টিআইএন॥ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য চার কমিশনারের মেয়াদ। নতুন কমিশন গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন ইসি নিয়োগের রূপরেখা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন মহল থেকেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে কীভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে তা নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতির ওপর। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কমিশনার নিয়োগের তালিকায় ইসির দুই কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ইসির অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী। অপরজন হচ্ছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান খান। তিনি পদোন্নতি পেয়ে কমিশনার হতে পারেন।
সূত্র জানায়, নতুন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাবনায় ইসির দুজন ছাড়াও একজন সাবেক জেলা জজ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। নতুন কমিশনার হিসেবে জেসমিন টুলীকে ইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও চাচ্ছেন। এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রথমত, ইসিতে তার মতো অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আর নেই (যদিও তিনি বর্তমানে অবসর-পরবর্তী ছুটিতে আছেন)। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনার হলে কাজের গতি বাড়বে। দ্বিতীয়ত, জেসমিন টুলীই ইসির একমাত্র কর্মকর্তা, যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নির্বাচন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছেন। সেখানে ভোটকেন্দ্র ভেঙে তছনছ করে ফেলা হলেও আবার ভোটকেন্দ্র স্থাপন করে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। আফগানিস্তানে তিনি জাতিসংঘের নির্বাচন প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেসমিন টুলী বলেন, ‘আমার তরফ থেকে তো কোনো অসুবিধা নেই। দায়িত্ব পেলে সঠিকভাবে পালন করব। সময়ই বলে দিবে কী হচ্ছে?’ ইসির অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান খান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি তেমন কিছু শুনিনি, তবে আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হবে আমি তা পালন করতে প্রস্তুত।’
সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চার নির্বাচন কমিশনার নিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের ইসি গঠনের বিধান রয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জন নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন। ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে বলেন, ইসি থেকে কোনো কর্মকর্তা কমিশনার হলে আমাদের জন্য ভালো। সবার কাজে আরো গতি আসবে। পরবর্তীকালে ইসির অন্য কর্মকর্তাদের কমিশনার হওয়ার সুযোগ থাকবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, নতুন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে আমরা কোনো প্রস্তাব রেখে যাচ্ছি না। আমাদের তেমন কিছু বলার নেই। আমি মনে করি, সবার মতামত নিয়ে রাষ্ট্রপতি কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় নামের সুপারিশ তৈরি করতে চার সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারককে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান। সে সময় ইসি গঠন নিয়ে ২২ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ২৩টি দলের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি। এ সংলাপে অধিকাংশ দলই সংবিধান অনুসারে সিইসি ও ইসি নিয়োগে আলাদা আইন প্রণয়ন বা অনুসন্ধান কমিটির পক্ষে মত দিয়েছিল। সার্চ কমিটির আহ্বানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি তখন তালিকা দেয়নি। কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচ পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্যে থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশের পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরদিন প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়েই তারা যোগ দেন ইসিতে।