গোলাম আজীজ॥ আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য চারদফা সময় বৃদ্ধির পরও এই চিত্রে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের আইন না মানার প্রবণতার প্রমাণ মিলেছে। সরকার স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য নতুন করে সময় বৃদ্ধি না করলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য সময় আছে আর মাত্র ২০ দিন।
২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আগে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এই ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এ বলা হয়েছে, ‘এই আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হবার পূর্বে সাময়িক অনুমতিপ্রাপ্ত কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সনদ গ্রহণপূর্বক স্থায়ী না হইয়া থাকিলে এই আইন কার্যকর হবার পর উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধারা ৯ এর শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে সনদপত্র গ্রহণ করিতে হইবে।’
‘কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদপত্র গ্রহণ না করিলে উক্ত সময়সীমার পর সরকার উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতি বাতিল করে উহা বন্ধ করবে।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর একই বছর ‘রেড এলার্ট জারি’ করে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগই নেয়নি। পরে দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালে, চতুর্থ দফায় ২০১৫ সালের জুন এবং পঞ্চম দফায় ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এভাবে পাঁচ বার সময় বেঁধে দেওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও।
কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো সময় বাড়ানো হবে কীনা বা যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এর সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক।
স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলেও সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেনি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি।
আর স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়: আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (গ্রীন মডেল টাউন, মান্ডা ঢাকা), লিডিং ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি।
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি, তবে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, গ্রীন ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ধানমন্ডিতে ও তাদের নিজস্ব ভবন আছে), সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
জমি ক্রয় করলেও নির্মাণ কাজ শুরু করেনি যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় : স্টেট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া।
আইনে দায়মুক্ত জমির কথা উল্লেখ থাকলেও ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস রয়েছে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের : সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি। একাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও শান্তমারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় দুটি স্থানে স্থায়ী ক্যাম্পাস বিষয়ে ইউজিসিকে তথ্য দিয়েছে।
আর আইন অনুযায়ী জমি ক্রয় করেনি প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়। আর মালিকানা নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইবাইস ইউনিভার্সিটির। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ হেমায়েত হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে। আর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মীর শাহাবুদ্দীন বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাব। একই দিনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ।