নজরুল ইসলাম॥ গ্রাহক পর্যায়ে একসঙ্গে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জুন থেকে গ্যাসের দ্বিতীয় দফা দাম বৃদ্ধির কার্যকরিতা ৬ মাস স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলাবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভোক্তা সংগঠন- ক্যাবের এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবকে এই রুলের ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।
ক্যাবের পক্ষে প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। আবেদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতার উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোক্তা পর্যায়ে দেড় বছরের মাথায় গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার। দুই ধাপে এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হবে। আগামী ১ মার্চ থেকে প্রথম দফা এবং পহেলা জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হবে। দুই ধাপে ৮ খাতে গড়ে ২২.০৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, শিল্পোদ্যোক্তা, বিভিন্ন চেম্বারের নেতারা সর্বোপরি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে এ দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।
মূল্যবৃদ্ধির ফলে বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এর ৮১ শতাংশ অর্থ যাবে সরকারি কোষাগারে। বাকি ১৯ শতাংশ অর্থ যাবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানির কোষাগারে। অন্যান্য কোম্পানির আয় দিয়ে সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।
মূল্যবৃদ্ধির ফলে আগামী ১ মার্চ থেকে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৮০০ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা গুনতে হবে গ্রাহকদের। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে দাম আরও বাড়বে। এ সময় থেকে দুই চুলার জন্য ৯৫০ এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা দিতে হবে। আগে এক চুলার জন্য ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা দিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক লাফে দাম বেড়ে গেছে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে যেমন বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক, সিএনজি ও গৃহস্থালিতে মিটার ব্যবহারকারীদের জন্যও একই হারে দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্যিকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ১১.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে হবে ১৪.২০ টাকা এবং জুনে ১৭.০৪ টাকা। সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা ও জুনে ৪০ টাকা দাঁড়াবে। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৮.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৮.৯৮ এবং ১ জুন থেকে ৯.৬২ টাকা হবে। বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম ২.৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চ থেকে ২.৯৯ টাকা ও জুন থেকে ৩.১৬ টাকা করা হয়েছে। চা-বাগানে গ্যাসের বর্তমান দাম ৬.৪৫ টাকা। ১ মার্চ থেকে এটা ৬.৯৩ টাকা আর ১ জুন থেকে ৭.৪২ টাকা করা হয়েছে। সার কারখানায় ২.৫৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ২.৬৪ টাকা এবং জুনে ২.৭১ টাকা করা হয়েছে। শিল্পে ৬.৭৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ৭.২৪ টাকা আর জুনে ৭.৭৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালি কাজে মিটার ব্যবহারকারীদের ৭ টাকার পরিবর্তে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১ মার্চ থেকে ৯.১০ টাকা এবং ১ জুন থেকে ১১.২০ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা আর এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। বিইআরসির আইন অনুযায়ী কোনো সংস্থা এক বছরের মধ্যে মাত্র একবার দাম বাড়ানোর আবেদন করতে পারবে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা দেয়। এ সময় বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আবদুল আজিজ খান, রহমান মুরশিদ, মিজানুর রহমান ও মাহমুদউল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
আজ এ নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করলো। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দফা দাম বৃদ্ধির কার্যকরিতা জুন থেকে ৬ মাস স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।