তাজুল ইসলাম (হানিফ):- আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পরিচয় কি ? আমি নির্দ্ধিধায় বলে দিব, তিনি জাতির জনকের কন্যা। আর এটাই তাঁর জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়। এতে কেউ অতৃপ্ত হয়ে বলতেই পারে, তিনি নিজেও তিন-তিনবার ধরে প্রধানমন্ত্রী, দীর্ঘ ৩৬ বছর দরে বাংলাদেশের একটি বৃহত রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং ইতিমধ্যেই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। শেখ হাসিনা একাধারে দল পরিচালনা করছেন, পালন করছেন রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব, আন্তজার্তিক পরিমন্ডলকেও সামাল দিচ্ছেন।
তাতে আমি ঐ ভদ্রলোকের কথা সায় দিয়ে তারপরও বলবো, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি জাতির জনকের কন্যাই। তাঁরচেয়ে অন্য যেকোন পরিচয়ই এ থেকে বড় হতে পারে না । ২০০৯ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। আমি তখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার্থী। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে খবর পেলাম সংসদ অধিবেশন পরিদর্শনের জন্যে একটা চিঠি আসছে সংসদবিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে। আনন্দে আতœহারা আমরা সকলেই। অতঃপর… মাস্টার্সের সব বন্ধুবান্ধব ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলীসহ সবাই একসাথে গাড়ী নিয়ে যখন ঢুকলাম সংসদের আঙ্গিনায়, এ ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মহান সংসদের ভেতরের চাকচিক্য পরিবেশ, মুগ্ধ করার মত লাইব্রেরী, দেশী বিদেশী পন্ডিতের লেখা বই, এম.পি মন্ত্রীদের পদচারনায় মন ভোলানো পরিবেশ, দেশের নাম করা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ অন্যান্যদেরকে খুব কাছ থেকে দেখা সত্যিই ছিল এক অসাধারন ভাল লাগা ।
আরও ভাল লাগছিল যখন স্বচোখে ও খুব কাছ থেকে দেখলাম দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যগণ তুমুল বিতর্কে লিপ্ত এ জাতির শিক্ষা খাত নিয়ে। যাহা দেখে আতœতৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল মন। মনের অজান্তেই ভেজে ওঠেছিল এখানেই তো গণতন্ত্রের সৌন্দয্য ! মাগরিব নামাজের পর সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালাময়ী ভাষণ ও ভাগ্নীতায় পুরো সংসদই নয়, মুগ্ধ যেন পুরো বাংলাদেশ।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না যে, জনগণের প্রতিনীধিরা জাতির মেরুদন্ড “শিক্ষাখাত” নিয়ে ভাবেন, বুঝতে চান শিক্ষার মানগত, গুণগত কিংবা সংখ্যাগত উন্নয়ন চান সকলেই। সত্যি কথা বলতে কী, ঐ দিনের সংসদ পরিদর্শন অভিজ্ঞতা কোনদিন ভুলার নয়, ভুলবোওনা। অন্তরখানি এত তৃপ্ত ছিল যে ঐ অভিজ্ঞতাটা ভাবলেই ভাল লাগে। কিন্তু দুটি বছর যেতে না যেতেই হৃদয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয় । এ রক্তক্ষরণ কে বধ করিবে ? ঘটনাটি হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এম.পি ও বন্ধের জন্যে একটি প্রজ্ঞাপণ।
২০১১ ইং সালের ১৩ই নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপণ এর মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রালয় জানান যে, “শিক্ষামন্ত্রনালয়ের ১৩/১১/২০১১ ইং তারিখের প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ( স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারী অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত এমপিও নির্দেশিকা ২০১০ এ যাই থাকুক না কেন, পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এই আদেশ জারির পর হতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ( স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ) অতিরিক্ত শ্রেণীশাখা কিংবা বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে উক্ত শ্রেণীশাখা/বিভাগের বিপরীতে নিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বহন করতে হবে। তাঁদের বেতন-ভাতা সরকার বহন করবে না”।
আর এরই মাধ্যমে জাতির মেরুদন্ডকে ধবংসের ধাঁরপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়। আচ্ছা ! দুনিয়ায় এমন কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ কি খুঁজে পাওয়া যাবে ! যেকিনা বলবে অনার্স মাস্টার্স পাস করে শিক্ষা শিক্ষামন্ত্রালয়ের অধীন “এনটিআরসি” এর মাধ্যমে নিবন্ধন পাস করে এবং যথাবিহিত সাক্ষাৎকার ও বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিনা বেতনে চাকরী করে যাবেন বছরের পর বছর !!!
কিন্তু আমার ধারনা ও বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন বুঝতে দেওয়া হয়নি। জানানো হয়নি শিক্ষককে অভুক্ত রেখে কিভাবে শিক্ষা কার্যকম চালিয়ে নিবেন ! তবে, প্রায়শই শুনতাম মাননীয় সংসদ সদস্যগণ যাচাই বাচাই করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এম.পি.ও দেওয়ার ব্যাপারে জোড়ালো বক্তব্য রাখতে। কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয় যেন প্রায় অন্য গ্রহের কথা শুনাতেন। তাঁরা বুঝতে চাননি যে, দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা । শিক্ষাখাতকে সহজলভ্য করে জনগনের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার প্রধানশর্ত জাতি কে শিক্ষিত করতে হবে।
কিন্তু ঐ তাঁরা ভুলে গিয়েছিল যে এ জাতি পেল এক রাষ্ট্রনায়ক, এক জাতির জনকের কন্যাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, দেশনেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগী হয়ে পরপর ২২ টি কলেজকে সরকারীকরনসহ বেশ কিছু স্কুলকে সরকারীকরন এর মাধ্যমে জানান দিলেন, আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করছি, যে জনক শিক্ষার গুরুত্ত বুঝতে পেরে একটানা ৩৬,১৬৫ টি প্রাইমারী স্কুলকে সরকারীকরন করেন এবং একই সাথে প্রায় ১,৫৫,০২৩ জন শিক্ষককে সরকারীকরন করেন। আর “আমি” জাতির জনকের কন্যা করলাম ২৬,১৯৩ টি প্রাইমারী স্কুলকে সরকারী। শুধুই কি তাই !!!
