আখের॥ নবম জাতীয় সংসদে উপস্থিত থেকেছি কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়দের কোন প্রশ্ন করিনি বা ৭১ বিধিতে নোটিশ দেইনি বা শুক্রবার ভোর বেলায় গিয়ে বেসরকারি দিবসের প্রস্তাবনার জন্য লাইন দেইনি এরকম সময় খুব কমই গেছে। প্রথমবারই দুটো মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হলো আমাকে; একটি হলো তথ্য মন্ত্রণালয়, আরেকটি হলো বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (এখন ঝপরবহপব আর ওঈঞ দুটো আলাদা করা হয়েছে)।
বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে একটা অন্যতম দীর্ঘ সেশন ছিলো ৯ম সংসদের প্রথম অধিবেশন। সংসদে তথ্য অধিকার আইন উত্থাপিত হলো। এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হলো আমাদের কমিটিকে। কমিটির প্রথম দিনের আলোচনা অনেক দীর্ঘ হবার পরেও কোন কূলকিনারা করা গেলো না। কমিটির সভাপতি তিন সদস্যের একটা সাবকমিটি করে দিলেন, তিনদিন সময় দিলেন। আমি হন্যে হয়ে ইংল্যান্ড, ভারত সহ আরও কয়েকটি দেশে যে দেশগুলিতে এই আইনটির ব্যাপক ব্যবহার আছে সেগুলি পড়া শুরু করলাম। এখানে একটু বলে রাখি, এই আইনটির মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের ফলে একটি বৃহৎ রাষ্ট্রে সংসদ সদস্য পদ চলে গেছে, মন্ত্রিত্ব চলে গেছে এবং সরকার তার গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়েছে এরকম ঘটনাও ঘটেছে। আইনটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বেশকিছু প্রস্তাবনা রাখলাম, প্রস্তাবগুলো গ্রহন হলো। ২০০৯ এর এপ্রিল মাসে আইনটি পাশ হলো।
আইনটি একেবার নতুন হওয়ায় প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো এটার বিষয়ে প্রথমে সকল সংসদ সদস্যকে বিস্তারিত জানানোর। জাতীয় সংসদ এবং সংসদকে শক্তিশালী করার জন্য যে সংস্থাগুলো সহযোগীতা করেন তারা প্রস্তাব করলেন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজনের। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো মূখ্য আলোচকের। ক্লাসরুমে যেভাব শিক্ষকরা কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রজেক্টরে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন সেভাবে প্রস্তুতি নিলাম। প্রথম আয়োজনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। আমিতো ভয়ে ভয়ে আছি কি ভুলভাল করে ফেলি বা বলে ফেলি। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আমার নাম ঘোষনা করলেন। আমি স্ক্রিনের সামনে প্রজেক্টরের পাশে বসেছি, রুমের আলো কমিয়ে দেয়া। আমি শুরু করতেই শ্রদ্ধেয় প্রধান অতিথি তাঁর পাশের একজনকে জিজ্ঞাস করলেন ‘এটা কি আমাদের এমপি ?’ হাঁ সূচক উত্তর পেয়ে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি শুরু করতেই তিনি এবার আমাকেই সরাসরি জিজ্ঞাস করলেন ‘তুমি কোন আসনের এমপি ?’ আমি উত্তর দিলাম। তিনি স্বভাবসুলভ ভংগীতে বললেন ‘আচ্ছা কও কও’। আমার উপস্থাপনা শেষে কিছু প্রশ্ন উত্তর দিলাম।
শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যা বললেন তা সারাজীবন আমার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি বলেছিলেন, ‘এতদিন ধইরা রাজনীতি করি, মাঝে মাঝে মনে হয়, আর হৈবনা। এখন মনে হচ্ছে, সুড়ঙ্গের শেষে আলো আছে। শেখ হাসিনা খুইজা খুইজা বাইর করছে। এই যে নতুন এমপি যেমনে কইলো, আমগো পড়াইলো। অবাক লাগলো। এইবার হবে। আমাদের রাজনীতি বিফলে যায় নাই’। ওনার চোখে অশ্রু দেখেছিলাম সেদিন। বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তদের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে আমাকে তাঁর সেইদিনের অভিব্যক্তি।