আখের॥ বিএনপি নামায় উঠে এসেছে এযুগের রাক্ষুসের রাক্ষুসী নীতির হালচাল। হাওয়া ভবনের প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি করতেন মামুন আদালতে জবানবন্দি, হারিছের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এবং এক কোটি ৩২ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল-মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম এবিএম আব্দুল ফাত্তাহ তার খাস কামরায় মামুনের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন।
রেজা কন্সট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মোঃ আফতাব উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা তিনটায় তাকে হাকিমের খাস কামড়ায় নেওয়া হয়। বিকেল পাচটা পর্যন্ত টানা দুই ঘন্টা তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। এদিকে ধানমন্ডি ও কাফরুল থানার পৃথক দুটি চাদাবাজির মামলায় মামুনকে আবারও নয় দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পত্তির হিসাব জমা না দেওয়ার অপরাধে মামুনের বিরুদ্ধে দুদক আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে গতকাল। একই দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
১৬৪ ধারার জবানবন্দিঃ জবানবন্দিতে মামুন আদালতকে বলেন, হাওয়া ভবনের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ও তার লোকজন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে চাঁদাবাজি করতেন। বিএনপির সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির খোকন, তার সহযোগী ওবায়দুল কাদের সোহেল, তার ব্যাক্তিগত সহকারী কামরুজ্জামান, মাহবুব, হাবলু, মোটা তারেকের সহযোগীতায় এ চাঁদাবাজি চলত। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামুন জবানবন্দিতে রেজা কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে কীভাবে চাঁদার টাকা আদায় করেন সে বর্ণনা দেন। মামুন আদালতকে বলেন, তিনি ও তার সহযোগীরা ২০০৫ সালে জানতে পারেন রেজা কন্সট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দুটি সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে। ওই কাজের মূল্য সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। ২০০৫ সালের ২৪ জুন তিনি খান মোঃ আফতাব উদ্দিনকে ফোন করে দরপত্রের মোট মূল্যের ১০ শতাংশ চাঁদা দিয়ে ঐ কাজ করতে হবে বলে জানান। চাঁদার টাকা না দিলে তাকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন সাংসদ খোকন অন্যদের নিয়ে মহাখালির নিউ ডিওএইচএসে অবস্থিত রেজা কন্সট্রাকশনের অফিসে যান। সেখানে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাবকে মামুনের অফিস সিলভার টাওয়ারে আসতে বলা হয়। আফতাবকে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। মামুন আদালতকে আরও বলেন, তার লোকজনের সঙ্গেই আফতাব সিলভার টাওয়ারে আসেন। তার কাছ থেকে জোর করে এক লাখ ৩২ হাজার টাকার চেক স্বাক্ষর করে রাখা হয়। একদিন পর ঢাকা ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে চেক জমা দিয়ে টাকা তুলে নেয়া হয়।
দুই মামলায় রিমান্ডঃ রেজা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মোঃ আফতাব উদ্দিনের কাফরুল থানায় দায়ের করা আরেকটি চাঁদাবাজির মামলায় গতকাল মামুনকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা এ আদেশ দেন। কাফরুল থানার পুলিশ তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালের ২৭ জুন মামুন ও তার সহযোগীরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। পরে জোর করে নগদ ১৬ লাখ টাকা চাঁদা নেন। অন্যদিকে মীর জহির হোসেন নামের এক ঠিকাদারের দায়ের করা ধানমন্ডি থানার চাঁদাবাজির মামলায় মহানগর হাকিম শামছুল আলম পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। ধানমন্ডি থানার পুলিশ এ মামলায় সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের বিভিন্ন তারিখে বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। ৩ মার্চ ধানমন্ডি থানায় এ মামলা করা হয়।
দুদকের মামলাঃ নির্ধারিত সময়ে সম্পদের বিবরণ দাখিল না করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল-মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ ও সহকারী পরিচালক আকতার হামিদ ভূঁইয়া ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ দুটি মামলা করেন। বিচারক মোঃ মমিন উল্লাহ মামলা দুটি গ্রহণ করে হারিছ চৌধুরী ও মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। ১২ এপ্রিল পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেন। ১৮ ফেব্রুয়ারী দুদক ৫০ জন সন্দেহভাজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজের নামে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে তাদের পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে সশরীরে দুদকে হাজির হয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দাখিল করতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ওই ৫০ জনের বাড়িতে দুদকের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। হারিছ ও মামুন পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা ঐ নোটিশ গ্রহণ করেন। কিন্তু সম্পত্তির হিসাব দুদকে দাখিল করেননি। মামুনকে গ্রেপ্তার করা হলেও হারিছ চৌধুরী এখনো পলাতক। সম্পত্তির হিসাব দুদকে দাখিল না করলে তিন বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড হতে পারে তাদের। সূত্রঃ প্রথম আলো ৬ এপ্রিল-২০০৭