টিআইএন॥ শুধু আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির দিকে নয় বরং আমাদের সরকারে দৃষ্টিও সমুদ্র অর্থনীতির দিকে। স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার এখন সমুদ্র সম্পদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নির্দিষ্ট হওয়ায় এখন সাগরের সম্পদ আহরণে সুবিধা হবে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রামে কোস্টগার্ডের নতুন দুটি জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ৮৭ মিটার লম্বা, সাড়ে ১০ ফুট চওড়া ও ১৩শ টন ধারণক্ষমতার এই জাহাজ দুটি ইতালি থেকে আনা হয়েছে। গত ২ নভেম্বর জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে বা নোঙ্গর করে। জাতীয় দুই নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদের নামে নৌযান দুটির নামকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দ নজরুলের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এম সালে উদ্দিন ও তাজউদ্দিন আহমেদের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এম হাসান তারিক মন্ডলের হাতে জাহাজ দুটির কমিশনিং ফরমান তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বেলা ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার করে চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটিতে পৌঁছেন। কোস্টগার্ডের একটি সুসজ্জিত দল এ সময় তাকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাহাজ দুটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানে কোস্টগার্ডকে সহায়তা করবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে রাষ্ট্রীয় সীমা যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়ায় আমরা বিশাল সামুদ্রিক অঞ্চল পেয়েছি। কাজেই আমাদের জলসীমায় আমাদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সমুদ্র বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও বঙ্গোপসাগরে যে অঢেল সম্পদের ভান্ডার লুকিয়ে আছে এই সম্পদেক অন্বেষণ, আহরণ ও সংরক্ষণ আমাদেরকেই করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নদী, সাগর, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অর্থাৎ ব্লু- ইকোনমিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়োজিতদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান, মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্র দূষণরোধে কার্যকরি পদক্ষেপসহ কোস্টগার্ড বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, চোরাচালান এবং অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধে কোস্টগার্ডের বার্ষিক সাফল্য আর্থিক মানদন্ডে হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। তিনি বলেন, ‘এই বাহিনীর সদস্যদের সততা, দায়িত্ববোধ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দূরদৃষ্টি ও কর্মদক্ষতায় উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ড এখন আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।’
জঙ্গি নির্মূলেও কোস্টগার্ডকে সচেষ্ট হতে হবে: সমুদ্র সীমার পাহারার পাশাপাশি উগ্রবাদী তৎপরতা নির্মূলেও কোস্টগার্ডকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো জঙ্গি রাষ্ট্র নয়। জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি আমরা গ্রহণ করেছি। জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের বর্তমান সরকার কোনো প্রকার ছাড় দেবে না। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে তাদের এখতিয়ারাধীন এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’ কোস্টগার্ডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোস্টগার্ডের জনবলের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমার জানা আছে। কোস্টগার্ডের কার্যপরিধি ও দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবল ও সমুদ্রগামী জলযানের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’