আজকাল আমাদের সমাজে লিখকের এবং লিখার অভাব হয় না। বেশ মজার ও সৃজনলীশ বস্তুনিষ্ঠ লিখা যেমন আছে তেমনি রয়েছে অন্ধকারে আচ্ছন্ন কুরুচিপূর্ন নি¤œমানের অগোছালো মুল্যবোধ বিনষ্টকারী লিখা। ঐ লিখায় মাঝে মাঝে বাহাবাও পাওয়া যায় বটে। বর্তমানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে এমনকি সোসাল মিডিয়ার ব্যাপকতায় সকলেই যেন লেখনির চর্চার মাধ্যমে লিখক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করতে চাইছি। বেশ ভাল কিন্তু লিখক হওয়ার জন্য যে গুণ এবং জ্ঞান অর্জন করতে হয় তা কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। পাশাপাশি আর একটি জিনিস দরকার, তা হল সৃজনশীলতা ও নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা। এই তিনের সমন্বয় না ঘটাতে পারলে লিখা হবে একপেশে এবং স্বল্পসময়ের আবেদনময়ী। বাস্তবিক অর্থে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর জন্য আহরিত লিখার বড় অভাব আজ প্রতিফলিত হচ্ছে। যুযোপযোগী সৃজনশীল লিখা এখন তেমন দেখা যায় না। বরং এক দু লাইন মাঝে মাঝে পাওয়া যায় এমনকি কিছু লিখার ক্ষুরধার এমন যে, মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চায় উদ্বুদ্ধই হয় বটে।
লিখার ক্ষেত্রে ভাষার কতিপয় ব্যবহার এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে; দেখে মনে হয় আমরা আমাদের নৈতিকতা, ঈমান, আমল ও আকিদা থেকে ইস্তফা দিয়ে মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে শান্তি ও স্থীতিশীল সমাজ ব্যবস্থাকে উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে নোংরা, বর্বব, কুসংস্কারাচ্ছন্ন আইয়ামে জাহিলিয়াত যুগের পুনরাবৃত্তিই ঘটে না বরং এর বাস্তবায়নে উপর্যুপুরী চর্চার প্রতিযোগীতা চলে। এহেন লিখা আমাদের আগামীর তরুন প্রজন্মকে হিনমন্নতায় ভুগতে এমনকি কুসংস্কারচ্ছন্ন আন্ধকারের জগতের রাজা বনতেই উৎসাহিতই করে বটে। এই লিখা থেকে আমাদেরকে এখনই মুখ ফিরাতে হবে নতুবা সোনালী স্বপ্নের দুয়ারে অন্ধকারের রাজা-রাণীরা প্রবেশ করে অন্ধকারকে জয়ী করতে প্রতিনিয়ত বিপরীত মেরুর বিরাজমান অগ্রসর হবে। আমরা যারা লিখক; আমাদের লেখনির মাধ্যমে কত কিছ্ইু না ফুটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। যা দেখে লজ্ঝায় মিয়মান হওয়া ছাড়া আর কোন অবশিষ্ট থাকে বলে আমার আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না।
কেউ আবার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে বেড়াই আমি সৎ, ভাল এবং মানব কল্যাণের তরে কাজ করে যাচ্ছি। আমার পরিচিত অমুক ও তমুক। আমি এই করেছি, সেই করেছি। এমনকি নিজে নিজেকে স্ব-প্রচারণায় এতই উপরে উঠিয়ে ফেলি যে, আর নামার কোন সুযোগ থাকে না। গ্রামের অনেক পুরোনো কথা “এন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা; দুড়া কাউয়ার বাল ছিরেঙ্গা।” এই ভাবোদ্দিউপক বুলি আওড়াইতে আওড়াইতে নিজের বাবা-মা যা অর্জন করে দিয়েছিল তার শেষ সম্বলটুকু বিসর্জন দিয়েও ক্ষান্ত হয় নি। আমার প্রশ্ন? আমরা লিখি, দুর্ণিতীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য? কিন্তু আমি কি দুর্ণিতী মুক্ত? আমি নিজে কি আগে স্বোচ্ছার? দুর্নীতর করাল গ্রাস্ থেকে কি মুক্ত? বিবেকের তাড়নায় এই লিখার মাধ্যমে বলতে চাই… ভাবুন, তারপর নিজেকে মুক্ত করুন, দেখবেন আপনা