টিআইএন॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য বাইরের দেশের চক্রান্তে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল।” ২০০১ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপির কাছে হারের দিকে ইঙ্গিত করে গত শনিবার যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ পেয়ে ১৯৩টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি; তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী চার দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৭টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট পেলেও ৬২টি আসন নিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো চেয়েছিলাম আমার দেশের সম্পদ আগে আমার দেশের মানুষের কাজে লাগবে। আমার ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। তারপর, আমরা ভেবে দেখব বিক্রি করব কি, করব না। “ফলাফল কী? ওই যাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলে.. এখানে যে র’য়ের প্রতিনিধি, সে তো হাওয়া ভবনে (খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয়) বসেই থাকত। আমেরিকা অ্যাম্ব^াসির লোক, হাওয়া ভবনে বসেই থাকত। এই নির্বাচনটা.. ২০০১-এ সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে হারাবে, আর এখান থেকে গ্যাস নেবে।” এর আগেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তিনি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হননি বলেই ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছিল। তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এবং বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এই প্রথম তুললেন তিনি।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বলেছিলাম, গ্যাস পাবে না। আল্লাহ-তালাই গ্যাস দেবে না। বিক্রি তো দূরের কথা এবং তাই হয়েছে.. পায়নি, দিতে পারেনি।” প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই কথা বলছেন বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি, সফরে যেসব চুক্তি হবে তা যেন প্রকাশ্যে আনা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে শুনি, খুব ভারতবিরোধী কথা! আমার প্রশ্ন ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে যখন, আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইল ভারতের কাছে, ভারত গ্যাস কিনবে। ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা কে দিয়েছিল? এই খালেদা জিয়াই তো মুচলেকা দিয়েছিল.. দিয়েই তো ক্ষমতায় এসেছিল। আমি তো দেইনি। “কিন্তু, মুচলেকা তো দিয়েছিল। তাদের মুখে এখন এতো ভারতবিরোধী কথা!” ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্দোলন করলেন, ফারাক্কা পর্যন্ত লংমার্চ করলেন। আর ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গেলেন!” ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার প্রধান হিসেবে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময়ে গঙ্গার পানি নিয়ে কথা বলেননি খালেদা জিয়া। প্রসঙ্গটি মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, “দালালিটা করে কে ?”
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সব সময়ই ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে বলেও তারা অভিযোগ করে থকেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি করে। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি করে আওয়ামী লীগ। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভারতের সঙ্গে স্থলসীমা নিয়ে বিরোধের নিস্পত্তি করা হয়। ১৯৭৫ সালের পর জিয়া ও এরশাদ সরকার এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সরকার এই বিষয়গুলো নজরেই আনেনি বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “দালালি এমনভাবে ছিল যে, এটা উচ্চারণই করার সাহস পায়নি। তারা এত দেশপ্রেমী হলে এই কথা তোলেনি কেন?” জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছিল। তাদের যে নির্বাচনের ইতিহাস.. তাদের হ্যাঁ-না ভোট, তাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, এরপর সংসদ নির্বাচন, পরে ’৮১ (১৯৮১) সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে সেই ’৯৬ (১৯৯৬) সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, মাগুরা উপ-নির্বাচন, বিভিন্ন উপ-নির্বাচনের তথ্য যদি আমরা দেখি; এদেশে কবে, কখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা করেছে বা করতে পেরেছে। “তাদের ইতিহাসে তো তা নাই। তাদের ইতিহাসেই আছে ভোট কারচুপি, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা, অথবা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোটের রেজাল্ট ছিনিয়ে নেওয়া।”
যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বকে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতিবাচক কর্মকান্ড এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র সাধারণ নাগরিকদের কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণকে বোঝাতে হবে, আওয়ামী লীগকে কেন ক্ষমতায় দরকার। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।” যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা এবং যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকিয়া পারভিন মণি বক্তব্য রাখেন। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান শারমিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলীয় নৃত্য এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর কাউন্সিল অধিবেশনে নাজমা আক্তার ও অপু উকিল যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুননির্বাচিত হন।