আওয়ামীলীগ সরকারের ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারীকরনের লক্ষ্যে, ইতিমধ্যেই প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কলেজ ও স্কুলকে (যে সব উপজেলায় সরকারী স্কুল কলেজ নেই) সরকারীকরনের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। ২৭৫টি বেসরকারি কলেজের যাচাই বাচাই এর কাজ শেষে অর্থ ছাড়ের সম্মতিতে অর্থমন্ত্রনালয় একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষামন্ত্রনালয় বরাবর। বাকী স্কুল কলেজ গুলোকেও সরকারীকরনের কাজ একসাথেই চলছে ।
ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা ছাত্রীর মায়ের একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা এ যেন ডিজিটাল যুগের এক অপুরন্ত ভাল লাগা। এ জাতি গভীর আগ্রহে অধীর অপেক্ষা করছে আমলাতন্তের লাল ফিতার দৌরাত্বের কাঁটা থেকে মুক্ত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর দৃঢ়টাই ও দক্ষ্য নেতৃত্বে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরেই সকল উপজেলায় একটি করে কলেজ ও একটি করে স্কুল সরকারী ভাবে কার্জকম শুরু হবে। বাতিল হবে ২০১১ এর ১৩ ই নভেম্বর এর প্রজ্ঞাপণ!
বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত ডিগ্রী, অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকসহ স্কুল কলেজের সকল শিক্ষকের এম.পি.ও দেওয়া শুরু হবে। কেননা, এ কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যাই যে, ২০০৫ ইং সালের নিবন্ধনের মাধ্যমে পাস করে শুন্য ও সৃষ্টপদে নিয়োগ পাওয়া সকল শিক্ষকরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী যোগ্য। সুতরাং শুন্য কিংবা সৃষ্টপদের বৈষম্য সৃষ্টি হবে না । ইতিমধ্যেই বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয়করণে প্রক্রিয়াধীন প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ জনবল কাঠামোর আওতাধীন আসছেন।
সুতরাং যে জাতির নেতা শিক্ষাখাত উন্নয়নে নিতে চান, সে জাতির প্রত্যেকটি মানুষ তাঁর স্ব-স্ব অবস্থান থেকে বিবেকবোধ দিয়ে কাজ করে যাবে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, প্রবাসী, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকবৃন্দ তাঁর কাজটি করে যাবে দায়িত্ত্বশীলতার সাথে, এ যেন জাতির এক দৃঢ় প্রত্যয়। আজকাল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ও বলতে শুরু করেছে শেখ হাসিনার দৃঢ়টাই দেশ কিন্তু ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১৩ ই ফেব্রুয়ারী এটিএন নিউজে মুন্নী সাহার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ডাঃ জাফরুল্লাহ (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান) বলছিলেন “ শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ়টায়, সাহসিকতায়, রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় আজ তাঁর পিতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন”
একটি অনলাইন পত্রিকায় ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাক্ষাৎকারে বলছিলেন “ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ কিন্তু ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে, দেশ কিন্তু থেমে নেই”। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভি.সি প্রফেসর ডঃ আব্দুল খালেক স্যারের লেখা গত ২৪ ই জানুয়ারী, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় পড়লাম, তিনি বলছিলেন যে, বর্তমান সরকার গত আট বছরে শতকরা ৯৬ শতাংশ শিশুকে প্রাইমারী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছে এবং আট বছর আগে যেখানে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তির হার ছিল ৬১ শতাংশ, এখন প্রায় ১০০ শতাংশ,। তিনি আরও বলছিলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু একটি মধ্যম আয়ের দেশই হবে না, শিক্ষাক্ষেত্রেও আমার এই সোনামাখা দেশটি মধ্যমানের শিক্ষিত দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে।
স্যারের কথার রেশ ধরেই আমি বলে যাব, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যটুকু ও যেন ভাল ভাবে দেখভাল হয়। পন্ডিত “জন ডিউই” এর মতে, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য আতœউপলব্দি, প্লেটোর মতে, শরীর ও আতœার পরিপুর্ন বিকাশ ও উন্নতির জন্যে যা কিছু প্রয়োজন তা সবই যে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যে অন্তভুক্ত হতে হবে, সক্রেটিসের মতে, মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিস্কারই হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য, ফ্রোয়েলের মতে, সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য ও পবিত্র জীবনের উপলব্দিই হবে শিক্ষার মর্ম কথা।
সুতরাং যবনিকায় আমি বলতে চায়, উন্নয়নে ও গনতন্তে দেশ উন্নত দেশে পৌঁছবে যোগ্য দেশের যোগ্যনেতার নেতৃত্বে , বাঙ্গালী জাতির দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। বাঙ্গালীর হৃদয়ে ডিজিটালের স্পর্শ লেগেছে। আত্বতৃপ্তিতে আহলিত হচ্ছে প্রতিটি মানুষ। দিনরাত কাজ করছে ষোল কোটি মানুষের বত্তিশ কোটি হাত। এইতো আমার দেশ, এগিয়ে যাচ্ছে, যাক-না বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।
১৬ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখা যাবে না। জঙ্গী, গ্রেনেট কিংবা দুর্নাম করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়াও যাবে না, কেননা, যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ।