টিআইএন॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের অবদান বিশাল। এই শিল্পে শ্রমিক অধিকার, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মানসহ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বেতন কাঠামো, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, রীতিনীতি এবং শিল্পখাতে সহনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উচ্চতর মান অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ‘মূল বেতন ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্লোবাল ব্র্যান্ড এবং রিটেইলারদের সুপারিশের ভিত্তিতে ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানার সবগুলোর সমীক্ষা শেষ হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভার “শেপিং এ নিউ ওয়াটার ইকোনমি’’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
‘ওয়ার্ল্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট’র প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু স্টিয়ার-এর সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। তিনি বলেন, ‘এই খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন এবং তাদের ৮০ শতাংশই নারী। আমাদের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশই এই শিল্প খাতের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারখানাগুলো বর্তমানে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও কর্মচারীরা একসাথে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই শিল্পকে পরিবেশ বান্ধব করার জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮টি কারখানার এলইইডি সনদপত্র রয়েছে। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ স্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৭টি বাংলাদেশে রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দূষিত পানি শতভাগ শোধন এবং পানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ (ডব্লিউআরজি)- এর সাথে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “২০৩০ ডব্লিউআরজি’র সাথে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে-
১. দূষিত পানি পরিশোধনে বড় অঙ্কের অর্থের ব্যবস্থা করা, ২. দূষিত পানি পরিশোধনে আর্থিক ও অর্থ-বর্হিভূত প্রণোদনা দেয়া, ৩. সমগ্র বাংলাদেশে পানির ব্যবহারের লক্ষ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা, ৪. পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নত করা, ৫. পানি শাসনের জন্য বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।”
পানি সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল-এর একজন সদস্য হিসাবে তিনি বলেন, ‘২০৩০ ডব্লিউআরজি’র মতো উদ্ভাবনী অবকাঠামোর ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পানি সম্পদের সংকটের বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ গঠন করা হয়। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- ম্যাককিনসে এ্যান্ড কোম্পানি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের একটি কনসোর্টিয়াম: দ্য ব্যারিল্লা গ্রুপ, কোকা-কোলা কোম্পানি, নেসলে এসএ, নিউ হল্যান্ড এগ্রিকালচার, এসএবি মিলার পিএলসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং সিনজেন্টা এজি।
দেশের শিল্পায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানায় ‘এফ্লুয়েন্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বড় বড় গৃহনির্মাণ কোম্পানিকে বর্জ্য শোধনের জন্য যে কোন শিল্প স্থাপনের সময় ইটিপি নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তাছাড়া, পানি স্বল্পতা না থাকায় বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আদৌ কোন সমস্যা নয় বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষা ঋতু থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে আমরা যে পানি পাই তা সংরক্ষণ করা গেলে পানির কোন সমস্যা থাকে না।’ নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নদ-নদীতে পানি ধরে রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল খনন ও পুনঃখননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সকলের জন্য নিরাপদ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার উদ্ভাবনী শক্তির সন্নিবেশন ঘটিয়ে খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের খাদ্যশস্য আবাদের উদ্যোগ নিয়ে দেশের সার্বিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এমন জাতের সবজির চাষ হচ্ছে হচ্ছে যা উৎপাদনে পানির প্রয়োজন কম পড়ে।