উপাধির একটি ভাল দিক ছিল এবং নামের পাশে উপাধি দেখে আগে মানুষ আত্মিয়তার সম্পর্ক স্থাপন করত। আগে উপাধি দেখেই মানুষ বাছ-বিচারও করতে পারত। এই আগের উপাধিগুলোর বেশিরভাগই ব্রিটিশরা দিয়ে গিয়েছিল। যা আমি এই প্রশান্তির মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু আজকে যে উপাধিগুলোর বিষয়ে বলতে চাই তা হলো অপরাজনীতি এমনকি রাজনৈতিক পরিবারে ফাটল ও স্বার্থান্বেষী মানুষজনের বিভিন্ন রকম স্বার্থ হাছিলের উদ্দেশ্যেই এই উপাধি সংস্করণ মাত্র। যা সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত। যারা এর প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন আদতে তারা কোন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য বা প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও নন। মাঝে মাঝে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এই অরাজনৈতিক আলোচনার ঝড় বইতে দেখা যায়। যা কিনা প্রকারান্তরে দলীয় বা রাজনৈতিক পরিবারের ফাটলের বিস্তৃতিই ঘটে।
আমি কতিপয় উপাধি যা ইদানিংকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেটে এবং মিডিয়ার কল্যাণে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারলাম। এটি নিছকই অপকৌশল, কূট চালের বা শৃঙ্খলা ও ঐক্য বিনষ্টের উপকরণ মাত্র। এখানে উল্লেখ্য যে কারে সম্মান হানি বা ছোট করার জন্য এই লিখা নয় বরং জ্ঞানের সর্বোচ্চ বিচরণ করে সর্বোচ্চ সন্মানের জায়াগায় পৌঁছার একটি জায়গা তৈরী করা এমননি দলীয় বা সামাজিক, রাজনৈতিক ও আত্মিয়তার বন্ধন অটুট রাখার নিমিত্তেই এই লিখার আশ্রয় মাত্র। তারপরও বলি যদি কেউ আঘাত পান ক্ষমা করবেন এই ভেবে সমাজের সর্বনি¤œস্তরের একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে।
উদ্ভট এই উপাধীগুলো এইরকম, হাইব্রিড, ফার্মের মুরগী, কাউয়া জাতিয় কিছু যা আরো আছে এর গভীরে কিন্তু প্রকাশ না করাই ভাল। আমরা যারা এই উপাধিগুলো দিচ্ছি বা আওরাচ্ছি; একবারও কি ভেবে দেখেছি কাকে আমরা বলছি বা আমাদের সাথে ঐ ব্যক্তিদের কি সম্পর্ক এমনকি আমি নিজেও কি এই উপাধিগুলোর কোন একটিতে রয়েছি কি না? আমরা মানুষ আর মানুষ হিসেব ভুল হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই মানুষের কাজ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন ভুল করা এবং পাশাপাশি সেই ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এই সংস্কৃতিকে অস্বিকার করে কেউ সফল হতে পারেনি। এমন ইতিহাস বা ঐতিহ্য এখনোও পৃথিবীর কোন পুস্তকে বা বাস্তবে প্রকাশিত হয়নি। এমন একটি কথা আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাও বলেন প্রায়শ:ই। এটা জিবনের সঙ্গে উৎপোৎভাবে জড়িত।
উল্লেখিত উপাধীগুলোর ফলে দলে, সমাজে, পরিবারে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য এবং এর থেকে পরিলক্ষিত হয় বিশ্বাসের ঘাটতি। সেই ঘাটতি থেকে তৈরী হয় ফাটল আর এই ফাটলে বিনষ্ট হয় পরিবার, আত্মিয়তার দৃঢ় বন্ধন, দলের মহা সর্বনাশ। শত্রুপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ সবসময় উৎ পেতে বসে থাকে যে কখন এই ধরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা এগিয়ে যাবে। আসলে হয়ও তাই। যদি আমরা দল করি বা সামাজিক কাজ করি তাহলে আমাদেরকে আরো সচেতন হয়ে এগুতে হবে, মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় বা কাউকে ক্ষেয় এমনকি সম্মানহানির ঘটনা