আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস বলেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংসদ কংগ্রেসকে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি কংগ্রেসের সশস্ত্র সেবা কমিটিকে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থা ইতিমধ্যেই ‘নানা দিক থেকে অভূতপূর্ব হুমকির সম্মুখীন হতে শুরু করেছে। ‘আর আমেরিকনাদের উচিত নয় চলমান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে যেমন আছে তেমন ভাবেই অব্যাহত রাখা। এই শৃঙ্খলা নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা এই ব্যবস্থাকে সৃষ্টি করেছি। ফলে এটি নিজে নিজেই টিকে থাকতেও সক্ষম নয়। আমরাই এতদিন একে টিকিয়ে রেখেছি। আর আমরা যদি এখন তা করা বন্ধ করে দিই তাহলে এই ব্যবস্থা বিশৃঙ্খলায় নিপতিত এবং পরিণতিতে ভেঙে পড়বে।’
অবসরপ্রাপ্ত এই মার্কিন জেনারেল ইরাক যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর তিনি সিআইএ এর প্রধোন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আর সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানানোর কথা ভেবেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন যে একলা চলো এবং সংরক্ষণবাদী নীতি অবলম্বন করছে এর বিরুদ্ধেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর পরিবর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়কাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়াব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে মিশন চালিয়ে আসছে তা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
পেট্রাউস বলেন, ‘বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা বৈশ্বিক মিত্রতার একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছি। এ ছাড়া মার্কিন সামরিক ক্ষমতার বলয়ে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি স্থাপিত হয়েছে। ‘ ‘বিশ্ব সমৃদ্ধির জন্য আমরা একটি উদার, মুক্ত এবং নিয়মভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আর তা করা হয়েছিল মূলত সেই সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে যার ফলে ১৯৩০ এর দশকের দারিদ্র্য এবং বিপ্লবী চরমপন্থার জন্ম হয়েছিল। আর আমাদের নিজেদেরকে সুরক্ষিত করার জন্যই আমরা এমন একচি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছিলাম যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগানো এবং সহযোগিতা করা। ‘
পেট্রাউস বলেন, ওই ব্যবস্থা নিখুঁত ছিল না। কিন্তু ব্যাপকভাবে সফল হয়েছিল। তিনি বলেন, রাশিয়া, চীন, ইরান এবং ইসলামী চরমপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু তা সত্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু আভ্যন্তরীণ।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প হারিয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ের কৌশলগত স্বচ্ছতাও হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এই বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে।