নজরুল ইসলাম, ডিএমপি নিউজ রিপোর্ট: অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা চালুর মধ্য দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দেয়ার নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হলো। এখন থেকে জনগণ ঘরে বসেই অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা পাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ১৫ জানুয়ারি ১৭ রোববার বিকেলে ‘অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সেবা উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ পুলিশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ আয়োজনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ টেলিকম অডিটরিয়ামে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক জনাব কবির বিন আনোয়ার। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত ডিআইজি (আইসিটি) ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন, এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি এ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সিনিয়র সিস্টেম এ্যানালিস্ট মোঃ আকতার আলী অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ এবং এটুআই প্রোগ্রামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চালুর ফলে বিদেশগামী বা বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকগণ দেশে বা দেশের বাইরে যে কোন স্থানে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে www.pcc.police.gov.bd ঠিকানায় অথবা বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে (www.police.gov.bd) গিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স মেন্যুতে ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনেও আবেদন করা যাবে। আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় দলিলাদি এবং সরকারী ফি পরিশোধের চালান স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। আবেদনকারীর ব্যক্তিগতভাবে থানায় আসার প্রয়োজন হবে না।
আবেদনকারী অনলাইনে তাঁর আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়মিত জানতে পারবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর, পুলিশ সুপার/উপ-পুলিশ কমিশনারের প্রতিস্বাক্ষর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন হওয়ার পর আবেদনকারী ব্যক্তিগতভাবে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় অথবা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের ওয়ান স্টপ সার্ভিস কাউন্টার থেকে হাতে হাতে গ্রহণ করতে পারেন। পাশাপাশি আবেদনকারী আবেদন করার সময় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে চান বলে উল্লেখ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কুরিয়ার ফি পরিশোধ সাপেক্ষে আবেদনকারী ঘরে বসে সার্টিফিকেট পেতে পারেন।
অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এটিতে একটি কিউআর কোড প্রিন্ট করা থাকে। যে কোন স্মার্ট ফোন থেকে কিউআর কোড স্ক্যানার এ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোডটি স্ক্যান করলে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের একটি অনলাইন লিংক পাওয়া যাবে। যে কোন ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে লিংকটি ভিজিট করলে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের একটি অবিকল ডিজিটাল কপি কম্পিউটারে দেখা যাবে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না এবং যে কোন বিদেশী মিশন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চালুর ফলে সেবা প্রত্যাশী জনগণের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। তারা হয়রানির শিকার হবেন না। এতে পুলিশের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। কবির বিন আনোয়ার বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ই-কমার্স, ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ করেছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। তিনি পুলিশি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চালুর উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে অভিহিত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে পুলিশ পিছিয়ে নেই। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পুলিশের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চালুর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানে পুলিশ আরও একধাপ এগিয়েছে। তিনি এ জনসেবামূলক কার্যক্রমটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবাটি গত ২০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে কুমিল্লা জেলায় এবং গত ১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নতুন সিস্টেমে প্রায় ১৪ হাজার আবেদন পাওয়া গেছে যার মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।