প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

মাহমুদ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়, উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে করে দেশের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন। আজ সকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫’র ১৫ আগষ্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য জাতির জনককে হত্যা করা হয়। জাতির জনককে হত্যার করার পর আমরা দু’বোন যখন দেশে আসি তখন তৎকালীন শাসক আমাদেরকে ৩২নং বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৩২নং বাড়ি থেকে সকল আন্দোলনের নির্দেশনা দিতেন। এই বাড়ি থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বাড়িতেই তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে এই বাড়িতে আমরা দু’বোন কখনো বাস করিনি। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে থেকেছি। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল এই বাড়িতে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করবো। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। বিচার কার্যক্রম শুরুও করেছিলেন। কিন্তু জাতির জনকের হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। যারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিল, পাক বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়েছিল, মা-বোনদের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, রাজাকার, আল বদর, আল সামশ বাহিনী তাদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছেল- সেইসব স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। ১৯৭জন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল শাহ আজিজ, তাকে উপদেষ্টা বানিয়েছিল জিয়াউর রহমান। জাতির জনকের হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। আলবদর, আল শামস বাহিনীর প্রধানদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে সে বিচার কার্যকর করেছি। এজন্য আমি জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, বাংলার জনগণই ক্ষমতার মূল শক্তি। তাদের সহযোগিতা, ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে আমরা বিচার কার্য সম্পন্ন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানী শাসনামলে বাংলাদেশের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ট ছিল কিন্তু কোন অধিকার ছিলনা। জাতির পিতার সেসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, অধিকার আদায়ে অগ্রগনি ভূমিকা পালন করেছে। ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে, সে সময় বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেয়া ছিল। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন এগিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃত করা হল। কেউ ঘোষক হয়ে গেল। সে সময় মানুষ সত্যিকার ইতিহাস জানতে পারে নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির হাল ধরেন। দেশ পরিচালনার জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম লেখালেখি শুরু করা হয়। তাদের সেই লেখালেখি আর সমালোচনা ১৫ই আগষ্টের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় দেশের প্রায় সকল স্থাপনা ধ্বংস হয়েছিল। শূন্যহাতে দেশ পরিচালনার যাত্রা শুরু করেছিলেন জাতির জনক। এরপরও তিনি প্রতিটি কাজ করে দিয়ে গেছেন। তাঁর দুরদর্শী নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিনমাসের মধ্যে মিত্রবাহিনী দেশ ত্যাগ করেছিল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, আমরা ভারতে সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। আবার অধিকার আদায়ে সোচ্চার থেকেছি। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছি। এছাড়া, আমরা শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশের ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক মিথ্যাচার করা হয়েছে। কিন্তু সত্যকে চাপা রাখা যায়নি। কারণ, মিথ্যা অপেক্ষা সত্য অনেক বেশি শক্তিশালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.