ঘটে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনিয়। বৃহত্তর কল্যাণের তরে ক্ষুদ্র স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় আমাদের কাম্য। দলীয় পরিবারের শক্তি বৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করার লক্ষে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। উপাধি দিয়ে বিভ্রান্তি এবং ঐক্য বিনষ্ট করা এই উত্তপ্ত সময়ে কাম্য নয়। নিজেদেরকে আরো শোধরানোর চেষ্টা করি এমনকি যারা দলীয় স্বার্থ রক্ষা করতে বা শৃঙ্খলা পালন করতে অপারগ তাদেরক চিহ্নিত করে উপযুক্ত কোচিং এন্ড মেন্টরিং এর ব্যবস্থা করে দলীয় শক্তি ও ঐক্য বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে হবে। এই সংস্কৃতিতে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করাই এখন এই চলমান ডিজিটাল রূপরেখার নতুন আবিস্কার।
কারা এই উপাধিগুলো দেয়- এক অতি উৎসাহি আবেগী মানুষজন, যারা সাত-পাঁচ না ভেবে একটা কিছু বলে ফেলে। দ্বিতীয়ত পরিকল্পীত কিছু মানুষ ঘাপটি মেরে বসে থাকে কোন একটি সুযোগের প্রতিক্ষায় যেন ঠিক সময়ে দলীয় আবরণে থেকে ঐ উপাধী বোমাটি ফাটিয়ে ক্ষতি সাধণ করতে পারে। তৃতীয় শত্রুপক্ষ বা বিরোধী পক্ষের লালিত ও পালিত কিছু চরিত্রহীন স্বগোষিত জ্ঞানী মানুষ। চতুর্থত হলো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলো কোন লোভে এবং এখনও সেই লোভোর আশায় ঘুর ঘুর করে যাচ্ছে; যখনই তার খায়েস পুরণে বিঘœ ঘটে তখনই এই উদ্ভট এবং দলের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয়। এই শ্রেণীর মানুষজনই কলুষিত এবং আমলনামায় জায়গা হয়েছে জাহান্নামি হিসেবে। কিন্তু তাদের বক্তব্য যা প্রকাশিত হয় আসলে তারা শিক্ষা-দিক্ষায় এমনকি রাজনীতিতে তেমন কেউ নন। যা একটু চিন্তা করে অতীত এবং বর্তমান ও লিখাগুলো পড়লেই ধরা পড়ে। কি করার সেই ধোকাবাজ ও ফন্দিফিকির কারীদের ফাঁদে মাঝে মাঝে আমাদের শ্রদ্ধেয় সম্মানিত রাজনীতিবিদগণও পা দেন। যা খুবই দু:খজনক। আমরা মনে করি এই অবস্থার অবসান খুবই সহজ এবং জ্ঞান এর ব্যবহার ও পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদেরকে দমন করা যায়। দলের প্রয়োজনে যারা নি-স্বার্থভাবে খেটে যাচ্ছে এবং সরকারের সঙ্গে যুক্ত থেকে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ঐ লোভী, কুৎসা, বিভেদ সৃষ্টিকারীদের দমন করা সম্ভব।
দলকে ভালবেসে যারা কাজ করে তারা কোনদিন দলের কাছে কিছু প্রত্যাশা করেনি এবং কোন পদের আশাও করেনি। সেই মানুষগুলোকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। অগনিতদের মধ্যে দুটি মানুষের নামোল্লেখ করে দেখাতে চাই তাদের জীবন দলের জন্য উৎসগীকৃত এবং দল তাদেরকে যথোপযুক্ত মুল্যায়ন তো করেনি বরং অবমূল্যায়নও করেছিল। কিন্তু তাতে কি; তারা দ্বিগুন শক্তি, সাহস এবং সম্পদ ও সময় দিয়ে দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে দলকে এগিয়ে এনেছেন আজকের অবস্থানে। তাই তাদেরকে; লক্ষ হাজার তাদেরকে আমার সালাম। জনাব সালেহ। ওনি পেশায় ডাক্তার এবং উনার বাবার সম্পদ সব বিক্রি করে দলের যোগান দিয়েছেন। ডাক্তার হিসেবে কারো কাছ থেকে কোনদিন ভিজিটতো নেন নি বরং ঔষধ ফ্রি, বাড়ি বাড়ি গিয়েও সেবা দিয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত চেযারম্যান হিসেবে সেবা করে নিজের সর্বস্ব খুইয়ে চাচাতো ভাইয়ের জমি বিক্রি করেও সেবা করেছেন। এই সেই মহৎ কাজ ও ব্যক্তিটিকে ভুলার