বাআ॥ সবাই সব কিছু পারে না। আবার যা পারে তা পারে। সাধনায় সিদ্ধহস্ত বাঙালি। শিরা উপশিরায় পরিণত সংস্কৃতির স্রোত। দুনিয়ার সঙ্গে লড়ে নোবেল প্রাইজ তোলে ঘরে। পরে, ভাবলে অবাক হতে হয়। কী করে পারল! রবীন্দ্রনাথের নোবেল লাভ কী সহজ ছিল। বাঘা বাঘা প্রতিযোগী। ইংল্যান্ডের টমাস হার্ডি, স্পেনের বেনিতো পেরেজ গ্যালডস, সুইজারল্যান্ডের কেয়ার স্পিটেলার, ইতালির গ্রাজিয়া ডেলেডা। ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, বেলজিয়াম থেকে উড়ে এল একের পর এক নাম। সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জটা জানালেন ফ্রান্সের এমিলে ফগেট।
পুরস্কার কমিটির সদস্যরা রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ বা ‘সং অফারিংস’ পড়ার পর অন্য কারও নাম ভাবতেই পারলেন না। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর সেই ঐতিহাসিক দিন। কমিটির ১৩ সদস্যের ১২ জনই ভোট দিলেন রবীন্দ্রনাথের পক্ষে। বিশ্বের সাহিত্য আকাশে উদিত হল নতুন তারকা। যাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ। আজও বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ হোক, বাঙালির রোল মডেল তিনি।
বাঙালির সাফল্যে আলো ফেলছেন উজ্জ্বল সেই ধ্রুবতারা, রবীন্দ্রনাথ। চরিত্র গঠন থেকে সৃজন, উন্নয়নের প্রেরণা তিনি। বিশ্বব্যাঙ্ক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল যখন একবাক্যে বলে- বাংলাদেশের জবাব নেই, উন্নয়নে তারা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে, তখন বাঙালি হিসেবে গর্ব তো হবেই।
অনেক বাঙালি মনে মনে অবশ্যই বলবে, এ আর বেশি কথা কী। বাঙালির সঙ্গে পারবে এমন সাধ্য কার। বিকাশ ত্বরান্বিত করেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। গণতন্ত্রের শিকড় শক্ত হওয়ার পর বিকেন্দ্রীকরণের পালা। গ্রাম গঞ্জের উন্নয়নে তদ্বির করতে আর ঢাকার সচিবালয়ে ছুটতে হয় না। সময় মতো নির্দিষ্ট জায়গায় অর্থ পৌঁছে যায়। টাকার অভাবে উন্নয়ন আটকে থাকে না। বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ বন্টন সহজ। পঞ্চায়েত, অঞ্চল পঞ্চায়েত, জেলাপরিষদ নিশ্চিন্তে পরিকল্পনা রূপায়ণ করে। বাংলাদেশেও একই ভাবে চলে উন্নয়নের কাজ। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলা পরিষদ বিলম্ব ছাড়াই উন্নয়নের কাজ চালায়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব সরকারি টাকা ঠিকঠাক খরচ করা। হিসেবনিকেশে যাতে কারচুপি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা।
কিছু মানুষ আছে সরকারি তহবিল হাতে এলে লোভ সামলাতে পারে না। সে টাকাকে নিজের টাকা মনে করে পকেটে পুরে ফেলে। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ দু’জায়গাতেই সেটা হয়। চুরির খবর কানে এলে বাঙালি হিসেবে লজ্জা হয়। এটা কী বাঙালিকে মানায়?
বাঙালি সাহিত্যিক, শিল্পী, কবি, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদ হতে পারে। বাঙালি চোর, মানা যায় কী করে। কিছু চোরের জন্য বাঙালির বদনাম মানতে নারাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাফ কথা, উন্নতি আর দুর্নীতি এক সঙ্গে চলতে পারে না। উন্নয়নের কাজে যাতে অনিয়মের ছায়াও না পড়ে সে দিকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দুর্নীতি দমনে ময়দানে দুর্নীতি দমন কমিশন বা ‘দুদক’। দুর্নীতির অভিযোগে তারা ১০ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়্যারমানকে গ্রেফতার করেছে। সারা দেশে ৪ হাজার ৫৫৪ ইউনিয়নে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গড়ার কাজ চলছে। এবার যেখানেই দুর্নীতি সেখানেই ‘দুদক’।
কিশোরগঞ্জের বাদলা, নোয়াখালীর ছাতারপাইয়া, নারায়ণগঞ্জের আলীরটেক, ময়মনসিংহের হবিরবাড়ি, নোয়াখালীর নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে কড়া শাস্তি। উন্নয়নের সাফল্য ঘুনপোকার মতো কুরে কুরে খেতে চাইলে ক্ষমা করা হবে না। ট্রেন বেলাইনের মতো বাঙালি নীতিভ্রষ্ট হলে বিপর্যয় অনিবার্য। বিশুদ্ধ চেতনায় বাঙালি জাতিকে গড়ার দায়িত্বও নিয়েছেন হাসিনা।