীত আত্মীয় স্বজন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে বই পুস্তক এবং বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষন যার চুম্বকীয় আকর্ষণে জাতি জড়িয়েছিল যুদ্ধে এবং ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়।
বিজয়ী মুহুত্বকে ধরে রাখতে যখন মুক্তিযোদ্ধা এবং এর পক্ষের শক্তিগুলো ব্যস্ত; ঠিক তখনই এর বিরোধী যারা তারা আবার নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৫এর ১৫ই আগষ্ট জাতীর জীবনে নেমে আসে আরেক কলঙ্কময় দুর্যোগ। সেই থেকে আবারো বিজীত জাতীর সেই চেতনায় ভাটা পড়ে এবং দেশকে নিয়ে যায় ৭১এর ২৫মার্চ পুর্ববর্তী অধ্যায়ে। সেই ৭১পূর্ব ধারাবাহিকতায় দেশ পেছাতে শুরু করে যার মাশুল শুধু মুক্তিযোদ্ধা এবং এই চেতনায় বিশ্বাসীরাই উপলব্ধি করতে পরে। যাই হোক বাঙ্গালীর জন্য আশা এবং নিশ্চয়তা রয়েছে ঠিক বঙ্গবন্ধু পরিবারেই। তাঁরই কন্যা দেশের হাল ধরতে জীবন বাজি রেখে চড়াই-উৎরাই পার করে আসেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এবং শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনগঠন এর কাজ। যার বীজ ৭৫ পরবর্তী সময় লুকিয়ে এবং শুকিয়ে ছিল। বীজ আবার অঙ্কুরিত হতে থাকল। কিন্তু মাঝপথে আবারো বাঙ্গালীর রণে ভঙ্গ। আবারো স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় এসে দেশকে পিছনের দিকে নিতে শুরু করল। কিন্তু ততক্ষনে অঙ্কুরিত বীজ একটু একটু করে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে শুরু করলো এবং ক্ষমতার পালাবদলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে থাকল। এইমুহুর্তে যারা হিসেব কষছেন দেশ কতটুকু এগুলো এবং আরো কতদুর যেতে পারত। তাদেরকে বলছি নিজের আমলনামায় হাত দিয়ে দেখুন; নিজের কতটুকু উন্নতি হয়েছে এবং কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন নিজের উন্নতির সঙ্গে দেশের এবং এই দেশের মানুষের উন্নতির জন্য। আত্মোউপলব্দি এবং অনুশোচনায় খুজে বের করুন নিজেদের ব্যর্থতাগুলো।
বিজয়ের সেই ¯্রােত আবার শাখা-প্রাশাখার মাধ্যমে জেগে উঠল শেখ হাসিনার হাতে নিরুঙ্কুস সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতা দিয়ে। শেখ হাসিনা নিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের ফিরিস্তি নতুন আঙ্গিকে যুগোপযোগী করে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে। স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপ ধারন করে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আগামীর জন্য উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছার হাতছানি দিয়ে দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মহা আনন্দে উদ্বেলিত জাতি। কিন্তু এই উন্নতির পিছনেও রয়েছে অনেক চড়াই-উৎড়াই এবং সেই স্বাধীনতা বিরোধীদের নিলজ্জ থাবা। দেশকে পিছিয়ে নেয়ার জন্য এমন কোন জঘন্ন কাজ নেই যা বিগত বছরগুলোতে তারা করে নাই। কিন্তু ফল কি তা কিন্তু দেশবাসি তথা বিশ্ববাসী সবাই জেনেগেছে এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশনের কল্যাণে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাঙ্গালীদের গর্ব; আজ তিনি বিশ্ব নেতৃত্বে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। বিশ্ব নেতা হিসেবে বিশ্বের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। এই গর্ভ ধরে রাখার জন্য ঘর সামলিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে যাতে করে ঘরের শত্রু ভিভিষনদের আর উদ্বব না হয়। আওয়ামী পরিবারের মতভেদ ভুলে সকলের ঐক্যবদ্ধ মানব বর্ম নিয়ে এগিয়ে গেলেই লক্ষে পৌঁছা সম্ভব হবে।
এই বিজয় দিবসে বা বিজয়ের মাসে যেন আমাদের বিজয়ানন্দ শেষ না হয়ে যায়। বিজয়ের যে চেতনা তা যেন মুল ¯্রােত থেকে বিচ্যুত না হয়। এর জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ রাখতে হবে, সজাগ থাকতে হবে এবং যা পেয়েছি তা ধরে রাখার জন্য আরো ত্যাগ এবং হাসি-কান্নার রং মিশানো হাতিয়ার বা অবলম্বন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পিছপা হলে চলবে না বা ডিসেম্বর শেষে সবকিছু ভুলে গেলে চলবে না। যে জাতি তাঁর অতিত ইতিহাস ভুলে যায় তার অবনতি অনস্বীকার্য। তাই আমরা স্মরণ রাখবো আমাদের ইতিহাস, যে ইতিহাস পৃথিবীর আরো কোন জাতী বা দেশের নেই। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের, ২ লক্ষ্য সম্ভম হারানো মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়। যা পেয়েছি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। শহীদ বেদিতে ও স্মৃতিস্তম্বে ফুল দেয়া, পতাকায় নিজেকে জড়ানো এমনকি সোসাল মিডিয়াতে ফলাও করে নিজেকে প্রকাশ করার মধ্যে নিয়োজিত না থেকে বরং কাজ করতে হবে; এগিতে যেতে হবে; কথা ও কাজের সমন্বয় ঘটাতে হবে; প্রধানমন্ত্রীর যে পরিকল্পনা ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকায় নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সেই চেতনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ, সমর্থন এবং প্রতিবন্দকতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। নিজ স্বার্থ বিজর্সন দিয়ে সার্বজনীন স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যেমনিরূপে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রমান রেখেছেন সেইসকল জাতীয় বীরদ্বয়। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে পরের তবে। তাঁর জীবনী ও আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে গেলেই স্বপ্নের সোনার বাংলা খুব অচীরেই বিশ্বের বুকে স্থান করে নিবে উন্নত দেশ হিসেবে। এই বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গিকার এবং শপথ হউক তাই।