সূত্র ডিএমপি নিউজ; ফিরোজ মিয়া॥ বর্তমানে ভুয়া পুলিশ পরিচয় দান করে একটি চক্র অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে। কখনও কখনও তারা ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে চারজনের এরকম একটি চক্রকে ধরেছে ডিবি পুলিশের সদস্যরা, যারা দীর্ঘদিন থেকে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কৌশলে বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছিল টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী। ভুয়া পুলিশ সদস্যদের পরিচয়, কর্মকান্ড ও চেনার উপায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
ভুয়া পুলিশ সদস্য কারা: দেখা গেছে এসব ভুয়া পুলিশ পরিচয় দানকারী সদস্যরা বেশিরভাগই স্মার্ট প্রকৃতির। তাদের বেশভুষা আচার-আচরণ চলাফেরা এমনকি চুলের ছাট পর্যন্ত হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো। পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী থেকে বিভিন্ন কারণে চাকুরীচ্যূত বা বরখাস্তকৃত সদস্যরা এ ধরনের ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারী চক্রের সদস্য হয়। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কাজ করার ফলে বিভিন্ন রকম আইন-কানুন ও কৌশল জানার কারণে খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করাতে সক্ষম হয়। তাদেরকে দেখে খুব সহজেই বোঝার সাধ্য নেই যে, তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়।
তারা যেসব সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে: এই চক্রের সদস্যরা সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢোকে। তারা হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, খেলনা ওয়াকিটকি, দড়ি এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। অনেক সময় এরা পুলিশের পোশাক, বাঁশি এবং ডিবি লেখা জ্যাকেটও ব্যবহার করে থাকে। তাদের আচার-আচরণ ও অন্যান্য বিষয়গুলো একটু ভালভাবে খেয়াল করলেই ওদের ভুয়া পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
অপারেশন কৌশল: ভুয়া পুলিশ চক্রের সদস্যরা খেলনা, পিস্তল ও ওয়াকিটকি নিয়ে টার্গেটকৃত বাসায় যায় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। এরা বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। কেউ টাকা তুললে বা জমা দিতে আসলে তার পিছু নেয়। পরে সুবিধামতো জায়গায় কৌশলে মাইক্রোবাসে তুলে খেলনা পিস্তল ঠেকিয়ে ও নানা ধরণের ভীতি প্রদর্শন করে সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে নির্জন বা ফাঁকা জায়গায় ফেলে পালিয়ে যায়। আবার কখনও কখনও মুক্তিপণের মতো ঘটনা সাজিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। মাঝে মধ্যে এরা ডাকাতিতেও সংশ্লিষ্ট হয়।
কীভাবে এদের চিনবেন: একটু ভালমতো বুদ্ধি খাটিয়ে এই চক্রের সদস্যদের পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই এদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। ১। ব্যবহৃত ওয়াকিটকি চালু আছে কিনা লক্ষ্য করুন। ভুয়া পুলিশ সদস্যদের ওয়াকিটকি কখনও চালু থাকে না এবং কোন শব্দও পাওয়া যায় না। কারণ সেটি খেলনা ওয়াকিটকি।
২। সাদা পোশাকে পুলিশ কোন অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই গায়ে জ্যাকেট পরিধান করে ও গলায় পরিচয়পত্র ঝুলানো থাকে। কিন্তু ভুয়া পুলিশ সদস্যরা অধিকাংশ সময় কোন ধরণের জ্যাকেট বা পরিচয়পত্র সাথে রাখে না।
৩। ভুয়া পুলিশ চক্র সবসময় খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে, তারা কখনোই লং আর্মস: যেমন শর্টগান বা এসএমজি সাথে রাখেনা।
৪। গতিবিধি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন। ভুয়া পুলিশ সদস্যরা বাসায় ঢুকেই টাকা, অলঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের আচরণে উগ্রতা ও রুক্ষভাব পরিলক্ষিত হয়।
৫। এই চক্রের সদস্যদের পারস্পারিক কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন। এরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং চোর ডাকাতের মতো আচরণ করতে থাকে।
ভুয়া পুলিশ দেখলে করণীয় : আপনার নিজের নিরাপত্তা ও এসব প্রতারণাকারী চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে সবসময় নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। এ ধরনের ঝামেলায় পড়লে বা মুখোমুখি হলে কৌশলে নিকটস্থ থানা বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করুন। যদি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে এরা ভুয়া পুলিশ সদস্য এবং ব্যবহৃত অস্ত্রটিও খেলনা তাহলে সাথে সাথে সাহসিকতার সাথে তাদেরকে প্রতিহত করুন ও পুলিশকে খবর দিন এবং আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে অবহিত করুন।