মৌলভি বাজার প্রতিনিধির তথ্যে ও চিত্রে রিপোর্ট করেছেন ডেইজি॥ শত চেষ্টা করেও বাংলাদেশী স্বামীকে সাথে নিতে না পেরে গত ২৮ জানুয়ারী হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন ব্রাজিল কন্যা সেওমা ভিজেহা। ৩১ ডিসেম্বর প্রেমের টানে বাংলাদেশী প্রেমিক কলেজ ছাত্র আব্দুর রকিবের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের হালিতলা (বারৈকান্দি) গ্রামে এসেছিলেন ৪৭ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান কন্যা ৩ সন্তানের জননী সেওমা ভিজেহা। ৩রা জানুয়ারী হবিগঞ্জের নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। পরে ৪ জানুয়ারী ইসলামী শরিয়া মোতাবেক ২ লাখ টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে উক্ত প্রেমিক যুগলের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে ২৯ দিন অবস্থান করে ব্রাজিল কন্যা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় ভীষন মন খারাপ স্বামী আব্দুর রকিবের।
সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ মাস পুর্বে নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের হালিতলা (বারৈকান্দি) গ্রামের আছকান উদ্দিনের ছেলে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল রকিব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্রাজিলীয়ান কন্যা সেওমা ভিজেহার নামীয় ফেইসবুক আইডির প্রোফাইল ছবিতে লাইক দেয়। জবাবে ব্রাজিল কন্যা তাকে সকল ছবিতে লাইক দেয়। উক্তরে বাংলাদেশী ছেলে রকিব ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যাসেজ দেয়। এর সুত্র ধরেই চলে তাদের মধ্যে ফোনালাপ। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
দীর্ঘ ৯ মাস ফোনালাপ, ভিডিও কলে যোগাযোগসহ ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিয়ে কথাবার্তা চলে আসছিল। এরই মধ্যে বাংলাদেশী ছেলে আব্দুর রকিব জানতে পারে ব্রাজিল কন্যার ব্যক্তিগত জীবন বৃত্তান্ত। উক্ত প্রেমিকা ব্রাজিল কন্যা সেওমা ভিজেহা একজন স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা। ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জননী। অবিবাহিত কলেজ ছাত্র রকিব এসব জানার পরও প্রেমের সম্পর্ক ধরে রাখে। প্রায় ৯ মাস প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে রকিবকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে ব্রাজিল কন্যা। এরপরও আব্দুর রকিব ও তার পরিবার বিশ্বাস করতে পারতো না ব্রাজিল কন্যা সেই সম্পর্ক রাখবে কি না। বাংলাদেশে আসবে কিনা। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৬ ইং সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রেমিক কলেজ ছাত্র আব্দুর রকিবের গ্রামের বাড়িতে চলে আসে।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যাক নারী-পুরুষ ব্রাজিলিয়ান কন্যা সেওমাকে এক নজর দেখার জন্য ভীড় করেন। তবে সেওমা ভিজেহা বাংলায় কথা বলতে না পারায় এবং বাংলা ভাষা না বুঝার কারনে আগত উৎসুক লোকজনের সাথে কথা বলতে পারেননি। মাঝে মধ্যে ইংরেজীতে কথা বলতো। তার কথাবার্তা বাংলায় অনুবাদ করে দেশের লোকজনকে বুঝাতো প্রেমিক রকিব। আবার এলাকার লোকজনের অনুভুতির কথা ইংরেজীতে বুঝাতো স্ত্রী সেওমাকে।
দীর্ঘ ২৯ দিনের ভিতরে মাধবকুন্ডসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ঘুরে দেখেন সেওমা। স্বামীর বাড়ির আত্বীয় স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। এরই মধ্যে প্রেমিকা স্ত্রী ব্রাজিলিয়ান মেয়ে সেওমা ভিজেহা তার প্রেমিক স্বামী কলেজ ছাত্র আব্দুর রকিবকে তার সাথে ব্রাজিল নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রাজিলিয়ান দুতাবাসে নিয়ে যান। কিন্তু আইনী জটিলতার কারনে স্বামীকে রেখেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্রাজিলিয়ান কন্যা বাংলাদেশী পুত্রবধু সেওমা। সে তার দেশে পৌছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানোর পর স্বামীকে ব্রাজিল নেওয়ার সকল কার্যক্রম করা হবে। গত ২৮ জানুয়ারী সকালে ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ব্রাজিল কন্যার সাথে দেখা করলে স্বামীকে বাংলাদেশে রেখে একা ব্রাজিল ফিরে যাওয়ায় তিনি খুবই হতাশা প্রকাশ করে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
সেওমা বলেন, জীবনের সব কিছু ভুলে গেলেও স্বামী রকিবকে কখনও ভুলবেন না। এদিকে স্ত্রী সেওমা ভিজেহা ব্রাজিল চলে যাওয়ায় স্বামী রকিবও ব্যকুল হয়ে উঠেছে। আব্দুর রকিব আমাদের প্রতিনিধিকে জানায়, যে মেয়ে আমাকে ভালবেসে সুদুর ব্রাজিল থেকে আমার কাছে ছুটে আসে তাকে কখনও ভুলতে পারবো না। সে খুব ভাল মেয়ে। তাকে খুব মিস করছি। আব্দুর রকিবের পিতা আছকান উদ্দিন জানান, তার পুত্রবধু সেওমা খুবই ভদ্র ও ভাল মেয়ে। প্রায় ২৯ দিন বাড়িতে থাকায় খুব ভাল লেগেছে। চলে যাওয়ায় মনটা খারাপ লাগছে বলেও তিনি দাবী করেন।