নয়। সালাম সালেহ ভাই, তোমার মত নেতা চাই। তোমার আদর্শ এবং অনুপ্রেরণা আমাকেও প্ররোচিত করে দলের জন্য কাজ করতে এবং তাই আদর্শ হিসেবে আমৃত্যু আকঁড়ে ধরে থাকতে। দ্বিতীয়জন আলহাজ্জ্ব এবি সিদ্দিক। উনি ঠিক সালেহ ডাক্তার সাহেবের মত। সেই বঙ্গবন্ধুর সহচর থেকে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হিসেবে দলের কান্ডারী ছিলেন এমনকি মাঝে মাঝে চেয়েছিলেন দলীয় নমিনেশনে নির্বাচন করতে কিন্তু বিধিবাম জোটেনি কপালে। আর যখন দলীয় সম্মান পাবার সকল আশ্বাস এসেছিল মাননীয় আইন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে ঠিক তখনই সৃষ্টিকর্তা তাকে তুলে নিলেন পৃথিবীর ধরাধাম থেকে। এই এবি সিদ্দিক সাহেবকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ছিদ্দিক ১০০ বেগ সিমেন্ট পাঠিয়ে দিস। কেমন সম্পর্ক, কি মধুরই না। এই কথাটি বলার সময় বঙ্গবন্ধু লাল ফিয়াটে রঙ্গের গাড়ি চলে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে স্বাক্ষী ছিলেন এম আর আক্তার মুকুল ও নিরীক্ষণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ সাহেব।
সালেহ এবং এবি সিদ্দিকদের মতো লাখো মানুষ আমার গভেষণার দ্বারে রয়েছে। এই দুজনকে দিয়ে শুধু ভালবাসা এবং গভিরতা এমনকি দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনপূর্বক নির্লোভ এদের মত নেতা আগামীতে আমাদের নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন। আর প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে বলছি আসুন যে যেই দলই করিনা কেন; আদর্শে, সততা ও বিশ্বস্ততায় পুরিপূর্ণ হয়ে কাজ করুন। সন্দেহবাতিকতা পরিহার করুন। এই রোগ সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। ভুলবোঝার অবসানই হলো শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার উপায়। ব্যক্তিস্বাস্থ্য পরিহার করুন যাতে দলীয় লক্ষ্যে ঐক্যের ভিত্তিতে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা যায়। শুধু দলীয় প্রধান এবং কতিপয় পছন্দের গুনগান না করে দলীয় সকলকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বস্ততার সহিত আলিঙ্গনে এগিয়ে যেতে পারলেই লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। কোন বাধাই আর বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। লক্ষ্যে পৌঁছার স্বার্থে আগামীর প্রয়োজনে এখনই এই পন্থায় এগিয়ে যেতে হবে। আর নয় হিংসা-বিভেদ, ব্যক্তি স্বাথ্য, নতুন উপাধি দিয়ে ভু-পাতিত করা বন্ধ করুন। উপরে থুথু ফেললে নিজের উপরই পড়ে। সুতরাং যতই উপাধি দিয়ে আনন্দ পান ভেবে দেখছেন কি এই উপাধিগুলো আপনার উপরই পড়েছে কি না। প্রকারান্তরে আপনি নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছেন। যে ঐক্যের শক্তি ও ক্ষমতা আপনাকে সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে উঠতে সাহায্য করেছিল সেই শক্তিকেই আপনি কলুষিত করতে গিয়ে নিজেই কলুষিত ও কলঙ্কিত হয়েছেন এবং নিজের যোগ্যতাই ধরিয়েছে চীড়। সুতরাং সাবধান, আচরণে, কথা-বার্তায় এমনকি দৈনন্দিন কৃতকর্মে। আশা-আকাঙ্খা ও নিরাশার দোলনচলে আর নয় এবং শুধু বাস্তবতার নিরীখেই এগোব এবং এই উন্নয়ন গতিকে আরো সুদৃঢ় করবো। এই লক্ষ্যেই উঁচু থেকে নিচু পর্যায় পর্যন্ত একযোগে কাজ করে যাব। এই প্রত্যয়েই শান্তি ও স্থিতিশীল আবস্থার বিচরণ প্রত্যক্ষ করব আমরা, আপনারা, সর্বোপরি আগামীর উদীয়মান আকাঙ্খিত সুশৃঙ্খল প্রজন্ম।