টিআইএন্॥ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এতে কোনও সন্দেহ নাই। এ দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে যথাযথভাবে পালনের জন্য পার্লামেন্টে আমরা প্রস্তাব আনতে পারি। আমি মনে করি, আমাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে প্রমাণসহ দিয়ে প্রচার করবো। যাতে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বুধবার জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত জুনায়েদ আহমেদের ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড’ বইয়ের বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আলোচনার সূত্রপাত ঘটালে প্রধানমন্ত্রী এ ইস্যুতে কথা বলেন। বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী এই তথ্য বিকৃতির তীব্র নিন্দা জানান। তিনি এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানানোর ঘোষণা দেন।
এদিকে স্পিকার ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার প্রস্তাবের বিষয়ে সংসদে আলোচনা হবে বলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন জানান। তোফায়েল আহমেদ এই অনির্ধারিত আলোচনায় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানান।
বুধবার রাজধানীতে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একটি অনুষ্ঠানে বইটি দেখেছেন উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তোফায়েল আহমেদ বলেন, বইটিতে দেখলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদ সব কিছুর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বইটি ওদের আইএসআই এর ডিরেক্টর জেনারেল আমাদের হাইকমিশনে পাঠিয়েছে। আমি এর নিন্দা জানানোর জন্য দাঁড়িয়েছি। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘৩০ লক্ষ লোক শহীদ। সমস্ত ঘটনাকে ওরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কীভাবে?’ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বহুল প্রচারিত বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, গণহত্যার শিকার এক রিকশাঅলার মৃতদেহ পড়ে আছে। আর এই ছবিটাকেই তারা ক্যাপশন করে লিখেছে, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর ম্যাসাকার। হাজার হাজার ডেডবডি পড়ে আছে। মুক্তিবাহিনী হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে।’ এরকম আরও কিছু মিথ্যাচারের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
পরে বক্তব্য দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘২৫ মার্চ আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হলো। এর কিছুদিন পরে আমার মা, আমি আমার ভাই জামাল, রাসেল, রেহানা সবাইকে গ্রেফতার করা হলো। বন্দিখানায় থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে রেখেছে। দেশজুড়ে শুধু গণহত্যা না, রাজাকার আলবদর বাহিনী তাদের হাতে আমাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছে। যেভাবে গণহত্য করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাদের কথা ছিল এদেশের সবাই হিন্দু হয়ে গেছে, তাদের মারো। আওয়ামী লীগ খুঁজে বের করে শেষ করো। তাদের কথা ছিলো ’মানুষ চাই না মাটি চাই।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। নিজের চোখে দেখেছি। এগুলো নিজের চোখে দেখা। যে বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রেখেছিল ঠিক তার সামনের বাড়িটা, সেখানে মেয়েদের নিয়ে এসে রেপ করে। তাদের চিৎকার কান পাতলে শোনা যেত। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। ১৩-১৪ বছরের মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি ও তার দোসরদের নিরীহ বাঙালির ওপর চালানো বর্বরতার চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একেকটা পরিবার শেষ করে দিয়েছে। একেকটা গ্রাম শেষ করে দিয়েছে। প্রত্যেক মানুষ দেখেছে। এখন পাকিস্তান বই লিখে তাদের কৃতকর্ম, তারা যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেগুলোকে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের জন্য লজ্জার বিষয়। এই লেখার সাহস তারা কোথা থেকে পেল। এতবড় দুঃসাহস কোথা থেকে আসলো। বই ছাপিয়ে আবার পাঠায়। আজকে তারা গণহত্যাকে চাপাতে চায় মুক্তিবাহিনীর ওপর এটা কোনোদিনই গ্রহণযোগ্য না। তারা যে গণহত্যা করে অপরাধ করেছে তাদের মাফ চাইতে বলা হয়েছে। মাফতো চায়নি। উল্টো দোষ চাপায়। তাদেরকে ধিক্কার জানাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। সংসদ নেতার বক্তব্যের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ২৫ মার্চে গণহত্যা দিবস পালনের দাবি সম্বলিত একটি প্রস্তাব আমি ইতিমধ্যেই পেয়েছি। আমাদের একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি দিয়েছেন। আমরা অগ্নিঝরা মার্চের যেকোন একদিন সংসদের বৈঠকে আলোচনা করবো। এসময় প্রধনমন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্যরা টেবিলে চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। স্পিকার বলেন, মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যে প্রস্তাবটি দিয়েছেন, আপনার প্রস্তাব এবং সেই আনীত প্রস্তাব একই বিষয়ে। কাজেই এটার ওপর আলোচনা করবো।