আপনিই দুর্নিতী সমাজ থেকে পালাবে। মুল্যবোধ ও বিবেককে পরিস্কার করুন। খোদার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করুন। কেউবা আমরা টাকার বিনিময়ে চাকুরী দিয়ে দুর্নিতীর সঙ্গে যুক্ত হয় আবার কেউবা সুপারিশ করে টাকা কামাই করি। কেউবা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে দুর্নিতী করি। চাটুকারী ও দালালী করে দুর্নিতী করি। কেউবা বখশীশ উপাধী দিয়ে টাকা নিয়ে দুর্নিতী করি। আরো কতো কি ফন্দি যা লিখে শেষ করা যাবে না। আমরা জানি আমরা কি? আর এর থেকে উপায়ও জানি কিন্তু চর্চা করি না।
ভোজল ভেজাল বলে মুখে ফেনা তুলি, লিখে কলমের কালি শেষ করি, ছবি তুলে ক্যামেরার ম্যামোরি পূর্ণ করি। এইসবের পরেও কি ভেজাল ও নকল মুক্ত হয়েছে? হয়নি কারণ আমরা যারা এই কাজগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্ছার সেই তারাইতো কোন না কোন ভাবে এই কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুনতো আমি কি এই গুলির সঙ্গে যুক্ত? যদি যুক্ত হয় তাহলে কিভাবে আমি নিজেকে এইগুলি থেকে মুক্ত রাখব? আশা করি বের হয়ে আসবে উপায়। আর আমি যদি নিজেকে মুক্ত করতে পারি তাহলে সমাজও এর ছোবল থেকে একনিমিষেই হবে মুক্ত। আমি, তুমি, আপনি এবং আপনারা এই কয়ে মিলে যখন এক হব এবং প্রত্যেকে নিজেকে মুক্ত করব তাহলে আর প্রয়োজন নেই গলাবাজি করে মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে নিজেকে আড়াল করার। এত পদক্ষেপের পরেও কেন ভেজাল ও নকল মুক্ত হয়না আমাদের সমাজ ব্যবস্থা; তার কারন একটাই আমি নিজেই এর সঙ্গে জড়িত। তাই আমাদের আমিত্বকে আগে মুক্ত করতে হবে তার পরেই এর ছোবল থেকে রক্ষা হবে, দেশ, জাতি ও সমাজ।
মাদক এটি একটি কৌশলিক বুদ্ধিদিপ্ত উপায় যার মাধ্যমে অগ্রসরমান একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া যায়। আর এর স্বিকার এখন পৃথিবীর প্রতিটি দেশ। বিশেষ করে আমাদের দেশে গত বিশ বছর আগেও এর এমন প্রকোপ বা ভয়াবহতা দেখিনি। এখন যা দেখছি তার বিরুদ্ধে পুরো জাতি স্বোচ্ছার কিন্তু প্রতিকারের বেলায় হয়নি কিছুই। কেন? এর জবাব হল আমি, তুমি, আমরা এই তিনের সমন্বয়ে পুরোদস্তুর চলছে রমরমা ব্যবসা। কেউ পুজি খাটিয়ে, কেউ ফোন করে পুলিশী ঝামেলা এড়িয়ে, কেউ খেয়ে বা ব্যবহার করে, কেউ রাস্তা দেখিয়ে এই অন্ধকারের শত্রুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কিন্তু আমরা বা আমরাই এর প্রভাব ও কুফল, প্রতিকার নিয়ে ভাবছি, লিখছি, ছবি তুলে মানুষের সামনে নিয়ে এসেছি, গোপন সংবাদের মাধ্যমে হাতে নাতে ধরিয়ে দিচ্ছি। যা সচরাচর দেখা ও শুনা যাচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বন্ধ করা যাচ্ছে না এই ঘাতক মরনব্যাধী নামধারী মাদক নামক সর্বনাশা বস্তু বা দ্রব্যকে। আমরা শিক্ষিত এবং সমাজের উচু স্তরের মানুষ কিন্তু সুশিক্ষায় শিক্ষিতের অভাবে এই সর্বনাশী মরণঘাতি ব্যধির সঙ্গে নিজে বসবাস করছি এবং অন্যকে বসবাস করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছি। এখন উপযুক্ত সময় নিজেকে বদলানোর এবং আগামী প্রজন্মকে সুস্থ্যধারায় নিয়ে এসে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়েও কম মাতামাতি হচ্ছে না এখন, কিন্তু এর ব্যাপকতা দিনকে দিন বাড়ছে ছাড়া কমছে বৈকি? এখন সবাই মিলে এর প্রভাবমুক্ত করণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে