যুদ্ধদলীল থেকে ইসরাত জাহান লাকী॥ একাত্তরের ২৭শে মার্চ হরতাল হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে পাকিস্তান টাইমস পত্রিকা থেকে জানা যায়ঃ “…২৫ শে মার্চের বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমান সৈয়দপুর, রংপুর ও জয়দেবপুরে “সাধারণ জনগণের উপর ভারী গুলিবর্ষণের” প্রতিবাদে ২৭ মার্চ সারা “বাংলাদেশে” সাধারণ হরতাল আহ্বান করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা করেন যে, এ ধরনের “নৃশংসতা ও নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়া হবে না।” তিনি বলেন, “সৈয়দপুর, রংপুর ও জয়দেবপুরে সেনা অভিযানের ঘটনা শুনে আমি স্তম্ভিত। সাধারণ জনগণের উপর ভারী গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক নৃশংসতা চালানোর সংবাদ পাওয়া গেছে। পুলিশকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ক্রমাগত ভারী গুলিবর্ষণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, দেশের গভীর রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ঢাকায় অবস্থানকালীন এসব ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “অবিলম্বে এসব সেনা অভিযান বন্ধ করার জন্য আমি তাকে আহ্বান জানাচ্ছি।” তিনি আরো জানান, “এ ধরনের নৃশংসতা ও নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়া হবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, “বাংলাদেশের” বীর সন্তানেরা তাদের লক্ষ্য অর্জনের, তথা “বাংলাদেশের” মানুষের মুক্তির জন্য সকল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।”
নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ হরতালের আওতামুক্ত থাকবেঃ
হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, গাড়ি, ওষুধের দোকান, সংবাদমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের গাড়ি, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ।
আজ অপর এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব জনগণকে তাঁদের “অধিকার আদায়ের জন্য” চরম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
রায়েরবাজার এলাকা হতে আগত এক মিছিলকে উদ্দেশ্য করে শেখ মুজিব বলেন, “যদি অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের কাউকে আর প্রাণ দিতে হয়, এটাই হবে শেষ বার।”
তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যেভাবে একতা প্রদর্শন করেছে, তাতে কোন প্রকার শৈথিল্য চলবে না।
শেখ মুজিব বলেন যে, বাঙালিরা প্রতি বছর বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ দিয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, “মনে হয় যেন এসব দুর্যোগে প্রাণ দেয়ার জন্যই তাদের জন্ম হয়েছে।…”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্রের ২য় খন্ডের ৭৮৭ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে বলছি…