তাজুল ইসলাম॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বব্যাংককে মাফ চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ রোববার সংসদে অনির্ধারিত এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এর জন্য বিশ্বব্যাংককে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মাফ চাইতে হবে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
আনিসুল হক জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা নিজেরাই তদন্ত করতে চাইলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কথা উল্লেখ করে তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মিটিং করে সেই রাতেই তাঁরা বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের বাসায় কার কার সঙ্গে ডিনার করেছিলেন, তার বিস্তারিত আমার কাছে আছে।’ এ সময় সংসদ সদস্যরা ওই ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে বললে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বলব, বলব সবই বলব। আমার কাছে ডিটেইল আছে। এটা নাম বলার প্ল্যাটফর্ম না।’
সংসদে এ আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বিশ্বব্যাংক বাতিল করার পর দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ পেতে কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করেছিল অভিযোগ করে অর্থ আটকে দেয় বিশ্বব্যাংক। পরে তাদের শর্তে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল, যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন আবুল হোসেন। তারপরেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করেনি বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির সে সময়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক দায়িত্ব ছাড়ার আগে আগে ওই চুক্তি বাতিল করেছিলেন। তবে এই প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে গত শুক্রবার কানাডার আদালত বলেছেন, এই মামলায় কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুদকের এফআইআরে আবুল হোসেনের নাম নেই কেন জানতে চেয়েছিল বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল। ঝগড়াই প্রায় হয়ে গেল। বললাম, তদন্তে যা বেরোয়, তা-ই হবে। হঠাৎ শুনলাম কানাডায় মামলা হয়েছে।’ ওই ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা মামলা করতে পারবেন উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘আইনজীবীর কাছে গেলে তারা বলে দেবেন কোথায় অধিক্ষেত্র হয়। এখানে না ওখানে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ শেখ হাসিনার দৃঢ়চিত্ত দেখতে পেয়েছে। ঋণ ছাড়াই পদ্মা সেতু করতে পেরেছি।’
ফিরোজ রশীদ আলোচনার সূত্রপাত করে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ক্যানভাসে নেমে গেল, বলল দুর্নীতি হয়েছে। আইনমন্ত্রী আছেন। বিবৃতি চাইব। যারা ক্ষতি করল, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এত বড় ক্ষতির করল যাদের তাদের জন্য কি করণীয় আছে সেই ব্যবস্থা এখন করতে হবে। মান সম্মান এবং অর্থ সবই খুইয়ে মানুষগুলো এখন মৃতপ্রায় তাই তাদের সম্মান এবং যোগ্য স্থানে ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে সামনে চলার ব্যবস্থা করতে হবে।