জাগতিক মোহে কিংবা সুখের লোভে টাকার পিছে ছুটেনি কখনো। মানুষের মাঝে তিনি সম্মানীত। দিকে দিকে প্রশংসিত। গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে কাংখিত; কসবা আখাউড়ায় তথা সর্বত্ত সর্বাত্বক সংবর্ধিত। হাসি খুশি অমায়িক সর্বদা প্রাণোচ্ছল। জীবনের কল্পনায় মুখরিত, তিনি একজন আদর্শবান ব্যক্তি। সবার কাছে বিরল দৃষ্টান্ত; সামাজিকতা, রাজনৈতিক কিংবা শিক্ষার আলো ছড়ানোর জগতে এ.বি.সিদ্দিক ভাই জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্র ।
তুমি অমর, তুমি অবিনশ্বর, তুমিই আমাদের প্রেরনাদায়ী হার-না-মানা পথের পথিক।।
কিংবা যদি বলি………………কবির কথায়,
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা
মিটিয়ে দেব গো মিটিয়ে দেব লেনা দেনা
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
এ বি সিদ্দিক ভাইকে ২০১৪ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী তারিখে সমাহিত করা হয় সৈয়দাবাদ কলেজ পাড়া জামে মসজিত সংলগ্ন কবরস্থানে । তিনি ৩১শে জানুয়ারী, ২০১৪ ইং দিবাগত রাতে পরলোকগমন করেন। আমি তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ যেন উনাকে বেহেস্ত নছীব করেন।
এ.বি.সিদ্দিক ভাই যখন দেখেন কসবা- আখাউড়ায় কোন কলেজ নাই, বৃহত্তর কুমিল্লার শ্রীকাইল কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কলেজ ও ভিক্টোরীয়া কলেজ ছাড়া অত্র অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার মত কোন মহাবিদ্যানিকেতন নাই। আর ঠিক তখনি এলাকার যুবকদের নিয়ে কলেজ করার কাজে হাত দেন এবং উনার আর্থিক ও ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় ১৯৬৯ ইং সালে সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশ ঘেশা অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় স্থাপিত।
এ.বি.সিদ্দিক ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু (বর্তমান মাননীয় আইন মন্ত্রীর পিতা) সাহেবের ঘনিষ্ট সহচর, কসবা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সফল সভাপতি, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, কসবা-আখাউড়ায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে যারঁ রয়েছে দানের স্বাক্ষর, সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় (অনার্স কলেজ) এর সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিক্ষা অনুরাগী, দানবীর ও কসবা উপজেলা আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ।
-মৃত্যু মানে কেবলই একটা জীবনের ইতি, একটা শরীরে পরিসমাপ্তি। তা কখনেই সম্পর্কের শেষ নয়। বরং, মৃত্যুই এমন যা জীবিত থাকাকালীন অনেক চেপে রাখা সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। স্মৃতি চারণায় বিস্মৃতির সরণি বেয়ে হেঁটে আসে অনেক সুখ, দুঃখ, ভালোলাগা, অভিমান, উল্লাসের এক একটা মুহূর্ত। মৃত্যু এমনই যা মুখে কিছু না বলে চোখের জলে কথা বলিয়ে দেয়। চোখের জল আর কম্পমান ঠোঁট অনর্গল বলে দেয় মনের ভিতর চেপে থাকা এমন সব কথা যা, মানুষটি বেঁচে থাকাকালীন বলে ওঠা হয়নি। আবার এমনও হয় মানুষ কথা হারিয়ে ফেলে, খুঁজে পায় না সম্বিৎ। কখনও কখনও সমস্ত খারাপকে ভুলে গিয়ে কেবল মানুষটির ভালোলাগা, মানুষটিকে ভালোবাসার কারণ খুঁজতেও দেখা যায় স্মরণসভায়। তেমনি আমি আমার লেখায় স্বরণ করছি আমার প্রিয় বড়দা… সিদ্দিক ভাইকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঋতু বদলায়। পরিবর্তন হয় নামের। কিন্তু এমন কিছু নাম যা অজেয় হয়ে থাকে। নামের মৃত্যু হয় না। অ্যামি অ্যাকিলিস”, নিজের মৃত্যুর পর নিজের স্মরণে বলে গিয়েছিলেন অ্যাকিলিস, এমনটাই মিথ। আর তাঁর মুখাগ্নিকালে সেনাপতি কেবল একটাই বাক্য বলতে পেরেছিলেন, “আমার ভাই, তুমি শান্তি খুঁজে নিও”। যারা ট্রয়ের গল্প জানেন, তাঁদের এ গল্প অজানা নয়। তবে সবাই তো বীর হয় না, তাঁদের বীরগতিও প্রাপ্তি হয় না। তবে যারা বীর তাঁদের স্মরণে যে কথা সবাই বলে থাকেন, “সব মরণ নয় সমান”। ঠিক যেমনটা শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বলা হয়। যেমনটা বলা হয় শহিদ ক্ষুদিরামের জন্য। ‘বিপ্লবী’। আজকের কসবার ইতিহাসে আমি বলি এ.বি. সিদ্দিক ভাই তোমাকে।
মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রথম যা যা আমাদের সমাজ বলে থাকে, ‘ওর মৃত্যুতে দূঃখ হচ্ছে। এই ক্ষতি পূর্ণ হবার নয়’। এরপর, ‘স্বর্গদ্যানে শান্তি খুঁজে পাক ওর আত্মা’ ইত্যাদি। আরও এক অনুভব যা কেবল জীবিতকালেই নয়, মৃত্যুর পরও সদা চিরসজীব, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি এ.বি. সিদ্দিক ভাই। তাই তো নিজের মনের অজান্তেই নেঁচে উঠে …
নয়ন সম্মুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই….আমার প্রিয় পথপ্রদর্শক।
মৃত্যু রূঢ় বাস্তব। হঠাৎ এমন সত্যি সয়ে নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। মৃত্যুকে তো স্বাগত জানানো যায় না, তবে স্বাগত জানাতে হয় চরম সত্যিকে। স্মৃতিচারণা বা নীরবতা অথবা স্মরণে নিজেকে উপস্থিত থাকা এসবটাই নিজের মনকে স্বান্তনা আর মৃত মানুষটিকে ‘উপহার’।
সবশেষে এইটুকু প্রার্থনা আল্লাহর কাছে, হে আল্লাহ তুমি তাকে বেহেশত দান করিও, ভাল রেখ তাঁকে। ভাল থেক আমার প্রিয় বড়দা। মোঃ তাজুল ইসলাম (হানিফ), বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (রা.বি), এলএলবি; প্রভাষক- সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় (অনার্স কলেজ)।