নুরুল ইসলাম সোহেল॥ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী। এই আভিজাত্যের বিপরীতেই গুলশান-বনানীর লেকের ওপারে, কড়াইলে বাস করে লাখ দুয়েক খেটে খাওয়া মানুষ। রাজধানীর গুলশান-বনানী লেক দিয়ে ঘেরা কড়াইল বস্তির বউবাজার নৌকাঘাট এখন নিশ্চুপ-নিথর। মৃদু তরঙ্গ বয়ে যায়, কিন্তু ওপারের ভদ্রপল্লী যেনো অনেক দূরে। যে ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পার হতো হাজার হাজার মানুষ, তারা এখন দিশেহারা।
এই জটিলতা বুঝতে একবার মানচিত্রে চোখ বোলাতে হবে। কড়াইল বস্তির বউবাজার ঘাট দিয়ে নৌকায় দুই টাকায়, মহাখালীর পারে যেতে সময় লাগে ৫ মিনিট। নৌকা বন্ধ থাকায় সেই গন্তব্য এখন ৪ কিলোমিটার দূরে। আর খরচ ৮০ থেকে একশো টাকা। আরো কয়েকটি ছোটঘাট দিয়েও নিয়মিত চলতো নৌকা। কড়াইলবাসীর আসা-যাওয়ার মূল বাহন নৌকা। নিরাপত্তা ইস্যুতে যা বন্ধ আছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বনানী থানা পুলিশ মৌখিক নির্দেশে এই নৌকা পারাপার বন্ধ করে দেয় প্রশাসনিক নির্দেশে। ফলে কয়েক মিনিটের দূরত্ব এখন চার কিলোমিটার দূরে।
কড়াইল বস্তির বউবাজার ঘাট থেকে গুলশান-১ নৌকায় পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। কড়াইল বস্তি থেকে বের হওয়ার অন্য পথ থাকলেও ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। কড়াইল বউবাজার থেকে বেলতলা ও টিঅ্যান্ডটি কলোনি পার হয়ে গুলশান যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও বেশি। রিকশা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। কয়েক মাসে ভেলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫টির ও বেশি । বর্তমানে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেকেই প্রতিটি ভেলায় দুইজন করে থাকে এদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। ড্রাম, কিছু ককসিট ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে ভেলা তৈরি করেছে। প্রতিট ভেলা তৈর করতে খরচ পড়ছে প্রায় ১ হাজার টাকারও বেশি । তাদের প্রতি খেপে ১০-১২ জন পাড় হয়, জন প্রতি ৫ টাকা করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা আয় হয় । তার মধ্যে প্রতিটি ভেলার মালিকে দিতে হয় খেপ প্রতি ২০ -৩০ টাকা করে। অন্যদিকে নৌ-পারাপার বন্ধ থাকায় অনেক মাঝি বেকার হয়ে পড়েছে। আগে প্রতিদিন ২০-২৫ খেপের মাধ্যমে যাত্রী পারাপার করে যাত্রী প্রতি ২ টাকা করে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় হতো প্রতিটি মাঝির । নৌকা চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এখন নতুন কোনো কাজ করার কথা ভাবছেন তারা । লেকবেষ্টিত কড়াইলের মানুষ এখন ভেসে বেড়ায়, ভেলায়। তাদের দাবি ফের নৌকা পারাপার চালু করে কষ্ট লাঘবের। লগি বৈঠার নৌকা এখন নিরাপত্তার হুমকি। তাই লেকের জলে অর্ধ্যডুবন্ত সাড়ি সাড়ি খেয়া।