হবে। কারো ঘারে দায় চাপিয়ে এর থেকে রেহাই পাওয়া এখন আর সমিচীন নয়। বরং দায় নিজের কাধে নিয়ে এর প্রতিরোধে নিজে আগে স্বোচ্ছার ও সচেতন হতে হবে। কেউ কেউ আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। কিন্তু আবার এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সামনে এখন একটিই পথ খোলা রয়েছে যা আমরা কখনো ছাড়তে রাজি নয় কিন্তু এর বিরুদ্ধে বলতে ও লিখতে সোচ্চার। আসুন আমি, আমরা ও তুমি এই মিলেই এবার অগ্রসর হই এবং সমাজ ও দেশ থেকে এর প্রভাব চিরতরে নির্মূল করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন কল্পে আমরা অগ্রসর হই এবং দেশ থেকে নোংরামী ও অপরাজনীতি দুর করি। কারো বিরুদ্ধে কিছু বলার বা লিখার আগে এর সঠিকতা যাচাই করি। বিবেক ও চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে সুদুর প্রসারী যোগোপযোগী লিখা এবং তথ্যনির্ভর বিচক্ষনতা ও বস্তুনিষ্ঠ সৃজনশীলতা বজায় রাখি।
এইতো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত এবং হাস্যকর লিখায় ব্যস্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ বিএনপি নামক সংগঠনের প্রধান ও তার দলের নেতাদের যে বক্তব্য বা মতামত পত্র-পত্রিকায় এমনকি সোসাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে তা খুবই বাতুলতা বা মিথ্যা এমনকি অগ্রহনযোগ্যও বটে। আমাদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই কিভাবে এই অসত্য ও অগ্রহনযোগ্য তথ্যের প্রচারনায় ব্যস্ত রয়েছে? লিখা বা ছাপার এমনকি পড়ার আগে যদি আমাদের বিবেক এই বস্তুনিষ্ঠতার সঠিকতা যাচাই না করি তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা লিখক সাজি বা সাংবাদিক সেজে সমাজের উপকারের বদলে ক্ষতি করি।
সত্য জানার অধিকার যেমন জনগনের তেমনি লিখার ও বলার অধিকারও রয়েছে লিখক শ্রেণীর। আর সেই অধিকারের প্রয়োজনেই আমরা একত্রিত হয়েছি সত্য ও তথ্যনির্ভর সৃজনশীল বাস্তবতাকে এগিয়ে নেয়ার কাজে। আমরা পারব এবং পেরেছি। তাই সবাই সজাগ থেকে চোখ কান খোলা রেখে বস্তুনিষ্ঠতা এবং সৃজনশীলতা বজায় রাখাও আমাদের কর্তব্য এবং বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ ঈমানী দায়িত্ব। আসুন হানা-হানি বিবেদ সৃষ্টি না করে বরং শান্তি ও স্থৃতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করি। মুখ্যের ভমিকায় আর না থেকে এখনই সময় সত্যের জয়গানে শরীক হয়ে আগামীর জন্য একটি দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়ার। পুরোনো মিথ্যার অতিতকে গাটাগাটি না করে বরং নতুনকে সামনে এনে সত্যের মানদন্ডে প্রতিষ্ঠীত করাই এখন সময়ের দাবি। আমাদের দেশের সন্মান বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশকে যে স্তুরে উন্নীত করেছে এই সরকার তাঁর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখাই আমাদের লিখক এবং সাংবাদিক সমাজের একক ও প্রধান মুখ্য ভুমিকা এখন যুগের চাহিদা ও বাস্তবতার দাবি। তাই আসুন ইতিবাচক এবং সত্যের জোয়ারের সঙ্গে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে অগ্রসর হই এবং ইতিহাসে নিজেদেরকে স্থান করে দিই। সাবধান ইতিহাসের আস্তাকুড়ে যেন আর কারো পড়তে না হয় সেইদিকে সজাগ হই ও নজর দেই। ধন্যবাদ আবারো আসব আপনাদের মাঝে কোন নতুন বিষয় নিয়ে সময়ের প্রয়োজনে।