মোস্তাফা জব্বার, বেসিস প্রেসিডেন্ট॥ জেসমিন আক্তার ফাতেমা, চট্টগ্রামে ১০ বছর ধরে একমাত্র মহিলা রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফাতেমা খালা নামেই অধিক পরিচিত তিনি। সম্ভবত দেশের একমাত্র মহিলা রিকশাচালকও তিনি। স্বামী আরেকটি বিয়ে করে সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায় সন্তানদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নেন তিনি। রিকশা চালিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এই সাহসী নারী। অসংখ্য পুরুষের ভিড়ে ভড়কে না গিয়ে সাবলীলভাবে তার জীবনচলা মুগ্ধ করে অনেককে। প্রথমদিকে রিকশা চালিয়েই তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগালেও পরে আয় যথেষ্ট না হওয়ায় ছেলেরা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। প্রথম অন্যের রিকশা ভাড়া নিয়ে রিকশা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। ফলে রোজগারের অধিকাংশ টাকা চলে যেতো মালিকের কাছে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে একটি ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনেকের সহায়তায় নতুন একটি রিকশার মালিক হন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রায় ৪ মাস আগে সেই রিকশাটি ছিনতাই হয়ে যায়। আবারও অন্যের রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন তিনি। এজন্য মালিককে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন তিনি। তা দিয়েই সন্তানদের খরচ ও নিজের বাসা ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়া চালান ফাতেমা।
বরাবরই স্বাধীনভাবে চলার পক্ষে ফাতেমা। অন্যের বাড়িতে কাজ করা কিংবা গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে পেশাও তার পছন্দ নয়। প্রথমদিকে প্যাডেলচালিত রিকশা চালালেও গত ৪ বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। চট্টগ্রামের ওয়্যারলেস এলাকায় বাসা ভাড়া করে একাই থাকেন ফাতেমা। আর তিন ছেলে থাকে কুমিল্লার চান্দিনাতে মামার বাড়িতে। বড় ছেলে রুবেল (১৮) এসএসসি পরীক্ষার আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে একটি ওয়ার্কশপে কাজ শিখছে। আর ১৫ বছর বয়সী জমজ ভাই হাসান ও হোসেন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বেকার হিসেবেই রয়েছে। বেসিস এই সাহসী নারীকে স্বীকৃতি দিতে পেরে গর্বিত। ফাতেমা ও তার পরিবারের উন্নয়নে কাজ করছে বেসিস।