টিআইএন॥ গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার রাজারবাগে পুলিশ লাইনস মাঠে এই সপ্তাহর উদ্বোধন করেন। পুলিশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পুলিশের কাছে গেলেই টাকা লাগে, ঘুষ লাগে। এই কারণে আমি সেই ভরসার জায়গাটা পাইনা”, বলছিলেন এক পথচারী। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন পরিচয় প্রকাশ না করবার শর্তে। তিনি ঢাকার তেজগাঁও থানার সামনে দাঁড়িয়ে অতি মনোযোগ দিয়ে একটি ফেস্টুন দেখছিলেন। ফেস্টুনে রয়েছে পুলিশের ছবি ও শ্লোগান।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে সোমবার চোখে পড়ে এ ধরণের ফেস্টুন, ব্যানার ইত্যাদি। আজ থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পুলিশের প্রশংসাই করেছেন, বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলা পরবর্তী সময়ে জঙ্গি দমনে পুলিশের সফলতার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।
পুলিশ এবার তাদের শ্লোগানেও জঙ্গি মাদকের প্রতিকার করবার অঙ্গিকার করছে। কিন্তু পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের কী ধারণা, তার একটি প্রতিফলন, প্রথমেই উল্লেখিত ব্যক্তিটির বক্তব্য। অনেকেই পুলিশের কথা শুনে ভয়ে কোন মন্তব্য করতেই রাজি হলেন না। একজন বললেন তিনি শহরে নতুন এসেছেন। আরেকজন বললেন, তিনি কোনদিন থানায় যাননি, তাই পুলিশের সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তাদের চোখেমুখে ছিল সুস্পষ্ট ভীতি। এটাকে অবশ্য একটি ভাল দিক বলে বর্ণনা করছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা। তিনি বলছেন, “কর্তৃপক্ষের একটা ভীতি যদি না থাকে তাহলে দুষ্ট লোকেরা ভয় পাবে না, সেটার দরকার আছে।
বাংলাদেশের পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট দূর করার জন্য প্রায় এক যুগ আগে জাতিসংঘের অর্থায়নে চালু হয়েছিল ‘পুলিশ রিফর্ম প্রোজেক্ট’ নামে একটি কর্মসূচী। এই কর্মসূচিটি গত বছর শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সর্বশেষ উপদেষ্টা ছিলেন মি. হুদা। বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন, জানতে চাইলে মি. হুদা বলেন, এটা নির্ভর করে অনেকটা নীতি নির্ধারকদের উপর। তিনি বলেন, বাহিনী যে আইন দিয়ে পরিচালনা করা হয়, সেটি ১৮৬১ সালের। যারা পুলিশকে পরিচালনা করেন, যে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ, তাদের মনোবৃত্তি কী, তারা কী চান, সেটাও দেখতে হবে। তারা কি এটা (আইন) সাফিশিয়েন্টলি পরিবর্তন করতে চান, সে প্রশ্নও করার সময় এসেছে, বলছিলেন নুরুল হুদা।
ফার্মগেটে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সাঁটা কিছু ফেস্টুনের সামনেই দাড়িয়েছিল দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা। তাদের একজন চালক বললেন, পুলিশ যদি ইচ্ছে করে যে এক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশকে সোজা করে ফেলবে, তারা পারে। কিন্তু তারাতো তা করবে না। সব অবৈধ তারা চালাচ্ছে….”। কথা বলতে বলতেই উত্তরার দুজন যাত্রীকে তুললেন তিনি। তাদের কাছ থেকে মিটারে যা উঠবে তার চাইতে কুড়ি টাকা বেশী দাবী করলেন তিনি। বললেন, এর দশ টাকাই তাকে দিয়ে দিতে হবে…. কাকে দিতে হবে, জানতে চাইলে বললেন, দেখেন কাকে দেই! তারপর আমার সামনেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের হাতে দশ টাকা গুজে দিলেন এই অটোরিকশা চালক। বললেন, তাকে টাকা না দিলে ওই জায়গাটিতে অটোরিকশা রাখতে দিত না। জায়গাটি একটি নো-পার্কিং জোন। চোখের সামনেই দেখলাম, কি অদ্ভুত দক্ষতায় অতি দ্রুত গতিতে টাকাটা লুকিয়ে ফেললেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একেবারে নিম্ন পর্যায়ের এই সদস্যটি।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগে বিদেশী নাগরিকদের। যারা বাংলাদেশী কর্মরত বা ব্যাবসার কাজে এসে ভিসার মেয়ার বৃদ্ধির আবেদন করেন তাদের। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে যারাই ভেরিফিকেশনে আসে তারাই ২ থেকে ৪ বা ৫ হাজার টাকা দাবি করে বসেন এবং টাকা আদায় করেই ছাড়েন। দুভার্গের বিষয় হলো সেই টাকা নিয়েও সময়মত রিপোর্ট দেন না। যা ভিসা জটিলতার আরেকটি জলন্ত উদাহরণ। রিপোর্ট যখন পৌঁছে তখন হয়ত ঐ বিদেশী দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় বা ক্লিয়ারেন্সের অভাবে ওয়ার্ক পারমিট কিংবা ভিসা দুটোই সমস্যা হয়। যারা টাকা নেন এবং কাজ করেন না এমন অনেক প্রমান যেমন আছে ঠিক তেমনি অনেক প্রমান আছে যারা টাকা ছাড়াই কাজ করেন। এহেন অবস্থায় শুধু মন মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী। কারণ সরকার যা করেছেন তার উপর ভিত্তি করে ঐ অসাধু পন্থা থেকে বের হয়ে আসার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
এখনই সময় আমাদের দুর্নাম ঘুছানোর এবং দেশ এবং বাহিনীর পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিমর্যাদা বৃদ্ধি করার। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। বেহেস্তের নিশ্চয়তা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার।